প্রবাস মেলা ডেস্ক: মরদেহ ও অসুস্থ’ যাত্রী পরিহন এবং ব্যাগেজ জটিলতা নিরসনে অবিলম্বে ওমানের মাস্কাট রুটে বাংলাদেশ বিমানের বড় উড়োজাহাজ চালুর আহবান জানিয়েছে চট্টগ্রাম সমিতি ওমান। এ জন্য বিমান মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ওমানপ্রবাসীদের কল্যাণে নিয়োজিত সংগঠনটি।
প্রায় ৬ মাস এই রুটে বিমানের বড় উড়োজাহাজ বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে আছে ওমানপ্রবাসী প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি। হিমঘরে মরদেহের দীর্ঘ সারি আর হাসপাতালের বিছানায় অপেক্ষায় থাকা অসুস্থ প্রবাসীদের আর্তনাদেও টনক নড়ছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের। রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির চরম উদাসীনতা মানবেতর পরিস্থিতি মোকাবেল করতে হচ্ছে ওমানের রেমিটেন্সযোদ্ধাদের।
২৩ জানুয়ারি ২০১৯ বুধবার এক বিবৃতিতে এই আহবান জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী সিআইপি ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী তাপস বিশ্বাস।
বিবৃতিতে বলা হয়, চাহিদা পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-মাস্কাট রুটে সপ্তাহে তিনদিন ৪১৯ আসনের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এবং বাকি ৩ দিন ১৬২ আসনের বোয়িং ৭৩৭ চলাচল করে থাকে। প্রতিবছর হজ মওসুমে হাজিদের সুবিধার্থে বড় উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয় এবং হজ শেষে আবার আবার চালু করা হয়। কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় গত হজ মওসুমে মধ্য জুলাই থেকে এই রুটে বোয়িং ৭৭৭ বন্ধ রাখা হয়। হজ শেষে ২৭ আগস্ট থেকে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। আশা করা হয়েছিল অক্টোবর প্রথম সপ্তাহ থেকে ওমান রুটে আবার বড় উড়োজাহাজ শুরু হবে। স্থানীয় বিমান কর্র্তৃপক্ষও তেমনটি আশ্বাস দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা আর চালু হয়নি। সপ্তাহে সাতদিনই চলছে বোয়িং ৭৩৭। ফলে গত প্রায় ৬ মাস ধরেই সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে ওমানপ্রবাসীরা।
সরকারি নিদের্শনা মোতাবেক বাংলাদেশ বিমান বিনামূল্যে প্রবাসীদের মরদেহ পরিবহন করে। এই সুবিধায় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ বিমান করেই দেশে প্রবাসীদের মরদেহ পাঠানো হয়। এখন সপ্তাহে সাতদিনই বোয়িং ৭৩৭ চলাচল করায় সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বোয়িং ৭৩৭ দিয়ে এইরুটে চলাচলকারী বাংলাদেশের বেসরকারি বিমানসংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের মরদেহ পরিবহনের সক্ষমতা নেই। তারপরও এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সমিতির অনুরোধে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ বেশ কয়েকটি মরদেহ বিনামূল্য দেশে পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছে এবং করছে। কিন্তু সংস্থাটির ১৮৬ আসনের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে সব সময় মরদেহ সংকুলান করা সম্ভব হয় না। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বিদেশী বিমানসংস্থার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে ওমানপ্রবাসীদের। কিন্তু বিদেশী বিমানে ১৭০ ওমানী রিয়াল (বাংলাদেশী প্রায় ৩৭ হাজার টাকা) চার্জ গুনতে হয়। প্যাকেজিং ও প্রসেসিংয়ের জন্য ৩০০ ওমানী রিয়াল (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৬৬ হাজার টাকা) দিতেই যখন শ্রমিক শ্রেণী এবং অসহায় ও দুঃস্থ প্রবাসীদের সামর্থ্য কুলায় না সেখানে বাড়তি ৩৭ হাজার টাকা চার্জ কিভাবে দিতে পারেন। প্যাকেজিং ও প্রসেসিংয়ের অর্থ যোগানের ক্ষেত্রে দূতাবাস, চট্টগ্রাম সমিতিসহ বাংলাদেশি সংগঠনগুলো এবং কমিউনিটির বিত্তবানরা প্রতিনিয়ত সাহায্য করে যাচ্ছে। কিন্তুু এখন বিদেশি বিমানের বাড়তি চার্জ যোগাতে সবারইতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। মাসে গড়ে ৬০/৭০টি মরদেহে দেশে আসছে।
এ ছাড়া এমিরাত, কাতার এয়ারওয়েজের মতে বিদেশী বিমানের ট্রানজিটের কারণে দীর্ঘযাত্রার ঝক্কি মরদেহ বা অসুস্থ’ রোগীর ক্ষেত্রে অনেক পীড়াদায়ক জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি দুর্গতি চট্টগ্রামগামী প্রবাসীদের। কারণ সব বিদেশী বিমান শুধু ঢাকায় অবতরণ করে। ফলে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে মরদেহ চট্টগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে আসতে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট পেরিয়ে দীর্ঘযাত্রার পর গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত মরদেহ পৌছানো পরিবারের জন্য কতটা কষ্ঠকর তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। রেমিটেন্স যোদ্ধএই যাত্রার এমন পরিণতি কোনভাবেই গ্রহন যোগ্য হতে পারে না।
বলা প্রয়োজন ওমানের ৮ লাখ প্রবাসীর ৬৫ ভাগই চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ। যার কারণে বিমানসহ দেশের সবকয়টি বিমানসংস্থা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়েই ওমান যাতায়াত করে। এভিয়েশন আইনুয়ায়ী বিদেশী বিমানগুলো সেই সুবিধা পায় না।
এসব সংকট নিরসনে ওমানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষ থেকে বারবার যোগাযোগ ও তাগাদা দিয়েও কোন কাজ হয়নি উল্লেখ করে সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৬ মাসে বাংলাদেশ বিমানবহরে দুটি ড্রিমলাইনার যুক্ত হয়েছে। আর এ সময়ের মধ্য নতুন কোন রুটও চালু হয়নি। কাজেই কি যুক্তি এ রুটে বড় উড়োজাহাজ বন্ধ রাখা হয়েছে তা কারো বোধগম্য নয়। সরকার যখন রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে প্রবাসীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি সেখানে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষের এমন উদসীনতা প্রবাসীদের দারুণভাবে পীড়িত করছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধার শেষযাত্রা আর স্বদেশ ফেরার এমন পরিনতি কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।
তাই চট্টগ্রাম সমিতি ওমান ৮ লাখ প্রবাসীর পক্ষে এ বিষয়ে বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করছি। সপ্তাহে অন্তত ২/৩ টি ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজের ব্যবস্থা করলেই সংকট নিরসন গয়ে যাবে। বিষয়টির গুরুত্ব উপলদ্ধি করে জরুরীভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশাবাদী চট্টগ্রাম সমিতি ওমান।
প্রসঙ্গতঃ ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম সমিতি ওমান একটি অরাজনৈতিক, অসম্প্রদায়িক, অলাভজনক এবং সেবাপ্রদানকারী সংগঠন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিয়োজিত রয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যান আর আর্তমানবতার সেবায়। শুধু চট্টগ্রাম অঞ্চল নয় ওমানপ্রবাসী বাংলাদেশের সকল অঞ্চলের মানুষকে এই সেবা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত সমিতি ৪০ জন অসহায় ও দুঃস্থ প্রবাসীর মরদেহ নিজ খরচে দেশে পাঠিয়েছে এবং অসংখ্য অসুস্থ অসহায় প্রবাসীদের চিকিৎসা সহযোগিতা দিয়েছে। এছাড়া নানা মামলায় জেলে থাকা প্রবাসীদের দেশে ফেরার টিকেট, মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়াসহ নানা সহযোগিতায় জন্য এই সমিতি হয়ে উঠেছে ওমান প্রবাসীদের আস্থার ঠিকানা।