অসীম বিকাশ বড়ুয়া, দক্ষিণ কোরিয়া থেকেঃ পৃথিবীর উন্নত এবং অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোর একটি, এশিয়ার ড্রাগন বলে খ্যাত দক্ষিণ কোরিয়াতেও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় মহামারী করোনা ভাইরাসের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে টিকা প্রয়োগে আক্রান্তদের বাইরে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ সহ অন্যান্য পেশাজীবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দেশটির কতৃপক্ষ।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার দেশটির সবগুলো প্রদেশে অ্যাস্ট্রজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। এর আগে কোরিয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘোষণা করে,পাঁচ হাজারেরও বেশি নার্সিংহোমের বাসিন্দা এবং ৬৫ বছরের কমবয়সী শ্রমিকরা এই টিকা গ্রহণ করবেন। সরকার বলেছে যে,অপ্রতুল ক্লিনিক্যাল তথ্যের কারণে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকা দেওয়া হবেনা এবং অতিরিক্ত তথ্য পর্যালোচনা করে আগামী মার্চ মাসের দিকে প্রবীণদের অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকার আওতায় অন্তর্ভূক্ত করতে পারে। এই ভ্যাকসিনটি প্রথমে ২,৭২,০০০ রোগী এবং স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে দেওয়া হবে এবং মার্চ মাসের মধ্যে প্রায় ৭,৫০,০০০ লোককে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে দেশটির সরকার।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত মুনজে-ইন সিউলের ম্যাপো জেলার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র দর্শনকালে সবাইকে দ্রুত ও নিরাপদে টিকা দেওয়ার জন্য বলেন। কোরিয়া ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেন্সন এজেন্সি(কেডিসিএ) এর পরিচালক জিয়ং ইউন কিয়ং বলেন, অন্য দেশের মতো আমরা আগে কে টিকা পাবে নির্ধারণ করি নাই। বরং পুরো কোরিয়া জুড়ে শত শত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যারা সবার আগে টিকা নিয়েছে তাদের নাম প্রথম টিকা গ্রহণকারী হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হলেও কোরিয়াতে প্রথম টিকা গ্রহন করেন, উত্তর সিউলের নওন জেলার ৬১ বছর বয়সী একটি নার্সিংহোমের কর্মচারী লি গিয়ং চুন।
পৃথিবীর অন্য দেশ থেকে ভিন্নভাবে নাম নির্ধারণ না করে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করার মাত্র ১৫ মিনিট পূর্বে প্রথম টিকা গ্রহনকারীকে মনোনীত করা হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার সকাল ৮.৪৫ মিনিটে তিনি প্রথম টিকা গ্রহণ করেন যা টিভিতে সম্প্রচার করা হয়। টিকা নেওয়ার পরে তিনি বলেন, আমি আনন্দিত ও পুলকিত হয়েছি এবং টিকা নেওয়ার পর অনেক ভাল বোধ করছি। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল কর্মকর্তা পার্ক জং বলেছেন, সরকার টিকা প্রদান কার্যক্রমকে সফল করার জন্য আগামী নভেম্বরের মধ্যেই ৯০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে দশহাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
এদিকে টিকা নেওয়ার পর সবাইকে ৩০ মিনিট স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকতে বলা হয়েছে এবং পর্যবেক্ষণের পরে ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রতি নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কোরিয়া ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেন্সন এজেন্সি বলেছে, টিকা নেওয়ার পর তিন দিন ধরে জ্বর, ঠান্ডা, ক্লান্তি ও মাথা ব্যাথার পাশাপাশি প্রয়োগকৃত বাহুতে ব্যাথা অনুভব হতে পারে। টিকা দেওয়ার পরে এ জাতীয় ব্যাথাগুলো হতে পারে কারণ মানব শরীরে টিকার সাহায্যে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করে। এজেন্সি আর ও বলেছে, ব্যাথাকৃত অংশে ঠান্ডা জলপট্টি ব্যবহার করার পাশাপাশি টিকা নেওয়ার পর ব্যাথানাশক ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। তবে টিকা নেওয়ার পর র্যা্শ হওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট বা মাথা ঘোরার সাথে জিহ্বা ফোলাভাব হলে অবিলম্বে আশেপাশের হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেন। এক্ষেত্রে ফ্রি চিকিৎসা করা হবে এবং কেউ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারা গেলে সরকার তাঁদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন লক্ষ তিরাশি হাজর সাতশত উনচল্লিশ (৩৮৩৭৩৯) ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জানা গেছে, মোট চারটি কোম্পানি থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার ৫৬ মিলিয়ন নাগরিক এবং সকল অভিবাসীদের জন্য টিকা আসবে ধাপে ধাপে। প্রথম অ্যাস্ট্রজেনেকা, দ্বিতীয় রাউন্ডে জনসন ও মর্ডানা এবং তৃতীয় রাউন্ডে আসবে বায়োএনটেক এর টিকা।
এদিকে কোরিয়ায় ফের করোনা বৃদ্ধিতে সামাজিক দুরত্ব সহ সকল বিধি নিষেধ আরো দুই সপ্তাহ বর্ধিত করা হয়েছে এবং পাঁচ জনের অধিক মিলিত হলে জরিমানা ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে কোরিয়ায় বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীদের একমাত্র প্রশিক্ষক শেখ মুরাদ হোসেন বলেন, কোরিয়াতে সব কিছুই দ্রুত করা তাদের কালচার। তাই আশা করি কোরিয়াতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌছাতে বেশী সময় লাগবেনা। সে নাগাদ ধৈর্য্যের সাথে করোনা প্রতিরোধকল্পে সকল নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি। এদিকে সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম, বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন পূর্বক সাবধানে চলাফেরা করার জন্য অনুরোধ জানান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, শুক্রবার কোরিয়ায় নতুন করে ৪০৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে, ৪ জন মারা গেছে। সর্বমোট আক্রান্ত হয়েছে ৮৮৯২২ জন,সর্বমোট মৃত্যুবরণ করেছে ১৫৮৪ জন।
লেখক: অসীম বিকাশ বড়ুয়া, দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ও ইপিএস কর্মী।