হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: নিউইয়র্কে বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ উপলক্ষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, বাংলাদেশ কনস্যুলেট, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালির চেতনা মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করে।
একুশের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের সঙ্গে মিল রেখে নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় বুধবার সময় দুপুর ১টা ১ মিনিটে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। মহান একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালির চেতনা মঞ্চের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপিত হয়।
এসময় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এএফএম রুহুল হক এমপি, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ড. মো. আফসারুল আমিন এমপি, আবু জাহির এমপি, বেনজির আহমেদ এমপি, আহসান আদেলুর রহমান এমপি, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন নেসাসহ কূটনীতিক, নিউইয়র্কের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যাঙ্গনের প্রতিনিধিরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরমধ্য দিয়ে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালির চেতনা মঞ্চের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর ২৮ বছর পূর্তি হল। গত ২৭ বছরের মত এবছরও উপস্থিত সর্বকনিষ্ঠ শিশু শ্রেয়া রায়ের পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হয়। এরপর একে একে অতিথিরা ছাড়াও শহীদদের পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টি, বাঙালীর চেতনা মঞ্চ, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন, একুশে চেতনা পরিষদ যুক্তরাষ্ট্র শাখা, বৃহত্তর সিলেট গণদাবী পরিষদ, বাংলাদেশ স্পোর্টস ফাউন্ডেশন, আবহানী ক্রীড়া চক্র, ঝালকাঠি জেলা সোসাইটি, রাজনগর উন্নয়ন সমিতি, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান ঐক্য পরিষদ, শেখ রাসেল স্মৃতি পরিষদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বঙ্গবন্ধু প্রচারকেন্দ্র সমাজকল্যাণ পরিষদ, সুচিত্রা সেন মেমোরিয়াল, ইউএসএ নিউইয়র্ক খৃষ্টান এসোসিয়েশন, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ, ছাত্রলীগ, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগ, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ অন্যান্য সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। এছাড়াও নিউইয়র্কের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কবি-লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান।
সংস্কৃতিকর্মী সেমন্তী ওয়াহেদ ও শুভ রায়ের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সম্মিলিত কণ্ঠে ভাষার গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এরপর এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে সূচনা ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন বাঙালির চেতনা মঞ্চের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাদশা।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে কর্মরত নিউইয়র্ক বইমেলা-২০১৯ এর আহ্বায়ক ড. নজরুল ইসলাম, লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, লেখক রানু ফেরদৌস, ফাহিম রেজা নূর, সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ, দ্বিজেন ভট্টাচার্য্য, অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত, সুশীল সাহা, সবাঙালির চেতনা মঞ্চের পরিচালক সাখাওয়াত আলী, জাতীয় পার্টি যুক্তরাষ্ট্র শাখার সম্পাদক আবু তালিব চৌধুরী চান্দু প্রমুখ।
মুক্তধারার কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহা একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণের জন্য ঢাকায় অবস্থান করায় এবারই প্রথমই এ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, মায়ের ভাষার দাবিতে বাঙালির আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর অমর একুশে। অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বের সব প্রান্তে উদযাপিত হচ্ছে। তারা বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের’ স্বীকৃতি আদায়ে প্রবাসীদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। শহীদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতিকে চিরজাগ্রত রাখার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করে যেতে হবে সকলকে।