আনোয়ারুল ইসলাম রনি, সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া
অনেকেই কোরিয়া বললে কোন কোরিয়া প্রশ্ন করেন। আসলে কিম জং উন, তার শাসন আর পারমাণবিক বোমা ছাড়া উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে তেমন কিছু বলার থাকে না। তাই কোরিয়া বলতে আমরা দক্ষিণ কোরিয়া বুঝবো সবসময়। দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ যা কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশ নিয়ে গঠিত। দেশটির উত্তরে উত্তর কোরিয়া, পূর্বে জাপান সাগর, দক্ষিণে ও দক্ষিণ পূর্বে কোরিয়া প্রণালী এবং পশ্চিমে পীত সাগর। সিউল দেশটির রাজধানী।
আসুন কোরিয়ার ঋতু বৈচিত্র্য সম্পর্কে কিছু জেনে নেই। আমাদের দেশে ঋতুর সংখ্যা ৬টি হলেও কোরিয়াতে এর সংখ্যা ৪। বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীত এই চারটি ঋতু বিদ্যমান দেশটিতে। কোরিয়ান ভাষাতে 봄(বোম), 여름(ইওরূম), 가을(খাঊল) ও 겨울(খিওয়ুল)।
একেক ঋতু একেক রকম বৈচিত্র্যময়। প্রতি ঋতুতে কোরিয়া তার নিজস্ব রূপ ও বর্ণ পরিবর্তন করে। মার্চ মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়টুকুকে সাধারণত বসন্ত গণনা করা হয়। বসন্তে হরেক রংয়ের ফুল ও পাতায় যেনো অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে ফুলের রাজ্যে পরিণত হয়। চেরি, টিউলিপ, গোলাপ সহ হরেক রকমের ফুলের উৎসব বসে দেশ জুড়ে। সবাই যেনো পর্যটক হয়ে যায় এসময়। ফেসবুক আপলোডে থাকে শুধুই ফুল আর ফুল। বিভিন্ন ন্যাশনাল পার্ক এবং থিম পার্কগুলো থাকে ফুলের উৎসবে ভরা। যেদিকেই তাকানো যায় ফুল দিয়ে তৈরি কারুকার্য। কোনটিই ছেঁড়া ফুল বা কৃত্রিম নয় সবই জীবন্ত।
শীত প্রধান দেশ হওয়ায় ৩২-৩৪০ সে: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হওয়া স্বত্ত্বেও অনুভূতিটা হয় অসম্ভব প্রখর। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়টুকুকে বলা হয় গ্রীষ্মকাল। নিয়মিত বৃষ্টি থাকায় পাহাড় ভরা দেশটি সবুজ রং ধারণ করে গাছের পাতার কারণে। এ যেনো কচি পাতার তরুণ যৌবনা দেশ। কিছুদিন বেশি বৃষ্টি হলেও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত ও পরিকল্পিত হওয়ায় বন্যা দেখা যায়না বললেই চলে। লোডশেডিং না থাকায় পর্যাপ্ত উন্নত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কারণে বাসা বা অফিস বা মার্কেটে গরমের অনুভূতি পাওয়া যায় না। আর পরিবহন ব্যবস্থা ১০০% শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় যাতায়াতেও কোন গরম বা শীতের রেশ পাওয়া যায় না। শুধু বাহিরে কাজ করে এমন লোকদেরই যত কষ্ট।
সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর সময়টুকুই হলো শরৎকাল। শরৎকাল মানেই যেনো পাতার খেলা। রং বেরংয়ের পাতা তখন সবার কাছে যাদুর রাজ্য মনে হয়। কখনও কখনও মনে হয় শিল্পীর শিল্প। হলুদ, লাল, হালকা সবুজ, গাঢ় সবুজ, কাঁচা পাকা কত রকম পাতার গাছ সত্যিই অবিশ্বাস্য। আবহাওয়াটাও নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের ঋতু এটি। ক্যামেরা যত খারাপই হোক বা ক্যামেরাম্যান যত আনাড়িই হোক না কেনো ছবি সুন্দর হবেই। কারণ সবই যে সুন্দর। ক্যালেন্ডারের পাতার সুন্দর ছবিগুলো যেনো এসব দৃশ্য দিয়েই গড়া।
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সময়টুকু হলো শীতকাল। শীত মানে যে ঠান্ডা, আর সে ঠান্ডা কত ঠান্ডা হতে পারে প্র্যাক্টিকাল ছাড়া বুঝানো সম্ভব না। আসলে বাহিরে খাবার কিছু রাখলে ফ্রিজের প্রয়োজন হয় না। -২০০ সেঃ তাপমাত্রাও অতিক্রম করে মাঝে মধ্যে। নদী-নালা সব বরফ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে সমুদ্রের লোনা পানিও বরফ হয়ে যায়। এতো কিছুর মাঝেও তুষারে সাদা শুভ্র প্রকৃতি। যেদিকেই তাকাই শুধু সাদা আর সাদা। অপরূপ মনোরম দৃশ্য যদিও তুষারে জীবন যাপন কিছুটা কষ্টের। প্রযুক্তির ব্যবহারে খুব বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় না। আর বাহিরে না গেলে শীত গরম প্রায় সমান। এ সময় আইস স্কেটিং বা স্কী এর মতো খেলাগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। শীতে গাছে কোন পাতা থাকে না।
এসময় কৃষি ব্যাহত হলেও পলিথিন দিয়ে বিশেষ ঘর বানিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে কৃষি কাজ চালিয়ে যায় স্বল্পহারে। আবহাওয়া যেমনই হোক কোরিয়ান নাগরিকরা কাজ করা জাতি। শুদ্ধ বাংলায় কামলার জাতি, কাজ মাফ নাই। এজন্যই তারা উন্নত। ঋতু সে যে ঋতুই হোক না কেনো কাজ চলে সমান তালে।