রাশেদ কাদের, আম্মান, জর্ডান থেকে: শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২১ উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও ভার্চুয়াল কনসার্টের আয়োজন করা হয়।
দিবসের প্রত্যূষে এই উপলক্ষ্যে দূতাবাসে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও দূতাবাসে স্থাপিত শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ভাষা শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এই উপলক্ষ্যে দূতাবাস নির্মিত একটি ছোট ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। একুশের আল্পনায় সজ্জিত দূতাবাস চত্বরে এসময় মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত সহ কূটনীতিকবৃন্দ, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, জর্ডানের স্থানীয় নাগরিক এবং জর্ডানে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভার শুরুতেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক, জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে কোভিড মহামারির কারণে বৈশ্বিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও জর্ডান, বাংলাদেশ ও পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্ত থেকে যুক্ত হওয়া সকল সন্মানিত অতিথি ও দর্শকবৃন্দকে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর কারণে আজ বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব বাঙ্গালির জাতীয় চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব একটি স্বাধীন জাতির ভিত রচনা করেছিল যা কয়েক দশকের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেয়।
উক্ত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জর্ডানের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ডক্টর বাসেম মোহাম্মদ আল তুয়েসি, বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হন বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জনাব জাহিদ আহসান রাসেল, এম পি এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম খালিদ, এম পি। এছাড়া বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আব্দেল করিম এবং ঢাকা থেকে যুক্ত হন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি জনাব শাহ আলী ফরহাদ। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয় এবং মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রদত্ত ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জর্ডানের মাননীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী ডক্টর বাসেম মোহাম্মদ আল তুয়েসি বলেন, মাতৃভাষা বাঙ্গালীর ভাষার জন্য আত্মত্যাগ শুধু মাত্র তাদের নিজদের ভাষাই নয় বরং সে সাথে বিশ্বের প্রতিটি ক্ষুদ্র ও আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যার ফলে বাংলাদেশের ভাষা শহিদ দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করেছে। তিনি আরও বলেন, ভাষা বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং এটি মানুষের অতীত, ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যতের সাথে সেতু বন্ধন। এটি যোগাযোগের মৌলিক মাধ্যম। ভাষা একটি জাতীর পরিচয় বহন করে। তাই বিশ্ব যত বেশি বহুভাষাভাষী সংখ্যা বজায় রাখতে পারবে ততই আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ হবে। তিনি বাংলাদেশ ও জর্ডানের পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধির লক্ষ্যে উভয় ভাষার শিল্প ও সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য রচনা সমূহ ও উভয় ভাষায় অনুবাদ করার উপর গুরুত্ব দেন। তিনি এই দিবসকে আন্তর্জাতিকীকরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ভিডিও বার্তায় বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রথমবারের মত বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের অন্যান্য ভাষাভাষীর কাচে পরিচয় করিয়ে দেন। এছাড়াও তিনি অমর একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে বাংলাদেশকে একটি প্রগতিশীল, প্রযুক্তি নির্ভর, উন্নত ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জনাব জাহিদ আহসান রাসেল, এম.পি বলেন, ভাষা একটি জাতির পরিচয়। এটি জাতিসত্তার ধারক ও বাহক। আমরাই পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা নিজেদের মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে এবং সেই ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বাংলাদেশের প্রথম গৃহীত সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাষণটিও ছিল বাংলায় দেয়া। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়ে থাকেন।
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম খালিদ, এম পি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তৎকালীন অন্যান্য নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে সংগঠিত আন্দোলনে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাণ দিয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। ভাষার দাবীতে প্রাণ বিসর্জন দেয়া পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এ দিবসের তাৎপর্য লুকিয়ে আছে দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে, দেশের সংস্কৃতিকে ভালোবাসা ও তার জন্য গর্ববোধ করার মধ্যে। এ দিবসে প্রত্যেক ভাষাভাষী মানুষ নিজের মাতৃভাষাকে যেমন ভালবাসবে তেমনি অন্য জাতির মাতৃভাষাকেও মর্যাদা দেবে। এভাবে একুশকে চেতনায় ধারন করে মাতৃভাষাকে ভালোবাসার প্রেরনা পাবে মানুষ।
অনুষ্ঠানের বিশেষ বক্তা জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আব্দেল করিম তাঁর বক্তব্যে বলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই আরব অঞ্চলের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ । “ভাষা আন্দোলনে শহীদ বাঙালি ভাইদের প্রতি আমার সালাম ও শ্রদ্ধা।