প্রবাস মেলা ডেস্ক: শ্রীলঙ্কায় চলমান বিক্ষোভ ও সহিংসতা থামাতে ‘দেখা মাত্রই গুলির’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১০ মে ২০২২, মঙ্গলবার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেনা ও পুলিশকে এই নির্দেশ দিয়েছে। এদিন মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যারাই সরকারি সম্পত্তি লুট বা অন্যের জীবননাশের চেষ্টা করবে তাদেরকে দেখামাত্রই গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হল।’ খবর আলজাজিরার।
কয়েক সপ্তাহের চলমান বিক্ষোভ-প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে সোমবার (০৯ মে) পদত্যাগের ঘোষণা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। এরপর ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশটিতে নজিরবিহীন সংঘর্ষ ও সহিংসতা শুরু হয়। ক্ষুব্ধ জনতা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা ও সরকার দলীয় বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, সরকার দলীয় যাকেই দেখছে তাকে পেটাচ্ছে জনগণ।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় কারফিউ জারি করা হয়। সেই সঙ্গে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা। শুধু তাই নয়, এরপর এক নির্দেশনায় সেনা ও পুলিশ যে কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে আটক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। এরপর সর্বশেষ দেখামাত্র গুলির নির্দেশ এলো।
ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে শ্রীলঙ্কা। জ্বালানি, খাদ্য ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধের চরম ঘাটতি। যা দেশটির শান্তিপ্রিয় হাজার হাজার মানুষকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করে। সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই আন্দোলন চলতি সপ্তাহ পর্যন্তও প্রধানত শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু সোমবার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার পদত্যাগের পর তা হঠাৎই সহিংস হয়ে ওঠে। সহিংস বিক্ষোভে এ পর্যন্ত একজন সংসদ সদস্যসহ আটজন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয় যা বুধবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী র পদত্যাগের পরও শান্ত হয়নি বিক্ষোভকারীরা। কারফিউ ভেঙেই রাজপথে নামছে জনতা। তাদের দাবি এখন মাহিন্দার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগ। তবে পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন গোতাবায়া।
বিবিসির এক প্রতিবেদন মতে, শুক্রবার থেকে দেশটিতে জরুরি অবস্থা চলছে। জরুরি অবস্থার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যেই সোমবার রাজধানী কলম্বোয় মাহিন্দা রাজাপক্ষের সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রির বাইরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা চালায় সরকার সমর্থকরা। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর তা বিক্ষোভের কেন্দ্র গ্যালে ফেস গ্রিনে ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তাদের ওপর হামলা চালানোর জন্য সমর্থকদের উস্কানি দিয়েছে রাজাপক্ষে পরিবার। ওই হামলার জন্যই প্রতিশোধমূলক হামলার জন্ম নিয়েছে। সোমবার দিনভর বিক্ষোভের পর রাত যতই গভীর হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা ততই সরকার সমর্থক এবং সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালাতে থাকেন। এতে মঙ্গলবার পর্যন্ত এক এমপিসহ অন্তত আটজন নিহত হয় এবং আহত হয় আরও অন্তত ২০০ জন।
শ্রীলঙ্কা পুলিশের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা রাজধানী কলম্বোর উপকণ্ঠে সরকার দলীয় এমপি অমরাকীর্তি আথুকোরালার গাড়িতে হামলা চালালে তিনি দুইজনকে গুলি করেন। এতে ২৭ বছর বয়সি বিক্ষোভকারী নিহত হন।
এরপর সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা এমপিকে ঘিরে ধরেন। এমন পরিস্থিতে নিজের পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেন এমপি আথুকোরালা। এরপর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
এর মধ্যে হাম্বানটোটায় রাজাপক্ষে পরিবারের নিজস্ব একটি বাড়ি যা একটি বিতর্কিত জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, সেটিও পুড়িয়ে দেয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বাড়িগুলোতে আগুন ও ধোয়ার কুণ্ডলি আকাশে উঠে যাচ্ছে। সেই আগুনের শিখা ঘিরে উল্লাস করছে বিক্ষোভকারীরা। প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনের চারপাশের এলাকাতেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।