হাকিকুল ইসলাম খোকন:নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজায় বাংলাদেশ হাইকমিশন যথাযথ মর্যাদায় “শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” পালন করেছে। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ হাইকমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা অর্ধনমিত করা হয় এবং দিবসটি উপলক্ষে প্রেরিত মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এরপর ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রুহের মাগফেরাত ও দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
হাইকমিশন মিলনায়তনে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সন্ধ্যায় একটি আলোচনা সভা ও বহু ভাষা-ভিত্তিক একটি বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সভার শুরুতেই ভাষা শহীদদের এবং সম্প্রতি ঢাকার চকবাজারে সংগঠিত অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর দিবসটির উপরে একটি প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। হাইকমিশনার জনাব মোঃ শামীম আহসান,এনডিসি তার স্বাগত বক্তৃতায় বলেন যে দিবসটি সারা বিশ্বে ভাষার বৈচিত্র্য উদ্যাপনের একটি প্রেক্ষাপট তৈরী করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে ভাষা শহীদ ছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃস্থানীয় ভূমিকা তুলে ধরার সাথে সাথে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের অধিবেশনে তাঁর বাংলায় বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করেন। ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরো বলেন যে এই আন্দোলনের ধারাবাহিক অর্জনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

অনুষ্ঠানে আবুজায় ইউনেস্কোর ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক প্রতিনিধি মিজ্ আদেলে নিবুনা (গং. অফবষব ঘরনড়হধ) অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে গিয়ে এক্ষেত্রে ইউনেস্কোর ভূমিকার কথা উল্লেখ করার সাথে সাথে বাংলাদেশী তরুণদের আত্মত্যাগের কথাও তুলে ধরেন। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত বিভাগ এর পরিচালক জনাব নুরা আবা রিমি (গৎ. ঘঁৎধ অননধ জরসর) দিবসটির মূল চেতনার উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে শান্তি ও পারষ্পরিক বোঝাপড়া সৃষ্টির ক্ষেত্রে ইউনেস্কোর ঘোষণার তাৎপর্য তুলে ধরেন। ভারতের হাইকমিশনার জনাব আবেয় ঠাকুর তার বক্তৃতায় মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার মধ্য দিয়ে দিবসটির আন্তর্জাতিক মাত্রা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনন্য অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের মধ্যে ভাষাগত বন্ধনের একটি অনন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিদেশী শিল্পীরা (বাংলাদেশ, চেক রিপাবলিক, ইরান, ভারত, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া-ʿইউরোবা ও ইংরেজী) এবং হাইকমিশনের পরিবার, স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যরা নাচ, গান ও কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে অংশ গ্রহণ করেন যা সবাইকে মুগ্ধ করে এবং একটি বহুভাষা-বহুজাতির সম্মিলনের বিরল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানে ইরান ও মালয়েশিয়ার কূটনীতিকদের পরিবেশনা নতুন একটি মাত্রা যোগ করে।
নাইজেরিয়ার উর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ, ভারত, কোরিয়া ও কেনিয়ার রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার এবং ইরাকের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কূটনীতিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি, পশ্চিমবংগের বাঙ্গালী কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ এবং বাংলাদেশ কম্যুনিটির নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে হাইকমিশনার ও তাঁর সহধর্মীনী মিসেস পেন্ডোরা চৌধুরী অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করনে।শেষে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবারে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।