হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে ২৬ মার্চ ২০২১ তারিখে পরম শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হয়। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষিতে সামাজিক দূরত্ব কার্যক্রম অব্যাহত থাকার কারণে বিশিষ্ট মার্কিন রাজনীতিবিদ, নিউইয়র্কে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/কনসাল জেনারেল ও বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির অংশগ্রহণে কনস্যুলেট ভার্চুয়াল সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
এ উপলক্ষ্যে কনস্যুলেটে আয়োজিত কর্মসূচির শুরুতে কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা কনস্যুলেটের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সাথে জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসাসহ কনস্যুলেটের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। এ উপলক্ষ্যে ঢাকা হতে প্রেরিত মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী’র বাণী পাঠ করা হয় এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও বার্তা প্রদর্শন করা হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে কেক কাটা হয় এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও জাতির পিতা, তাঁর পরিবারের অন্যান্য শহীদ সদস্য, জাতীয় চার নেতা ও সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা তাঁর বক্তব্যে নিউইয়র্ক, নিউজার্সী, নিউ হ্যাম্পশায়ার, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, মেইন, রোড আইল্যান্ড এবং ভারমন্ট-এ বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটির সকলকে মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর শুভেচ্ছা ও উò অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকীর এই ঐতিহাসিক ও আনন্দঘন মুহূর্তে একত্রিত হতে পারা আমাদের সকলের জন্য সৌভাগ্যের এবং গর্বের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্বের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির একটি উল্লেখ করে কনসাল জেনারেল বলেন অর্থনীতিসহ উন্নয়নের সকল সূচকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ণ, দারিদ্র বিমোচন, গড়আয়ু বৃদ্ধি ও চলমান মেগাপ্রকল্পসহ অবকাঠামোর উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে।
তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে যা আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। নিউইয়র্ক টাইমস-এ সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র দূরীকরণে বাংলাদেশকে অনুসরণ করার পরামর্শ এবং ওয়ালস্ট্রীট জার্নালে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার “ইকোনোমিক বুল” হিসেবে অভিহিত করার বিষয় সমূহ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের আনন্দের মাত্রাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে কনসাল জেনারেল মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল বলেই আজ আমরা বহির্বিশ্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। “বঙ্গবন্ধু” ও ”বাংলাদেশ” আজ সমার্থক উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন বিশ্বের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর অবিচল সংগ্রাম ও মানবদরদী নেতৃত্ব তাঁকে ”বিশ্ববন্ধু”-তে পরিণত করেছে।
ভার্চুয়ালি আয়োজিত অনুষ্ঠানে মার্কিন কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু এবং কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট ডনাভান রিচার্ডস ভিডিও বার্তার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা পূর্বক নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশী-আমেরিকানসহ সকল বাংলাদেশীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। একই সাথে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে তাঁরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
মার্কিন কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ – যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাবেন বলে উল্লেখ করেন এবং নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশী-আমেরিকানদের স্বার্থ সুরক্ষায় তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন যে তিনি বাংলাদেশের একজন প্রকৃত বন্ধু।
নিউইয়র্ক রাজ্যের সিনেটর জন ল্যু ভিডিও বার্তায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। দু’বছর আগে জাতির পিতার বাসভবন সফরের স্মৃতিচারণ করে সিনেটর জন ল্যু ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহীদদের নৃশংস হত্যাকান্ডকে তিনি ইতিহাসের একটি বর্বর অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে সকল বাংলাদেশীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশী-আমেরিকানদের উচ্ছসিত প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশী-আমেরিকান অধ্যুষিত কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট ডনাভান রিচার্ডস বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুদৃঢ় রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণেই নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডের উল্লেখ করে তিনি বলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু অতি অল্পসময়ের মধ্যেই একটি দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি মহান স্বাধীনতার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানান। কুইন্সে বসবাসরত বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটির সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবদানকে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন।
পৃথক ভিডিও বার্তায় এ্যাসেম্বলীওমেন ক্যাটালিনা ক্র–জ এবং নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিশনার পেনি আবেওয়ার্দানা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে শুভেচ্ছা জানান।
বাংলাদেশ ছাড়াও নিউইয়র্কস্থ ভারত, সুইডেন, এস্তোনিয়া, কলাম্বিয়া ও থাইল্যান্ডের কনসাল জেনারেলগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক “Friends of Liberation War Honor” প্রাপ্ত প্রখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লেয়ার লেভিনও ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া, নিউইয়র্ক এবং পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্যে বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন।
এছাড়াও, ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটির অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।