হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: জর্জিয়া স্টেট সিনেটের নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শেখ রহমান চন্দন । ৬ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে শেখ রহমাননের এই জয়ের মধ্যে দিয়ে আমেরিকার রাজনীতিতে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশিদের জয়যাত্রা শুরু হল।
আমেরিকায় বাংলাদেশিদের বসবাস পাঁচ-ছয় দশক ধরে হলেও আমেরিকার রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহন তেমন উল্লেখযোগ্য না। ফলে মূলধারার সবোর্চ্চ পর্যায় অথবা স্টেট পর্যায়ের কোন নির্বাচনে কোন বাংলাদেশির অংশগ্রহণ করে সাফল্যে থাকার কথা না। প্রায় একযুগেরও বেশী আগে নিউইয়র্কে মোর্শেদ আলম ডেমোক্রেট পার্টি থেকে স্টেট সিনেটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পরাজিত হযেছিলেন তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে। মাঝে মিশিগানের স্টেট সিনেটর হ্যানসেন ক্লার্ককে বাংলাদেশিরা মাতামাতি করলেও বিয়ানিবাজারের পিতার ঔরসজাত ক্লার্ক ভারতীয় নাগরিকের ঔরসজাত সন্তান হিসাবেই পরিচিত এবং সেই পরিচয়ই বহন করতেন তিনি। কারন তার পিতা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগে ভারতীয় নাগরিক হিসাবেই মিশিগানে এসে বসবাস করেছিলেন মৃত্যূর আগে পর্যন্ত। এছাড়া স্টেট পর্যায়ে কোন নির্বাচনে নাম সর্বস্ব অংশগ্রহণ করে অনেকেই হাস্যকর ঘটনার জন্ম দিয়েছেন সময় সময়ে।
বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে জন্ম নেয়া মুক্তিযোদ্ধা নজিবুর রহমানের সন্তান শেখ রাহমান চন্দনই প্রথম বাংলাদেশি যিনি স্টেট সিনেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগে নিজেকে ডেমোক্রেট পার্টির একজন শক্তিশালী নেতা হিসাবে গড়ে তুলে পার্টির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে জায়গা করে নেন কার্যকরীনির্বাহী সদস্য হিসাবে। শুধু তাই নয় শেখ রহমান ডেমোক্রেট পার্টির স্থায়ী সুপার ডেলিগেট হিসাবে দলটির নীতি নির্ধারনী বিষয়ে ভূমিকা রেখে আসছিলেন।
আমেরিকার কোন স্টেটের সবোর্চ্চ আইন পরিষদ সদস্য স্টেট সিনেটর) হয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশি হিসাবে ইতিহাস গড়ার পথে জর্জিয়া স্টেট সিনেটের ডিস্ট্রিক্ট-৫ নির্বাচনী এলাকা থেকে মিডটার্ম ইলেকেশনে নির্বাচিত নির্বাচিত হন শেখ রহমান চন্দন গত ২২ মে অনুষ্ঠিত প্রাইমারীতে চার হাজার দুই ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে। প্রাইমারীতে চার চারবারের নির্বাচিত সিনেটর কার্ট থম্পসন পান ১ হাজার ৮৮৮ ভোট। আর ৬ নভেম্বরের নির্বাচনে শতভাগ ভোট (৩১,৯০৫) পান তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে। এর আগে ২০১২ সালে জর্জিয়া স্টেট রিপ্রেটিভ হিসাবে এবং ২০১৪ সালে স্টেট সিনেটর হিসাবে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে অংশ নিয়েছিলেন শেখ রহমান। ১৯৮১ সালে আমেরিকায় এসে নর্থ ক্যারোলাইনায় লেখাপড়া করার সময়ে ডিশওয়াশারের কাজ করে পড়ার খরচ সংকুলান করলেও আজকে তিনি স্বচ্ছল ব্যবসায়ী এবং ডেমোক্রেট পার্টির শক্তিশালী ডোনার। ১৯৯৫ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব পাবার পর জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিসিটি থেকে অর্থনীতি ও গ্লোবাল স্টাডিজে আন্পার গ্র্যাজুয়েশন করেন। ২০০৮ সালে রাজনীতিতে জড়ান নিজেকে। যোগ দেন ন্যাশনাল একশন নেটওয়ার্ক, সিভিল লিবার্টি ইউনিয়ন ওডেমোক্রেটিক পার্টিব জর্জিয়ায়।
তার বিজয়কে আমেরিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটির বিজয় অ্যাখ্যা দিয়ে শেখ রহমান চন্দন বলেন, আমেরিকায় আমাদের উজ্জল ভবিষতের সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটাকে কাজে লাগাতে আমাদেরকে মূলধারার রাজনীতি করতে হবে মন-প্রাণ দিয়ে। বাংরাদেশকে আমরা ভালবাসবো কিন্তু এখানে বাংলাদেশের রাজনীতি করবো না। আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হলে আমেরিকান রাজনীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে যেমন চলছে অন্যান্য কমিউনিটি।
শেখ রহমান চন্দন আরও বলেন, অনেকে মূলধারার রাজনীতির নামে ফটো সেশনের যে রাজনীতি করেন তা দিয়ে সত্যিকার অর্থে কিছু অর্জন করা সম্ভব না। এসব লোক দেখানো তথাকথিত মূলধারার রাজনৈতিকরা মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। এছাড়া অমুক এসোসিয়েশন তমুক সমিতি সমিতি করে মূলধারার রাজনীতিতে কোন ভূমিকা রাখা যায় না। মূলধারা রাজনীতি করতে হলে তা করতে সরাসরি। একই সাথে দেশী পলিটিক্স ও সমিতি-সংগঠন করে মূলধারার রাজনীতি করার কথা যারা বলেন তারা হিপোক্রেট। আর আমি যা বিশ্বস কির তাই বলছি এবং তাতে কেউ মন্ক্ষুন্ন হলে আমার করার কিছু নেই।
বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করেন শেখ রহমান চন্দন। কিশোর বয়সে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানী আর্মির হাতে ধরা পড়ার কথা স্মরন করে শেখ রহামন চন্দন বলেন, আমার বাবা ছিলেন ‘আগরতলা জয়বাংরা যুব শিবির’র ক্যাম্প সুপারভাইজার। সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনিং নিত। আমার ভাই ও বোনও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু আমার বয়স অনুমোদন না করায় আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি। নিজের চাচা মুসলিম নেতা তাকে পাকিস্তান আর্মির কাছে ধুরিয়ে দেন বলে বিশ্বাস শেখ রহমানের। তিনি বলেন, সেদিন আমি স্থানীয় বাজার এলাকা দিয়ে আসছিলাম। পথে আমার চাচাকে দেখি। এর কয়েক মিনিট পর আমাকে আর্মিরা ধরে নিয়ে যায়। আমার বিশ্বাস চাচা আমাকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন ওদেরকে। অবশ্য সেদিনই ছাড়া পান বাবর তথ্য জানানোর মুচলেকা দিয়ে। কিন্তু পাক বাহিনী কয়েকদিন পরেই তাদের বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। আর সইে বাড়ীতেই রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে। শেখ রহমান বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাাষণ শুনেছেন উপস্থিত থেকে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এবং এ নিয়ে তিনি গর্বিত।
স্বাধীনতায় তার বাবা নজিবুর রহমান বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড ইন পদে কর্মরত ছিলেন। বাবাকে ২০ বছর আগে হারালেও বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা তার সকল কাজ ও সাফল্যের অনুপ্রেরণা বলেছেন শেখ রহমান চন্দন।