রোটারিয়ান মো: জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়:
২০২১ বছরের প্রথম দিন শুক্রবার
জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে গেলাম
নামাজ শেষে বাহির পানে
তাকিয়ে দেখি এক ফল বিক্রেতা
উচ্চস্বরে হাকিয়ে ডাকছে ক্রেতাদের
তার ডাক শুনে
আমি অবাক হয়ে চাহিয়া রইলাম
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে তার কাছে গেলাম
আশেপাশে ভিন দেশের
অনেক মানুষকে দেখতে পেলাম
বিক্রেতা আবারও উচ্চস্বরে বলছে
তিন কেজি আনার দশ রিয়াল
তার কথা শুনে নিজেও নিলাম
তিন কেজি আনার ফল
বাসায় উঠার আগে পাশের দোকানে ওজন দিয়ে দেখি
তিন কেজিতো নয় আছে দুই কেজি দুইশো গ্রাম আনার
বিবেকের কাছে প্রশ্ন করতেই রাগ এসে
শরীর থেকে ঝরতে লাগলো ঘাম
মসজিদের সামনে বসেই এই কাম?
প্রিয় পাঠক নতুন বছর আসছে শুনে পুরাতন বছর ২০২০ এর করোনা নামক যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করছি- হে আল্লাহ ২০২১ সালে সারা পৃথিবী থেকে করোনা, বৃটেন থেকে আগত মরোনা VUi. ভেরিয়েন্ট ভাইরাস সংক্রমণের থেকে আমাদের মুক্তি দিন, পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে দিন।
অথচ সেখানে আমরা করছি কি? হারাম নিজে খাই, পরিবারের সবাইকে খাওয়াই, এটা কি উচিৎ বলুন?
কিছু হলেই আমরা আল্লাহকে দোষারোপ করে থাকি আল্লাহ আমার ভাগ্যে এমন রেখেছেন- আল্লাহ বলছেন চুরি, ডাকাতি, অন্যের হোক মারা, ওজনে কম দেয়া, হারাম খাওয়া যাবেনা, সেখানে আপনি, আমি কি করছি তার উল্টো। এই জন্য দায়ী কে?
১ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার সৌদিআরব রিয়াদের স্থানীয় একটা মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে গেলাম, নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হতেই দেখি বাংলাদেশি এক ফল বিক্রেতা উচ্চস্বরে হাঁকিয়ে ফল বিক্রি করছে, দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছি ভিন দেশের অনেক মানুষকে আনার ফল কিনছে। আমিও আস্তে আস্তে কাছে গেলাম, নিজেও তিন কেজি আনার ফল ক্রয় করলাম দশ রিয়াল দিয়ে, এরি মধ্যে এক ক্রেতা বিক্রেতাকে বলে উঠলো তোমার পাল্লা ঠিক করে নাও ওজনে কম হচ্ছে। বিক্রেতা এই দিক ও দিক তাকিয়ে পাল্লা ঠিক করে দিলো সবাই দেখছে ওজন ঠিক আছে।
হায়রে হায় আমি নিজের বাসায় উঠার আগে পাশের দোকানে ওজন দিয়ে দেখি যে লাউ, সেই কদু, তিন কেজি আনার ফল ওজন দিয়ে দেখি দুই কেজি দুইশো গ্রাম মাত্র। ৮০০ গ্রাম নেই, একেই বলে ব্যবসা, কি চমৎকার ব্যবসা।
চুরি, ডাকাতি, ওজনে কম দিয়ে মানুষ ঠকিয়ে যেই হারাম কামাই করে পরিবারকে খাওয়াচ্ছি, তা কি ঠিক করছি? আপনার হারাম করা টাকা খেয়ে যখন পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন বলে আল্লাহ আমার ভাগ্যে এমন কেন?
আমি নিজে দীর্ঘ ১৩ বছর বিদেশে চাকুরি করে এক হাত জায়গা কিনতে পারিনি, অথচ বিদেশের মাটিতে পান দোকানদার, তরকারি দোকানদার, ফলদোকানদার, হোটেল মালিক সহ অনেকেই বছর না যেতেই দেশের বাড়িতে আশেপাশের সব জায়গা সম্পদ ক্রয় করে ৩/৪ বাড়ির মালিক। এটা কি করে সম্ভব হয়েছে তা এখন বুঝি, মানুষ ঠকাতে পারলেই সব কিছুই সম্ভব।
আবার অনেকেই দেখি প্রবাসে চাকুরী, ব্যবসা বাণিজ্য কিছুই করেনা হাটাহাটি করে তারাও দেখি অঢেল সম্পদের মালিক, এটা কিভাবে সম্ভব বা এরা আসলে কি করে তাও বুঝিনা। আবার অনেকেই প্রবাসে থাইল্যান্ডি, কইল্যান্ডি, জুয়া খেলে রাতভর, দিনভর ঘুমায় তারাও কোটি টাকার মালিক।
প্রবাসে সকল আকাম করে দেশে যাবার সময় দামি সেন্ট মেরে, গলায় চেইন, হাতে বেস লাইট, পকেটে গ্যাস লাইট ঝুলিয়ে যায় তখন তাদের দেখে অনেকেই স্থানীয়ভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সামনের চেয়ারে নিয়ে বসায়।
আমার সাথে কিছু দিন আগে এক ব্যক্তির সাথে আলাপ হচ্ছিলো, পরিচিত মুখ, তিনি আমায় বলছেন সাংবাদিক সাহেব এতো সন্মান দিয়ে করবেন কি, টাকা না থাকলে? সেই ব্যক্তির কথা শুনে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম- সে বলছে আপনি জানেন আমি প্রবাসে কি করছি- এলাকার লোকজন জানেনা, আমি যখন দেশে যাই তখন এলাকার অসহায় হতদরিদ্র মানুষকে কিছু দেই, স্থানীয় লোকজন তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের আয়োজন করে সেখানে কিছু দেই আমায় অতিথি বানায়, জনগণ কি জানে আমি ওজনে কম দিয়েছি না কি করছি। জনগণের দরকার টাকা। সন্মান দিয়ে করবেন কি হৃদয় ভাই টাকা কামান সেটা যেই ভাবেই পারেন, আপনি চাইলেই পারেন।
তখন তাকে বল্লাম সকলের দারা সব কিছু সম্ভব নয় ভাই। জীবনটা ক্ষনিকের জন্য, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সুস্থভাবে দুনিয়ায় এসেছি, আবার যেনো সন্মানের সাথে সুস্থ শরীরে কালেমা মুখে নিয়েই মরতে পারি এই টুকুন চাওয়া আল্লাহর কাছে।
ক্ষনিকের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য যা দরকার তাই চাই হালাল পথে, হারামের কামাই দিয়ে নাইবা হলাম কোটি টাকার মালিক।
হালালে শান্তি পাই, হারামে আরাম নাই।
ক্ষনিকের জীবনে ভুলে গেলে চলবেনা ভাই।
হায়রে জীবন, হায়রে মানুষ?
লেখক পরিচিতি- প্রবাসী সাংবাদিক, নাট্যকার, টেলিভিশন অভিনেতা, লেখক, কবি।