মোস্তফা ইমরান রাজু, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া থেকে :ঈদের আগের রাতটাকে ছেলেবেলা থেকে পালন করে এসেছি চাঁদ রাত হিসাবে। ঈদ আনন্দের শুরুটা হয় চাঁদ রাতের সন্ধা থেকে। ঈদ আসলে আমাদের প্রবাসীদের বেশি মন খারাপের শুরুটাও হয় এ রাত থেকে। যখন জানতে পারি ছোটবেলার খেলার সঙ্গী, বন্ধু কিংবা পাশের বাড়ির ভাই ঈদ উদযাপনে ঘরে ফিরেছে তখন নিজেকে সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ে। নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি চলে আসে। খুব ইচ্ছে হয় গ্রামে ফিরে যেতে। মা-বাবা, আত্মীয় স্বজন আর বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। বুকে বালিশ চাপা দিয়ে কতো চাঁদ রাতে যে অঝোরে কেঁদেছি তার ইয়াত্তা নেই।
প্রায় ৮ বছরের প্রবাস জীবনে ১ বার রোজার ঈদ পালনের সৌভাগ্য হয়েছে বাড়িতে। বাকি ঈদগুলো মালয়েশিয়ায় কেটেছে। কখনও ভিসা জটিলতা, কখনও পরিবারের চাহিদা মেটাতে বাড়ি ফেরা হয়নি। আমার আশপাশে লাখো প্রবাসী রয়েছে যারা বছরের পর বছর শুধুমাত্র পরিবার’কে খুশি রাখতে গিয়ে বাড়ি ফিরে যায়নি। প্রবাস জীবনে এই প্রবাসীরাই আমার সান্ত্বনা। একজন প্রবাসী জীবনে কতটা ত্যাগ শিকার করে তা নিজে প্রবাসে না থাকলে হয়তো কখনই বুঝতাম না।
খুব মনে পড়ছে ঈদের আগের সন্ধায় বাজারের মধুর মোড় কিংবা হাইস্কুল মোড়ে সব বন্ধুরা একত্রিত হওয়ার দিনগুলোর কথা। আড্ডা দিতে দিতে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত সেলুনিতে একে একে সিরিয়াল দিয়ে চুল কাটাতাম কিংবা সেইভ করায় ব্যস্ত থাকতাম। সেই রাতে ঘুম খুবই কমই হতো। কোরবানির ঈদের নামাজ বেশি সকালে হওয়ায় খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হতো। মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে। ঝলমলে কুয়ালালামপুর শহরেও নিরাবতা নেমে এসেছে। বেশিরভাগ মালয়েশিয়ান গ্রামে কোরবানি ঈদ পালন করে থাকেন। শহর তাই অনেকটাই ফাঁকা। ঈদের মাঠে নামাজ আদায় করবে বেশিরভাগই প্রবাসী। একে অন্যের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করেই কাটবে এবারের ঈদ উল আজহা। করোনার বছরগুলোতে আমরা ঘরবন্দি ঈদ উদযাপন করেছি। এবার বিধিনিষেধ কম থাকায় মসজিদে মসজিদে নামাজ আদায়ের সুযোগ মিলেছে।