হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউইয়র্ক এবং কুইন্স লাইব্রেরীর সহযোগিতায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ যথাযথ মর্যাদায় “শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” উদযাপন করা হয়। কনস্যুলেটের বিশেষ উদ্যোগে প্রথমবারের মত আমেরিকার মূলধারার সংস্থা কুইন্স লাইব্রেরী, ফ্লাশিং, কুইন্স এ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কুইন্স লাইব্রেরীর সাথে আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার সংস্কৃতির সংগে বাংলাদেশি সংস্কৃতির মেলবন্ধন স্থাপন।
অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে দিবসটির উপরে প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্বাগত বক্তব্যে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা ভাষা শহীদদের সম্মান জানিয়ে বলেন দিবসটি সারা বিশ্বে ভাষার বৈচিত্র্য উদ্যাপনের একটি প্রেক্ষাপট তৈরী করেছে যার নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি নিউইয়র্কে একটি স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এবং কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্টের কাছে আবারো অনুরোধ জানান।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তাঁর বক্তব্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ছাত্রনেতা হিসেবে ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা এবং কিভাবে ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তা তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতির পিতার প্রথম বাংলায় ভাষন এবং এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেয়ার কথা বলেন। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে স্বীকৃতদানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা উলে¬খ করেন।
সরকারী কাজে সফররত বাংলাদেশের সংসদ সদস্য: ডাঃ এ এফ এম রুহুল হক, এমপি, চেয়ারম্যান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এবং মোঃ আবু জহির, এমপি, সিনেটর জন ল্যু, কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কাট্জ, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল সদস্য কস্তা কনস্টাটিনিডেস, কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীর প্রধান লাইব্রেরীয়ান এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক বোরন এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এর সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
সংসদ সদস্য তাদের বক্তব্যে প্রভাত ফেরীসহ একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর উদযাপনের ক্রমইতিহাস তুলে ধরেন। কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কাট্জ এবং কুইন্স লাইব্রেরীর প্রতিনিধি বাংলাদেশের নেতৃত্বে প্রতিবছর কুইন্সে যথাযথ মর্যাদায় এ দিবস পালিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত বহুভাষা ও সংস্কৃতির সম্মিলনে উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলা, চীনা, ভারতীয়, থাই, মেক্সিকান এবং বুলগেরিয়ান ভাষায় স্ব স্ব দেশের শিল্পী/ছোট্ট শিশুরা তাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরে।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কনসাল জেনারেল, কূটনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রতিনিধি, মিশন এবং কনস্যুলেটর কর্মকর্তাবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং এ আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।