রাজিব ইব্রাহীম
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হিমালয় অধ্যুষিত রাষ্ট্র নেপাল। দেশটির উত্তরে চীন, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১০ টি পর্বতের ৮ টির অবস্থান নেপাল ও চীন সীমান্তে অবস্থিত, যার মধ্যে মাউন্ট এভারেস্ট তো পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এছাড়াও প্রাচীন হিন্দু মন্দির, প্রচুর জঙ্গল, নানান ধর্মের বৈচিত্র্যপূর্ণ বসবাস, মধ্যযুগীয় শহরের চমৎকার সংরক্ষণ প্রভৃতির অবস্থান নেপালে। বলা যায় গগনচুম্বি পর্বত ও রূপ বৈচিত্র্যে অনন্য একটি দেশ নেপাল। এ কারণে বিশে^র বিভিন্ন দেশের মত বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রচুর বাংলাদেশি নেপাল ঘুরতে যান। সময় পেলে আপনিও যেতে পারেন, তবে যাওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক নেপাল ভ্রমণে করণীয় ও বর্জণীয় বিষয়।
নেপাল ভ্রমণে যে সব জায়গায় যেতে পারেন
আপনি যখন নেপাল ভ্রমণে যাবেন নিশ্চয়ই মাউন্ট এভারেস্ট দেখতে যাবেন। উত্কীর্ণ কাঠ ও গোলাপী ইট দিয়ে তৈরি বখÍপুর শহর, তিব্বতের বৌদ্ধ সম্প্রদায় দেখার জন্যও সময় রাখা উচিত। জনকপুরের একটি জানকি মন্দিরের চমৎকার দৃশ্য যেখানে ভক্তরা সকাল ও সন্ধ্যায় উপাসনায় মিলিত হন, চিতওয়ান ও বারদিয়া ন্যাশনাল পার্ক যেখানে গন্ডার, হরিণ, চিতাবাঘ এবং বাঘও দেখা যায়। কাঠমান্ডুর দরবার স্কয়ার, পশুপতিনাথ মন্দির, মাংকি মন্দির, রয়েল প্যালেস ছাড়াও লাম্বি শহর দেখার জন্যও আপনি সময় রাখতে পারেন, যে শহরটিতে ২৫০০ বছর পূর্বে বুদ্ধের জন্ম হয়, এমনকি এ অঞ্চলে ৩০০০ বছর পূর্বের প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনও খুঁজে পাওয়া যায় যা নেপালের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা বলে বিবেচিত।
নেপালের সংস্কৃতি
নেপাল ভ্রমণের আগে সেদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। নেপালের সংস্কৃতি সাধারণত কারো সংঙ্গে দেখা হলে প্রার্থনার ভঙ্গিতে হাত জোর করে নমস্কার বলতে হয়। কিছু জিজ্ঞাসা করার ক্ষেত্রে নারী হলে দিদি এবং পুরুষ হলে দাই সম্বোধন করতে হয়। সেখানে পায়ে ধরে সম্মান দেখানোর রীতি নেই।
পোশাক পরিচ্ছেদ
জনসমাগম কিংবা উপাসনালয়ে ছোট পোশাক না পরাই ভালো। বিশেষত এটি নারীদের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। এতে অনেকেরই ভ্রু কুচকানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বীচ কিংবা পর্যটন ও শহর এলাকায় ঘুরতে গেলে ছোট পোশাক কিংবা পাশ্চাত্য পোশাক পরতে বাধা নেই।
খাওয়া-দাওয়া
কোন নেপালি পরিবারের নিমন্ত্রণে গেলে ঘরে প্রবেশের পূর্বে জুতা খুলে প্রবেশ করা উচিত। খাওয়ার আগে হাত ও মুখ ধুয়ে নিবেন। হোস্ট খাবার পরিবেশন করার আগ পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করা ঠিক নয়। নেপালের খাবারে সাধারণত বেশি ঝাল দেওয়া হয়। কোন হোটেলে খাবারের আগে কি ধরণের খাবার খেতে চান আগে থেকেই জানিয়ে দিন। খাওয়ার জন্য কাঠমান্ডুর থামেল এলাকা পর্যটকদের জন্য অনুকূল, সেখানে রয়েছে প্রচুর রেস্টুরেন্ট। খাবারও পাওয়া যায় বেশ সস্তায়। স্থানীয় ও পশ্চিমা খাবারের পাশাপাশি বাংলাদেশিদের জন্য ভাত, ডাল, মাছ, সবজির একটি প্যাকেজ রয়েছে। নেপালে খাবারের হোটেলে সাধারণত গরুর মাংস পাওয়া যায় না। কাঠমান্ডুতে বেশকিছু তিব্বতি খাবারের হোটেল রয়েছে।
ভাষা
নেপালিরা নেপালের ভাষার পাশাপাশি হিন্দি ভাষাতেই বেশি পরিচিত। রেস্টুরেন্ট ও হোটেল মোটেলে হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজিও চলে। কোনোরকম হিন্দি কিংবা ইংরেজি বলতে পারলে ভাষায় কোন সমস্যা হবেনা।
পানি পানে সতর্কতা
নেপালে পানি পানের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। সেখানে ফুটানো পানির খুব অভাব। মিনারেল ওয়াটার বোতল সংগ্রহে রাখুন অথবা সময় পেলে নিজেই পানি ফুটিয়ে খেতে পারেন।
পোখারা ভ্রমণ
নেপাল গেলেন কিন্তু পোখারা গেলেন না আপনার ভ্রমণ অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। পোখারা হচ্ছে শিল্প সাহিত্য চর্চার অন্যতম জায়গা। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাহিত্যের অগণিত ভক্ত সেখানে যান। রয়েছে বেশ কিছু ক্যাফে, যেখানে সন্ধ্যার পর মধ্যরাত পর্যন্ত চলে লাইভ অনুষ্ঠান। এছাড়াও পোখারার পর্যটন আকর্ষণের জন্য রয়েছে ফেওয়াতাল, বারাহি টেম্পল, শান্তিসুপ্তা টেম্পল, ওল্ড বাজার, পোখারা রিজিওনাল মিউজিয়াম ইত্যাদি।
পর্বত আরোহন
হিমালয়ের দেশ নেপালে যাবেন কিন্তু পাহাড়ে উঠবেন না তা কি হয়! যদি আপনি পেশাদার পর্বতারোহী না হন তাহলে ছোট ছোট পাহাড়ে যাওয়াই ভালো। সেখানে আপনার ঝুঁকি কম থাকে। পবর্তারোহণের সময় একজন গাইড রাখলে ঝুঁকির সম্ভাবনা কম থাকে। এছাড়াও নেপালে পবর্তারোহণের জন্য কিছু স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে তাদের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন। প্রস্তুতি ছাড়া কখনোই পর্বতে আরোহণ করা উচিত নয়। মাউন্ট এভারেস্ট কাছ থেকে দেখতে চাইলে ছোট বিমান ভাড়া করতে হবে। কাঠমান্ডুতে বিমান ভাড়া করার অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া কাঠমান্ডু থেকে বাসযোগে নাগরকোটা গিয়ে মাউন্ট এভারেস্ট এর চূড়াও দেখতে পারেন।