ফারুক আহাম্মেদ মোল্লা: মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নেদারল্যান্ডসের দি হেগ শহরের জাউদার পার্কে নেদারল্যান্ডসে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়।
২১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল এবং দি হেগ মিউনিসিপ্যালিটির ডেপুটি মেয়র মিজ সাসকিয়া ব্রুনস শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। এ সময় নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত ভারত, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, রাশিয়ান ফেডারেশন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, ইয়েমেন, ভিয়েতনাম সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং দি হেগের কূটনৈতিক কমিউনিটি, ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ ও নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
দি হেগস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে ‘শান্তি এবং ন্যায়বিচারের’ শহর হিসেবে খ্যাত দি হেগ শহরের মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষ শহরটির ঐতিহাসিক জাউদার পার্কে শহীদ মিনার নির্মাণের নিমিত্তে একখণ্ড জমি বরাদ্দ প্রদান করে। শান্তি এবং বহুভাষাতত্ত্বের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার প্রয়াসে যৌথ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই শহীদ মিনার নির্মাণের খরচ বাংলাদেশ সরকার এবং নকশা প্রণয়নের খরচ ডাচ সরকার বহন করে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে শহিদদের আত্মার শান্তি কামনা করে এবং ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার চকবাজারে অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।
স্বাগত বক্তব্যে হাইকমশিনার শেখ মুহম্মদ বেলাল ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আর শহীদ মিনার নির্মাণে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য দি হেগের মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। হাইকমিশনার বেলাল ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে স্মরণ করেন। দি হেগের ডেপুটি মেয়র মিজ সাসকিয়া ব্রুনস তার বক্তব্যে শহীদ মিনারের সফলভাবে নির্মাণের নিমিত্তে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং দি হেগ মিউনিসিপ্যালিটিকে অভিনন্দন জানান।
তিনি উল্লেখ করেন, নেদারল্যান্ডে মোট ২০ (বিশ) ধরনের ভাষা ব্যবহৃত হয়। প্রত্যেক ভাষার ব্যবহার-ই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন জাতির মানুষের পারস্পরিক সহাবস্থানের মাধ্যমে যেমন সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ গঠিত হয়, তেমনি সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার জন্য প্রত্যেকটি ভাষারই প্রচলন থাকা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘জাউদার পার্কে নির্মিত এই শহীদ মিনার কেবল দি হেগকেই গৌরবান্বিত করবে না, একইসাথে মাতৃভাষাকে রক্ষা এবং এগিয়ে নিতে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।’শহীদ মিনার নির্মাণে জমি বরাদ্দে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন দি হেগের সাবেক ডেপুটি মেয়র রবিন বলদেভসিং। তিনি বহুভাষাতত্ত্ব এবং বহু-সংস্কৃতির সহাবস্থানের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘দি হেগে এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা মন্যুমেন্ট নির্মাণে এই ধারণা তাদের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’
নতুন নির্মিত এই শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, দি হেগের ডেপুটি মেয়র, অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতগণ, কূটনৈতিক কমিউনিটির সদস্যগণ, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রবাসী বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যগণ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক দি হেগে এই শহীদ মিনার নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন।