রফিক আহমদ খান, সিঙ্গাপুর ঘুরে এসে,
দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় মালয়েশিয়ায় প্রবাসজীবন কাটালেও মালয়েশিয়ার পাশের দেশ সিঙ্গাপুরে যাওয়া হয়নি আগে। এবার সে অপূর্ণ স্বাদ মেটার সুযোগ নিয়ে মাত্র দুদিনের জন্য সিঙ্গাপুর গেলাম। মালয়েশিয়া থেকে ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা লাভ করে চরম উন্নতি লাভ করে ছোট্ট এই নগর রাষ্ট্রটি। সিঙ্গাপুরের উন্নতির গল্প নয়, সিঙ্গাপুর ভ্রমণের সংক্ষিপ্ত কাহিনী বলার জন্য এই লেখা।
সিঙ্গাপুরে বেড়াতে গিয়ে প্রথম যে ঘটনা ঘটেছে তা হলো চাঙ্গি এয়ারপোর্টে হারিয়ে যাওয়া। আমাকে রিসিভ করার জন্য গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন দেশটিতে বসবাসরত আমার এক আত্মীয়। এয়ারপোর্টে পৌঁছে ইমিগ্রেশন পেরিয়ে এক বাংলাদেশির মোবাইল থেকে ইসমাঈলকে (আত্মীয়) কল করে বললাম, আমি এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনের বরাবর বাইরেই আছি। আপনি এখানে আসেন। আধা ঘন্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে ওনাকে না দেখে আরেক বাংলাদেশি খুঁজে কল দিলাম। বাংলাদেশির ফোনে ওনার নাম্বার সেভ করে হোয়াটসঅ্যাপে আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি সে জায়গাটির বিভিন্নভাবে ছবি তুলে পাঠালাম। ইতিমধ্যে চাঙ্গি এয়ারপোর্ট আমার কাছে খুব ছোট মনে হয়েছে। তাই খুঁজে না পাওয়ার কারণ বুঝিনি। আরো আধাঘন্টা পরে অবশেষে ওনি আমাকে খুঁজে পেলেন। কিন্তু, ঘটনা সেখানেই শেষ হয়নি। এবার খুঁজে পাচ্ছিলেন না ওনার গাড়ি। তাড়াতাড়ির মধ্যে কোন পার্কিং এ গাড়ি রেখেছেন এবং সেটি কোন দিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার সাথে হেঁটে কারপার্ক খুঁজতে গিয়েই আমি আবিষ্কার করলাম চাঙ্গি এয়ারপোর্টের বিশালতা। সেই বিশালতা দেখেছি সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসার সময়ও। আসার সময় তিন নাম্বার টার্মিনালে প্রবেশ করে মালয়েশিয়ান বিমান মালিন্দো এয়ারে বুকিং শেষে অটোমেটিক ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে বিমানে উঠার ওয়েটিং জোনে যেতে তিন চারশ মিটার পথ চলতে হয়েছে। যদিও এর মাঝেমাঝে স্কেলেটার আছে, পায়ে বেশি হাঁটতে হয়নি। এয়ারপোর্টটিতে অনেকগুলো টার্মিনাল। আমি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে আমার টার্মিনাল নাম্বার না বলার কারণেই আমাকে খুঁজে পেতে এতো সময় লেগেছিল। যাক, প্রায় পনের বিশ মিনিট খোঁজাখুঁজির পর আমরা গাড়ি পেয়েছিলাম। এরপর আমরা শহরের পথ ধরেছি সাঁই সাঁই আওয়াজে গাড়ি চালিয়ে।
এয়ারপোর্টে দ্বিতীয় যে বাংলাদেশি ভাইয়ের মোবাইল ব্যবহার করেছি ফাঁকে তার কথা একটু বলি, আলাপে জেনেছি সে এয়ারপোর্টের বাইরে কাছাকাছি কোনো এক নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেন। দীর্ঘ পনের বছরের বেশি সিঙ্গাপুরে কর্মরত সে বাংলাদেশি এখন সাইটে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেন। কর্মীদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে সে এয়ারপোর্টের ভেতরে এয়ারকন্ডিশনে বসে আরাম করে, আর এয়ারপোর্টের ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করে অনলাইনে দেশে কথা বলে। কন্সট্রাকশনের কাজের পোশাক গায়েই সে প্রতিদিন এয়ারপোর্টের ভেতরে বসে আরাম করে। কোনো রকম জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হয় না! সে বলল, “খুব ভালো আছি ভাই”।
সিঙ্গাপুরের মুস্তাফা সেন্টার যেন এক খন্ড শান্তশিষ্ট বাংলাদেশ! যেই বাংলাদেশে গাড়ির হর্ণ নেই, জ্যাম নেই, ময়লা নেই, ধাক্কাধাক্কি নেই, মারামারি নেই, মিছিল নেই! চাঙ্গি এয়ারপোর্ট থেকে ইসমাইল ভাইয়ের গাড়ি করে যখন মূল শহরের দিকে যাচ্ছি, হাতের বাম পাশেই দেখা যাচ্ছে সমুদ্র; আর সমুদ্রের বুকে ভাসছে জাহাজ। একদম আমাদের চট্টগ্রামের মত! চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে মূল শহরের দিকে যেতে হয় ঠিক এমনই সমুদ্র আর নদীর পাশ দিয়ে। পার্থক্য হচ্ছে সৌন্দর্য, যে সৌন্দর্য মানুষের হাতে গড়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হয়ত আমাদের চট্টগ্রামেই বেশি। সৌন্দর্য লালন করার স্বক্ষমতা আমাদের নেই বলে ফুটিয়ে তুলতে পারছি না আমরা। সারি সারি বড় বড় গাছ আর নানা রঙের ফুলে ফুলে সিঙ্গাপুরে চাঙ্গি এয়ারপোর্টের সড়কটি কত সুন্দর করে রেখেছে, তা না-দেখলে কল্পনাও করা যাবে না। সিঙ্গাপুর শহরের সুন্দর দেখতে দেখতে ইসমাইল ভাই নিয়ে এলেন নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা মুস্তাফা সেন্টার। মুস্তাফা সেন্টার রাতদিন চব্বিশ ঘন্টা খোলা ব্যস্ততম একটি বড় সুপার মার্কেট হলেও এর চারিপাশের বিভিন্ন সড়ক নিয়ে পুরো এলাকাটি ‘মুস্তাফা’ নামে পরিচিত। আর ‘মুস্তাফা’ মানেই যেন এক টুকরো মনের মতো বাংলাদেশ! মনের মতো বলার কারণ হলো আমরা আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ প্রিয় বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, ‘সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শান্তশিষ্ট বাংলাদেশ’ ঠিক সেই রকম। এখানে বিভিন্ন সড়কে অনেক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট, মুদির দোকান, সবজির দোকান, মাছ-মাংসের দোকান, ট্রাভেল এজেন্সি, কুরিয়ার সার্ভিস, ফোনের দোকান সহ বিভিন্ন প্রকারের দোকান। সন্ধ্যা হলেই মুস্তাফা এলাকায় বাড়তে থাকে বাংলাদেশিদের আনাগোনা। কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া, আড্ডায় জমজমাট থাকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার ও পাবলিক হলি ডে গুলোতে হাজার হাজার মানুষের (বাংলাদেশি) ঢল নামে মুস্তাফায়। দেখে মনে হবে এটি সিঙ্গাপুর নয়, যেনো ছোট্ট এক মনের মতো বাংলাদেশ।
এখানে বাংলাদেশিরা দোকান করা পাশের দেশ মালয়েশিয়ার মত ঝামেলাপূর্ণ মনে হয়নি। বৈধ কাগজপত্র নিয়েই দোকানপাট করছে বাংলাদেশি প্রবাসীরা। সিঙ্গাপুরে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি প্রবাসীর প্রায় শতভাগ বৈধ; অবৈধ খুব-সামান্যই। তাই প্রবাসীরা বুক ফুলিয়ে হাঁটতে পারেন। মালয়েশিয়ার মত পুলিশ-ইমিগ্রেশনের অহেতুক ঝামেলা নেই, হয়রানি নেই, ভয় নেই। মালয়েশিয়ার মতো এখানেও বাংলাদেশি সব জিনিসপত্র পাওয়া যায়। মালয়েশিয়ায় দোকানে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড দেওয়া না গেলেও সিঙ্গাপুরে সব কটি বাংলাদেশি দোকানে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড আছে। সবগুলো বাংলাদেশি দোকানে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড দেখে মনেই হচ্ছে না দেশের বাইরে আছি। সিঙ্গাপুরে প্রথম খাবারই খেলাম ঢাকার ঐতিহ্যিবাহী সেই ‘ফখরুদ্দীন বিরিয়ানি’। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন দেখলাম, মুস্তাফা এলাকায় বিভিন্ন রাস্তার পাশে আর মাঠের মতো একটা খালি জায়গায় অসংখ্য বাংলাদেশি আড্ডা দিচ্ছেন, তাদের অনেকের হাতে হাতে কোমল পানীয়র বোতল। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে নিচে, মানে মাটিতে কোনো খালি বোতল বা মোড়কজাতীয় খাবারের কোন খালি মোড়ক পড়ে নেই! বোতল বা মোড়ক খালি হওয়ার সাথে সাথে নিকটস্থ ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছেন বা কথা শেষ করে ডাস্টবিন খুঁজে ফেলবেন বলে খালি বোতল বা মোড়ক হাতে রেখেই গল্প করছেন। এই হলো সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ‘সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ ‘ দেখলাম টানা দুই দিন।
আহা! পরের দেশকে আমরা কত সুন্দর করে রাখি। নিজের দেশে শপিংমলে হাঁটতে হাঁটতে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে টিস্যুটি যেখানে কাজ শেষ সেখানেই ছুঁড়ে ফেলে দিই! খালি বোতল আর মোড়ক যেখানে সেখানে ফেলে সারা শহরকেই ডাস্টবিন বানিয়ে রাখি।
প্রথম দিন রাতে ঘুরে দেখলাম ‘মেরিনা বে’। উপসাগর ঘিরে চমৎকার সব সুউচ্চ ভবনে ঘেরা ‘মেরিনা বে’দেশটির প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার পাশাপাশি প্রধান পর্যটন কেন্দ্রও। অপূর্ব সুন্দর মেরিনা বে’র চারপাশে একবার পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে সময় লেগেছে দু’ঘন্টার বেশি। ভালো করে দেখে উপভোগ করতে গেলে পুরো একটা দিন কাটিয়ে দিলেও দেখার শেষ হবেনা মেরিনা বে’র সৌন্দর্য। মেরিনা বে’তে লেকের পাশে পাতানো বেঞ্চে শুয়ে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পুরো রাত কাটিয়ে দিতে পারেন আপনি। হঠাৎ বৃষ্টি নেমে আসলেও ভয় নেই! পাশে ‘মেরিনা বে সেন্ডস”র কেসিনোতে ডুকে ফ্রী চা কপি বা কোমলপানীয় পান করতে পারেন। মেরিনা বে পৃথিবীর বুকে চমৎকার এক জায়গা। দেখার জন্য বারবার আসতে মন চাইবে।
সিঙ্গাপুর পৃথিবীর ব্যয়বহুল একটি দেশ। সিঙ্গাপুর বেড়াতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যয়বহুল দেখেছি হোটেল। সিঙ্গাপুরে হোটেল ভাড়া খুব বেশি। মালয়েশিয়ায় পাঁচ তারকা হোটেলের ভাড়ার কাছাকাছি সিঙ্গাপুরের বাজেট হোটেলের ভাড়া। দেশে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অনলাইনে কমমূল্যে দুই রাতের জন্য বাংলাদেশি নয় হাজার টাকায় হোটেলের রুম ভাড়া করেছি। সিঙ্গাপুরে গিয়ে দুই রাতের নয় হাজার টাকা ভাড়ার হোটেলে রুম নয় ডর্মেটরিতে ওপরের একটি আসন পেয়েছি। ওপরের আসনটির প্রবেশ পথ দেখে মনে হলো পাখির বাসা। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই পাখির বাসার কোয়ালিটি ছিল অত্যন্ত উন্নত মানের। একেবারে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর একটি ডর্মেটরি। চাইনিজ প্রধান সিঙ্গাপুরের মালয় এলাকা বুগিসের মসজিদ সুলতানের সামনের সেই ডর্মেটরি হোটেলে দুইরাত কাটিয়ে ভালোই লেগেছিল। সিঙ্গাপুরের সব জায়গায় সবুজ গাছপালায় ভরপুর। বুগিস এলাকায়ও সবুজের কমতি নেই। বুগিসে মসজিদ সুলতানের সামনে বুসোরাহ স্ট্রিট নামের সেই সড়কে আছে অনেকগুলো আরবিক ও মালায় রেস্টুরেন্ট। বিভিন্ন দেশ থেকে সিঙ্গাপুরে বেড়াতে আসা মুসলিম পর্যটকরা খাওয়া-দাওয়া এবং আড্ডায় মধ্যরাত পর্যন্ত মুখরিত করে রাখে এলাকাটি। রেস্টুরেন্টের ভেতরে নয়, বাইরে পাতানো চেয়ার টেবিলে দীর্ঘ সময় বসে খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি এখানে চলে মালয়, আরবি ও ইংরেজি গানের আসর। উপভোগ করার মত একটি জায়গা ; ভালই লাগলো। সিঙ্গাপুরে প্রায় জায়গায় দেখা যায় মালায় ও চাইনিজ দুই ধরণেরই মালয়েশিয়ান খাবারের দোকান। সিঙ্গাপুরিয়ান খাবারের পাশাপাশি মালয়েশিয়ান জনপ্রিয় সে দেশে।
সিঙ্গাপুর ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন ইসমাঈল ভাই নিয়ে গিয়েছিলেন ‘সেন্তোসা’। সিঙ্গাপুর ভ্রমণকারী পর্যটকদের জন্য অন্যতম আর্কষণীয় স্থান সেন্তোসা আইল্যান্ড। অসম্ভব সুন্দর পর্যটন এলাকা সেন্তোসা। সেখানে আঁকাবাঁকা সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে পরিষ্কার নীল জলের দিকে তাকালে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সৈকতের এক বাঁকে আছে পাথর বাঁধানো, পাশেই ডাল ছড়িয়ে আছে বড় বড় নানান গাছ; সমুদ্র সামনে নিয়ে গাছের শীতল ছায়ায় পাথরে বসে ঝিরিঝিরি বাতাস গায়ে মেখে হাতে থাকা কিছুটা সময় সুখেই কাটিয়ে দেওয়া যায় সেখানে। একাদিক বীচ, ছোট ছোট উপদ্বীপ, ফাইভ স্টার হোটেল, রিসোর্ট ওয়াল্ড, থিমপার্ক, শপিং মল, ফোটকোর্ট, বিভিন্ন প্রকারের রেস্টুরেন্ট, ইউনির্ভাসেল স্টুডিও, পিকনিক স্পট সহ বিনোদনের বহু ব্যবস্থা আছে সেন্তোসা’য়। টানা দুয়েকটা দিন সেন্তোসায় কাটিয়ে দিলেও আরো থাকতে মন চাইবে সেন্তোসায়।
মালয়েশিয়ায় চায়নাটাউনে থাকি; সিঙ্গাপুর গিয়ে ওখানকার চায়নাটাউন না দেখলে কি হয়! ঘুরে এলাম সিঙ্গাপুরের চায়নাটাউন। মালয়েশিয়ার চায়নাটাউনে অসংখ্য বাংলাদেশি থাকলেও সিঙ্গাপুরের চায়নাটাউনে একজন বাংলাদেশির দেখাও মিলে নি। স্থানীয় চাইনিজ দোকানদার ও পর্যটকে ভরপুর সিঙ্গাপুর চায়নাটাউন।
ইসমাঈল ভাই গাড়ি চালাতে চালাতে এক সময় মাটির নিচে টানেল দিয়ে যাচ্ছিলেন। এতো দীর্ঘ বহুমুখী টানেল না দেখে গেলে সিঙ্গাপুর ভ্রমণ বৃথা হয়ে যেত, এই কথা বলে ওনাকে ধন্যবাদ দিয়েছি টানেল দিয়ে আসার জন্য।
পুরো সিঙ্গাপুরে বাইরে তেমন গাড়ি পার্কিং নেই। বেশির ভাগ গাড়ি পার্কিং ভবনের নিচে। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে কোনো ভবনের পার্কিং এ গাড়ি রাখা যায়। সেটা হোক ফাইভ স্টার হোটেল, বড় কোম্পানির কর্পোরেট অফিস ভবন বা দামী কোনো কনভেনশন সেন্টার। পার্কিং চার্জ অটোমেটিক কেটে নেওয়া হয়। সড়কের টোলও অটোমেটিক কেটে নেওয়া হয়। বড় বড় ভবন গুলোতে কোথাও তেমন কোনো নিরাপত্তা কর্মীও নেই। সবকিছু অটোমেটিক, যান্ত্রিক। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে দেশটির জনগণ আইনের বাইরে, নিয়মের বাইরে চলে না। সেখানে অধিকাংশ সড়কই চার লাইনের। মানুষ রাস্তা পার হবে, রাস্তায় গাড়ি নেই তারপরও পারাপারে বিরতি, ঠাই দাঁড়িয়ে আছে ; যতোক্ষণ না পায়ে হেঁটে রাস্তা পারাপারের সবুজ সংকেত জ্বলে ওঠে নি। রাস্তায় গাড়ি থাকুক বা না-থাকুক পায়ে হেঁটে রাস্তা পারাপারের সবুজ সংকেত জ্বলে উঠলেই কেবল পথচারী রাস্তা পার হবে। অথচ মালয়েশিয়ার মত দেশেও আমরা গাড়ির মাঝখান দিয়ে দৌঁড়ে রাস্তা পার হয়ে যায়! কোটি টাকা হাতে নিয়ে ঘুরলেও নিরাপদ থাকবেন দেশটিতে; সে পুরুষ হোক বা নারী। সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের কাছে কোনো বিষয়ে জানতে চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয় নি। ওরা আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা করেন পর্যটকদের। সবকিছু মিলে সাজানো গোছানো শৃঙ্খল চকচকে তকতকে প্রযুক্তি নির্ভর অসাধারণ-চমৎকার এক দেশ সিঙ্গাপুর।
(লেখক পরিচিতি: মালয়েশিয়া প্রবাসী সাংবাদিক)