হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে লিঙ্গসমতার বীজ বপন করেছিলেন; তিনি প্রকৃতই অনুধাবন করেছিলেন যে জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা ব্যতীত কাংখীত সামাজিক উত্তরণ সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নারী অগ্রগতিকে জাতীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছেন” -৫ অক্টোবর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে সাধারণ পরিষদের চলতি ৭৩তম অধিবেশনের তৃতীয় কমিটির আওতায় ‘নারী অগ্রগতি’ শীর্ষক এজেন্ডায় দেশ পর্যায়ের ভাষণ প্রদানকালে একথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
বিশ্বনেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গুটিকয়েক বিশ্বনেতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন যিনি জাতিসংঘের এমডিজি ও এসডিজি উভয় এজেন্ডা গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিলেন যা সফল ও ধারাবাহিক নারী নেতৃত্বের এক অনন্য উদাহরণ”। অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে প্রাপ্ত গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ সহ নারী অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসংখ্য অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মর্মে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে নারী অগ্রগতি বিষয়ে প্রদত্ত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে তিনটি কার্যকর পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছিলেন স্থায়ী প্রতিনিধি তা পূনরুল্লেখ করেন।
এগুলো হল: ১) নারী সামর্থ্যরে ক্ষেত্রে চিরাচরিত লিঙ্গধারণা পাল্টাতে হবে; ২) নারীর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে; ৩) লিঙ্গ সংবেদনশীল নীতির প্রয়োগসহ নারীদের জন্য প্রতিটি সেক্টরে সুযোগের সমতা সৃষ্টি করতে হবে।
বাংলাদেশে নারী অগ্রগতি বিষয়টি একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ নারী উন্নয়নে শেখ হাসিনা সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষি, সেবা ও শিল্প খাতে প্রায় ২০ মিলিয়ন নারী কাজ করছে; গার্মেন্টস্ খাতে কর্মীদের ৮০ শতাংশই নারী। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা দমন, বাল্য বিবাহ রোধ, নারী পাচার ও নারী সমতা আনয়নে শেখ হাসিনা সরকার নানাবিধ আইন ও কর্মপন্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে মর্মে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। স্থায়ী প্রতিনিধি আরও বলেন, আমরা প্রান্তিক ও ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় এনেছি যাতে কেউ পিছনে পড়ে না থাকে।
বাংলাদেশের নারীদের সাফল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি সংসদে ৭২ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা ছাড়াও জাতীয় সংসদে রয়েছেন সংসদ উপনেতা, স্পীকার, বিরোধী দলীয় নেতা এবং মন্ত্রীপরিষদে আছেন ৫জন নারী। তিনি বলেন, সম্ভবত বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের এরূপ দৃষ্টান্ত রয়েছে।
জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন, ক্রীড়া ও শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের সাফল্যের কথাও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ২০১৭ এর জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স অনুযায়ী লিঙ্গ সমতায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পরপর তিনবার প্রথম স্থান দখল করেছে।