মো: জাহাঙ্গীর অালম হৃদয়, রিয়াদ, সৌদি আরব
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা,
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে–
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিখা এই গান, শিল্পীর কন্ঠে গাওয়া গান আজ বাস্তব হলো নয় বছরের শিশু ফৌজিয়া আক্তার আফরিনের জীবনে। কথায় আছে বান্দা নয় মহান আল্লাহ যা চাহেন তাই হয়, হচ্ছে এবং হবে, এটাই চিরন্তন সত্য।
প্রিয় পাঠক আমি নয় কোন লেখক বা কবি শব্দচয়নে ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন দয়া করে। না লিখেও পারছিনা তাই আবেগ আপ্লুত হয়ে বিবেকের তাড়নায় অনেক দিন পর লিখতে বসা।
বলছিলাম গত ১৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ২০১৮ রাতে ঘটে যাওয়া একটি দুঃস্বপ্নের কথা – চাঁদপুর শাহরাস্তি উপজেলার পৌর ১১ নং ওয়ার্ড এর মুন্সি বাড়ির ফখরুল ইসলাম ও -তার লাকসাম মনোহরগঞ্জ উপজেলার বোন জামাই মোহাম্মদ শাহলমের পরিবারের কথা।
অনেক আশা নিয়ে দুইজনেই তাদের পরিবার ফ্যামিলি ভিসায় নিয়ে এসেছিল সৌদি আরবে ওমরাহ্ হাজ্ব করাবে বলে।
গত ১৫ নভেম্বর ওমরাহ্ পালনের জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে রিয়াদ থেকে মদিনার পথে যাত্রা শুরু করেন, সাথে নিকট আত্মীয় চালক আবদুর রহিম ফরিদ, সিরাজুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম। রিয়াদ থেকে মদিনা যাওয়ার পথে আল কাসিম নামকস্থানে হঠাৎ গাড়ির সামনের চাকা পাংচার হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি উল্টেপাল্টে পাশের বক্স ব্রীজের নিচে পড়ে যায়, যেই দিক দিয়ে বৃষ্টির পানির স্রোত প্রবাহিত হচ্ছিল।
গাড়িতে ছিলেন একই পরিবারের নয় জন সহ মোট বারো জন। তখন ছিল রাত।
গাড়ির সামনে থাকা সিরাজুল ইসলামের হুস জ্ঞান থাকায়, বাকিদের তিনি একেক করে উদ্ধার করেন। অন্ধকার থাকায় রাস্তা দিয়ে অন্য গাড়ির যাতায়াত থাকলেও কেউ দেখতে পায়নি।
তখন সিরাজ বুদ্ধি করে মেইন সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকে, দুরে থাকা রাস্তার কাজ করা শ্রমিকদের সহায়তা নিয়ে পুলিশ ও এম্বুলেন্স খবর দিয়ে আহত সবাইকে আল কাসিম, আল রাস ও বুরাইদা হাসপাতালে পাঠান, সবাইকে খুঁজে পেলেও শিশু আফরিনকে খুঁজে পায়নি।
অনেক খোঁজখবর করার পরে যখন দুর্ঘটনাজনিত গাড়ি সরানো হলো তখন দেখেন প্রানহীন শিশু আফরিনের মৃত দেহ পড়ে আছে। যে শিশু প্রবাসে আসার আগেও বিশ্ব নবীর মদিনা শরীফ জেয়ারত করবে, মক্কায় আল্লাহর পবিত্র ঘরে যাবে বলে বাবাকে বলতেন, সেই আফরিনের সৌদি আরব আসা হলেও পবিত্র মক্কা আর মদিনায় যাওয়া হলো না।
কে জানতো এমন করে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে না ফেরার দেশে। মহান আল্লাহ সকল কিছুই জানেন, কখন কি হবে।
হে আল্লাহ আমাদের স্বাভাবিক মৃত্যু দিন। শিশু আফরিন ছিল চাঁদপুর শাহরাস্তি উপজেলা ল্যাবরেটরি স্কুলের ২য় শ্রেণীর ছাত্রী। আজ তার নিথর দেহ পড়ে আছে আল রাস জেনারেল হাসপাতালের হিমঘরে।
তার মা আহত হালিমা আক্তার সন্তানের জন্য প্রতিনিয়ত চোখের পানি দিয়ে বুক ভাসাচ্ছেন, জ্ঞানহীন হয়ে পড়ছেন।
বন্ধু-বান্দব আত্মীয় স্বজনের সাথে আলোচনা স্বাপেক্ষে শিশু আফরিনকে সৌদি আরব রিয়াদের স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
যা শুধু নিহত আফরিনের আহত মা হালিমা, ফুফি মর্জিনা, ফুফা শাহলম জানেন, ছোট শিশু আফরিনের বোন নওশিন, ফুফাতো বোন সায়মা, সামিয়া জানে না কোথায় তাদের খেলার সাথি আফরিন।
এই খবর আফরিনের আহত দাদি শাহানারাকেও জানানো সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে আল রাস জেনারেল হাসপাতালের আইসিউতেই থাকা নিহত শিশু আফরিনের বাবা ফখরুল ইসলাম জানেনা তার শিশু আফরিনের খবর, কারণ দুর্ঘটনার দিন থেকে আজ অবদি ফখরুল এর জ্ঞান ফেরেনি।
বাঁচবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে ডাক্তারদের, এই পরিবারের রোজগারের একজনই সে হল ফখরুল।
শিশু আফরিনের দেশে ফেরা হোলনা, পুরা পরিবার বিচ্ছিন্ন। হে আল্লাহ এমন ঘটনা আর কারো পরিবারে দিও না। সবাই আমার নিকট আত্মীয়, রিয়াদ প্রবাসে থাকার কারনেই দেখার সম্ভব হয়েছে।
(লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক, কবি ও লেখক)