অনুসন্ধানী প্রতিবেদন:
আখি সীমা কাউসার, রোম, ইতালি প্রতিনিধি:
করোনার প্রাদুর্ভাব থামতে না থামতে ইতালিতে শুরু হয়েছে আন্দোলন। অবৈধ অভিবাসীরা বৈধতার কাগজপত্রের জন্য আন্দোলনে নেমেছে। (ফেরমেসস দি সৌজর্ণ permesso di soggiorno) জন্য তারা চায় নিঃশর্তে সব অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দিক ইতালি সরকার। আন্দোলনরত অভিবাসীদের একটাই দাবি নিঃশর্তে তাদেরকে বৈধতা দিতে হবে। অনেক বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে অনেক দেশের অবৈধ অভিবাসীদের সাথে বাংলাদশি অবৈধ অভিবাসীরাও আট, দশ বছর ধরে ইতালিতে অবৈধভাবে বসবাস করছে। বৈধতার অভাবে তারা কোন রেগুলার কাজকর্ম জুটাতে পারছেনা নিজেদের জন্য।
তারা তাদের ছেলে মেয়ের মুখ দেখতে পারছে না, কারও কারও বাবা মা মারা গেছে। তাই তাদের এই দাবী ন্যায্য দাবী । যে পর্যন্ত ইতালির সরকার তাদেরকে বৈধতার ঘোষণা না দিবে সে পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে বলে জানা গেছে । প্রয়োজনে তারা গণ অনশন করে রাস্তায় মৃত্যুবরণ করবে, তবুও তাদের দাবি আদায় করে ছাড়বে। এখানে প্রশ্ন হলো ২০১২ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ইতালিতে আর কোন অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতার ঘোষণা ইতালির সরকার দেয়নি । (এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের বেলায় প্রযোজ্য, কারণ বাংলাদেশিদের জন্য ইতালি সরকারের খাতায় কোন রকম কোটা নেই কিন্তু অন্যান্য দেশের জন্য কোটা আছে) এটার অনেকগুলো কারণ আছে বিশেষ করে বাংলাদেশিদের বেলায়।
ইতালিতে সিজনাল ভিসায় অন্যান্য দেশের একটি কোটা প্রতিবছরই ঘোষণায় আসলেও বাংলাদেশিদের জন্য কোন ঘোষণা আসে না। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে বাংলাদেশিদের কোটায় রেডমার্ক দেয়া আছে। কারণ ইতালিতে বাংলাদেশিদের জন্য সরকারি খাতায় অনেক অসত্য তথ্য দেয়ার অভিযোগের প্রমাণ জমা আছে বাংলাদেশের নিয়ম-কানুন সম্বন্ধে (বিশেষ করে এখানে তদন্তের পর, অনেকবারই বাংলাদেশ থেকে আনা অনেক কাগজপত্র ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম বার্থ সার্টিফিকেট, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট এবং পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য যে কাগজপত্র লাগে সেগুলো অনেকবারই ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে এবং বিবাহিতদের কাবিননামাও উল্লেখযোগ্য)
বাংলাদেশি দালালদের সম্বন্ধে বিরূপ ধারণা আছে ইতালি সরকারের। তার মধ্যে নানান রকম অপকর্ম ইতালিতে অনেক বাংলাদেশি করতেছে যা ইটালিয়ান সরকারের মন্ত্রণালয়ের নথিতে লিপিবদ্ধ আছে। আবার এসব ইতালিয়ান আইনের চোখে ধরা পড়েছে। বাংলাদেশিদের দ্বারা সংঘটিত নানান রকম সন্ত্রাসী কার্যকলাপ (এই করোনা কালেও মিলানোর একটি শহরে বাংলাদেশি এক যুবকের দ্বারা প্রতিরাতে গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে) ইতালিয়ান অনেকের মধ্যেই আলোচনায় আছে বাংলাদেশিদের দ্বারা সংঘটিত এসব ঘটনাগুলোর বিষয়বস্তু। অনেক রকমের ক্রাইম এর সাথে , দিনদিন জড়িয়ে পড়ছে ইতালিতে আগত বাংলাদেশিরা। বিশেষ করে উঠতি বয়সের ছেলেরা যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করতে অনেক বড় রকম ভূমিকা রাখবে বলে ইতালি সরকার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ইতালিয়ান পুলিশের নজরে আছে কয়েকজন বাংলাদেশি মানব পাচারের দালাল এবং নজরে আছে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কারা কারা জড়িয়ে পড়ছে বা ইতালিতে অপকর্ম কারা কারা করছে। আবার অতি সম্প্রতি ইতালিতে একজন আমেরিকান নারীকে ধর্ষণের দায়ে চার বাংলাদেশি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
অভিজ্ঞ মহল থেকে জানা গেছে প্রতিবছর সিজনাল ভিসায় অন্যান্য দেশের নাম থাকলেও বাংলাদেশের নাম ঘোষণায় আসে না । ২০২০ সালের এই বৈধতার ঘোষণায় শুধুমাত্র দুই ক্যাটাগরিতে অবৈধদের থেকে বৈধতা পাবে যাদের সমস্ত কাগজপত্র সঠিক থাকবে। সরকারের শর্ত সাপেক্ষে যদি কেউ বৈধতার কাগজ জমা দেয় তবেই কেবল তার বৈধতার আবেদনপত্রটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে ।
অর্থাৎ সবাইকে নয়, শুধুমাত্র দুই ক্যাটাগরিতে এই বৈধতার কাগজ দিবেন প্রথমত যারা কৃষিকাজে অবৈধভাবে ইতালিতে কাজ করছেন, কিন্তু মালিক তাদের কনট্রাকট এর কাগজ দেয়নি শুধুমাত্র তাদেরকেই বৈধতার কাগজ দিবে। তাও আবার কঠিন শর্ত সাপেক্ষে, শর্তগুলো হলো প্রথমতঃ মালিকের ৩০ হাজার ইউরো বাৎসরিক ইনকাম থাকতে হবে, তবেই সে একজন কর্মীকে বৈধতার কাগজ দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। দ্বিতীয়তঃ যারা ইতালিতে বাসা বাড়িতে কাজ করছে অর্থাৎ অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ মানুষজনদের সেবা-যত্ন করছেন কিন্তু মালিক তাদেরকে অবৈধভাবে কাজ করাচ্ছে শুধুমাত্র এখানেও তারা বৈধতার আবেদন করতে পারবে অর্থাৎ মালিক মিনিমাম ৩০ হাজার ইউরো বাৎসরিক ইনকাম দেখিয়ে এই আবেদনপত্র দাখিল করতে পারবেন এবং সরাসরি যে কাজ করে সেও ১৩০/১৭০ ইউরো জমা দিয়ে এই আবেদনটি করতে পারবেন (যদি মালিক আবেদনপত্রটি দাখিল করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন সেক্ষেত্রে আবেদনপত্রটি সে নিজে দাখিল করতে পারবে সরকারি ট্যাক্স জমা দিয়ে)। তবে তার কাজের এবং মালিকের বাৎসরিক ইনকাম এর কাগজপত্র সঠিক হলেই এই আবেদন তারা গ্রহণ করবে এবং অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে যারা সব ডকুমেন্ট সত্যায়িত ভাবে জমা দিবেন এবং তা যাচাই বাছাইয়ের পর সত্য বলে গৃহীত হতে হবে। কোন কিছু না লুকিয়ে যারা আবেদন করবেন তাদের কাগজ হয়তোবা গ্রহণযোগ্যতা পাবে ।
এখন প্রশ্ন হলো ইতালিতে যে আন্দোলন হচ্ছে এই আন্দোলনের যুক্তিগত কোনো কারণ আছে কিনা? ইতালি সরকার কি বলেছে যে এখানে যত রকম অবৈধ অভিবাসী আছে সবাইকে বৈধতার কাগজ দেবে? অনুসন্ধানে এবং ইতালিয়ান মিনিস্ট্রির পেইজগুলো থেকে জানা গেছে এটা ইতালির সরকার বলেনি। কিন্তু এখানে যে আন্দোলন হচ্ছে এ আন্দোলনের কতটুকু যুক্তিকতা আছে বা ইতালির সরকার এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনরকম গুরুত্ব দিচ্ছে কিনা বা ইতালির সরকার এ আন্দোলনের শ্লোগানকে কর্ণপাত করছে কিনা, এটাই এখন দেখার বিষয়। (তবে হ্যাঁ আমাদের কাছে যুক্তি হল এই দেশে যারা অবৈধভাবে আছে তাদেরকে বৈধতা দিতে হবে, কারণ অবৈধরা এখানে অনেকে মানবেতর দিনযাপন করছেন। বৈধতার অভাবে তারা একটি ভালো চাকরি নিতে পারছে না। তারা অনেক বছর এখানে থেকেও নিজ দেশে যেতে পারছেনা, এই আন্দোলনের সাথে আমরা সাধারণ জনতা একাত্মতা ঘোষণা করেছি এবং আমরা অংশগ্রহণ করেছি)। ইতালির মিনিস্ট্রির বিভিন্ন হোমপেজ থেকে জানা গেছে ইতালির সরকার থেকে এ ধরনের কোনো ঘোষণা আসেনি যে আন্দোলনের আগেই ইতালির সরকার এবং বিরোধী দল মিলে দুই ক্যাটাগরিতে বৈধতা দিবে তার গেজেট পাশ হয়েছে।