হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিঃ নিউইয়র্ক, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন নিউইয়র্ক-এ বাংলাদেশের গৌরবময় ৫০তম বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়।অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সকাল ৮:৪৫ মিনিটে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এরপর শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অতপর: দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ ও ভিডিও বার্তা প্রদর্শন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।
আলোচনা পর্বের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্টের শাহাদৎবরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সকল সদস্য, জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুইলাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র এবং উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, জনগণের জীবন মান বৃদ্ধি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ও গঠনমূলক নেতৃত্বের কারণে জাতিসংঘেও আমাদের অবস্থান অত্যন্ত সম্মানের”। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের শর্তসমূহ পূরণ করেছে মর্মে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিকতা ও পদক্ষেপ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা জাতিসংঘে যথাসম্ভব ভূমিকা রেখে চলেছি। ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, বিশ্বশান্তি রক্ষা, দারিদ্র্য দূরীকরণ বিষয়ক আলোচনা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ অন্যান্য অনেক বিষয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সৈন্য ও পুলিশ প্রদানকারী দেশ হিসেবে জাতিসংঘে এক গর্বিত নাম”।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের নেতৃত্বশীল ভূমিকার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “আমরা ইউনিসেফ এর গভর্ণিং বডির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। বাংলাদেশ ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ এবং ইউএনওপিএস এর নির্বাহি বোর্ডের সহ-সভাপতি। এছাড়াও ইকোসক ও মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতিসংঘ ফোরামে বাংলাদেশ নির্বাচিত সদস্য হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে”।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট অসংখ্য আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন মর্মেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা বঙ্গবন্ধু ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের স্মরণে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেছি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বার্ষিকীতে প্যারিসভিত্তিক জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো যৌথভাবে জন্মশতবার্ষিকী পালনসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে যার সবকিছুই আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে বাংলাদেশের মর্যাদার স্বীকৃতি”।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, বাংলাদেশের এই সম্মান ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করতে হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্মকান্ড বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করছে। রেমিট্যান্স প্রেরণ ছাড়াও প্রবাসীদের অর্জিত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে সরাসরি দেশের উন্নয়ন তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্পসমূহের বাস্তবায়ন এগিয়ে নিতে আরও অবদান রাখার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
মিশনের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ অনুষ্ঠানটিতে অংশ গ্রহণ করেন। প্রদত্ত বক্তব্যে আলোচকগণ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও দিক-নির্দেশনায় স্ব স্ব অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কোভিড-১৯ (COVID-19) অতিমারিজনিত কারণে স্থানীয় নীতি ও নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব মেনে অনুষ্ঠানটি সংক্ষিপ্ত আকারে আয়োজন করা হয়। করোনা অতিমারির এই সঙ্কটময় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী বছর জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে উৎসবমূখর পরিবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বাকী অনুষ্ঠানাদি এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করা হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।