জাহাঙ্গীর আলম শিকদার, লন্ডন, যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি: নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস দি হেগস্থ আরো সাতটি দেশের দূতাবাসকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিস্তারে বড় আকারে অমর একুশে’র অনুষ্ঠান আয়োজন করে। শান্তি ও বহুভাষাতত্ত্বের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই অমর একুশে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস- ২০১৯ যথাযথভাবে পালন করা হয়েছে।
দি হেগে নিযুক্ত রাশিয়ান ফেডারেশন, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, রোমানিয়া-এর মান্যবর রাষ্ট্রদূতগণ, বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনৈতিক প্রতিনিধিগণ, দি হেগের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র, প্রবাসী বাংলাদেশী, শিক্ষার্থী, ডাচ নাগরিক, গণমাধ্যমকর্মী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ তিনশতাধিক অতিথি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই, ১৯৫২’র ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এবং ঢাকার সাম্প্রতিক অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল তার স্বাগত বক্তব্যে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে দি হেগের জাউদার পার্কে শহীদ মিনার উদ্বোধনের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি প্রথমবারের মত নেদারল্যান্ডে শহীদ মিনার নির্মানে সার্বিক সহয়াতার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং দি হেগ মিউনিসিপাল কর্তৃপক্ষের প্রতিগভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, দি হেগে স্থায়ীভাবে নির্মিত এই শহীদ মিনার আমাদের মা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসার নিদর্শন বহন করবে। তাই নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান আজ দৃশ্যমান। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম কর্তৃক প্রকাশিত “গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৮’ অনুযায়ী নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভাক প্রজাতন্ত্র, চেক প্রজাতন্ত্র, সিঙ্গাপুরের মত দেশকে পেছনে ফেলে ৪৮ তম স্থান দখল করেছে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতদের জন্য নির্ধারিত অংশে রাশিয়ান ফেডারেশন, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত, অন্যান্য কূটনীতিকগণ এবং দি হেগের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র অংশগ্রহণ করেন। সকল রাষ্ট্রদূতদের অংশগ্রহণে “শান্তির ভাষা” শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই সেগমেন্টটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিনী ড. দিলরুবা নাসরিন পরিচালনা করেন। রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিকগণ তাদের নিজ নিজ ভাষায় শান্তির বার্তা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্বলিত পরিবেশনা উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশের শিশু-কিশোরগণ ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাসকে কেন্দ্র করে ‘আমার পরিচয়’ শীর্ষক একটি ছোট নাটিকা উপস্থাপন করে। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কিভাবে আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছি সেসব কিছুই নাটকে তুলে ধরা হয়। উপস্থিত অতিথিরা সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি ও মেলবন্ধনকে জোরদার করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার প্রয়াসে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত এধরণের অনুষ্ঠানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল ও দি হেগের ডেপুটি মেয়র মিজ সাসকিয়া ব্রুয়েন্স গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে দি হেগে প্রথমবারের মত নির্মিত শহীদ মিনার উদ্বোধন করেছেন।