হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর গ্রামের সরকার বাড়ির মৃত আবু মিয়া সরকার ও আনোয়ারা বেগমের পুত্র জয়নাল সরকার (৩০) মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকার ডেমরার মাতুয়াইল ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।বর্তমানে সে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। ঘটনার বিবরণে তার চাচাতো ভাই কিবরিয়া সরকার জানান, ২৩ শে জুন, সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে লাউর ফতেহপুর সরকার বাড়িতে একই গ্রামের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ আলী আকবর গং জয়নালের চাচাতো বোন প্রবাসী কাজলের স্ত্রী নাজমার কাছে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে এবং জয়নাল সরকার বাধা দিলে, জয়নালকে টেনে হিচঁড়ে পাশের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আলী আকবরের নেতৃত্বে তার ভাই মতি ও আজু এবং সহযোগী ইয়াসিন রামদা দিয়ে কুপিয়ে তাকে মারাত্মকভাবে আহত ও রক্তাক্ত করে।তার আর্ত চিৎকারে তার পাশে কেউ ছুটে না গেলেও বিধবা মা আনোয়ারা বেগম ছুটে গেলে তার ওপরও চড়াও হয় এবং তাকে লাঞ্চিত করে।
রক্তাক্ত জয়নালকে মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ভর্তি না নেওয়ায়,পরবর্তীতে তাকে ঢাকার ডেমরার মাতুয়াইল ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।তার সাথে বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছে তার বড় ভাই আনিস সরকার ও প্রতিবেশী সোহাগ মিয়া এবং শাশুড়ি তাহেরা বেগম।সোহাগ মিয়া মুঠোফোনে জানান, জয়নালের অবস্থা খুবই আশংকাজনক, বর্তমানে সে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। ঘটনাস্থলে নবীনগর থানার এস আই ইমরান অবস্থান করছেন।এ ব্যাপারে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল লাউর ফতেহপুরে পুলিশ গিয়ে সরজমিনে তদন্ত করেছে এবং যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফারুক আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি অসুস্থ এবং বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি তবে আমি ঘটনাটি শুনেছি।
নবীনগর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলি রহমানের কাছে জানতে চাইলে, তিনি তাৎক্ষণিক কিছু বলতে না পারলেও পরবর্তীতে জানান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো: জাকির হোসেন সাদেক ওই ইউনিয়নেরই বাসিন্দা তার কাছ থেকে জেনেছি ওই এলাকায় একটি মারামারির ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের মনির মেম্বারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার পুকুরের কর্তৃত্ব নিয়ে আলী আকবর গং ও জয়নালের সাথে মারামারির খবর আমি শুনেছি, ঘটনাস্থলে পুলিশ ও এসেছিল।জয়নালকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জয়নালের শাশুড়ি তাহেরা বেগম মুঠোফোনে জানান, আমার জামাই জয়নাল ও তার মা আনোয়ারা বেগমকে যেভাবে রক্তাক্ত করেছে এর বিচার কার কাছে চাইব?আমার জামাই জয়নালের কিছু হয়ে গেলে তার চার বছরের ছেলে মুস্তাকিম ও দশ বছরের ছেলে জয় এবং তার স্ত্রী রোকসানার কীভাবে বেঁচে থাকবে। আমার জামাই খুবই সাধারণ একজন মানুষ, দিন আনে দিন খায়। তাকে কেন এভাবে রক্তাক্ত করা হল।অনুসন্ধানে আর ও জানা যায়,আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার জাকির হোসেনের নাম ভাঙিয়ে আলী আকবর গং রা এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এর আগেও নানা অপকর্মের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, নবীনগর আসন থেকে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নেতা তকদির হোসেন মো: জসিম বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল এ এলাকায় কখনো আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখিনি, আমাদের সকলের মধ্যে সম্প্রীতি ছিল এবং এলাকার স্বার্থে আমরা সকলে এক ছিলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে গায়েবী ও মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। এবং সরকার দলীয় কিছু উঠতি নেতার সমর্থনে কিছু কিছু সন্ত্রাসীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এই করোনাকালীন মহাদূর্যোগের সময় ও যারা সাধারণ ও অসহায় জয়নালের ওপর আক্রমণ করেছে,তারা যে দলেরই হোক না কেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। এই ঘটনায় বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।