প্রবাস মেলা ডেস্ক: ‘মঞ্চের আলোয় জেগে উঠুক সাহস নিয়ে সত্য’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে ঢাকা চন্দ্রকলা থিয়েটার পদক ২০২৪ প্রদান ও আজব বাক্স নাটকের ৩০০ তম প্রদর্শনী চন্দ্রকলা থিয়েটার ঢাকা’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার ঢাকাস্থ দনিয়া স্টুডিও থিয়েটার হলে বিকেল ৫ টায়।
এবারের চন্দ্রকলা পদক ২০২৪ পাচ্ছেন চাঁদপুর শাহরাস্তি উপজেলার পৌর ১১ নং ওয়ার্ড আলোকিত কৃষ্ণপুর পাটোয়ারী বাড়ির কৃতি সন্তান শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী যুব ও মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সৌদি আরব রিয়াদ বাংলাদেশ থিয়েটার এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য, শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সম্মানিত সহ-সভাপতি, সৌদি আরব বাংলাদেশ প্রবাসী সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত), চাঁদপুর বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সম্মানিত সদস্য, চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, রোটারি ক্লাব অব চাঁদপুর হিলশা সিটির চাটার মেম্বার- বিশিষ্ট সাংবাদিক, নাট্যকার, নির্দেশক, কবি, অভিনেতা রোটারিয়ান মো” জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়।
উল্লেখ্য, রোটা: মো: জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় ১৯৯০ সাল থেকে গণমাধ্যম কর্মী, মঞ্চকর্মী সহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন, তাহার মরহুম পিতা আব্দুল খালেক পাটোয়ারী চাকরির সুবাদে তিনি চট্টগ্রাম থেকেই মূলত গণমাধ্যম কর্মী, থিয়েটার কর্মী এবং সামাজিক কর্মকান্ড শুরু করেন।
এরপর ১৯৯৬ সালে চাঁদপুর শাহরাস্তি উপজেলায় কোন নাট্য বা সংস্কৃতি সংগঠন না থাকায় অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী যুব ও মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রকার অনুদান ছাড়াই ব্যক্তিগত অর্থ এবং সদস্যদের মাসিক বেতনের থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে নাট্য চর্চা শুরু করেন।
শুরুতেই নাটক মঞ্চস্থ করা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বাধার সম্মুখীন হন। সকল বাধাকে উপেক্ষা করে তিনি সফলতার সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে অপরূপা নাট্যগোষ্ঠীর মাধ্যমে চাঁদপুর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায়, শাহরাস্তি উপজেলার ইউনিয়ন ওয়ার্ডের গ্রামে পথ নাটক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নাটিকা মঞ্চস্থ করেন যেমন- বাল্যবিবাহ যৌতুক প্রথা বন্ধ করা, আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করা, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার করা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ ও সমাজ গড়তে জনসচেতনামূলক বহু নাটক ও নাটিকা মঞ্চস্থ করেছেন।
বর্তমানে অপরূপা নাট্যগোষ্ঠীর সদস্যরা বিভিন্ন পর্যায়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে, অপরূপা নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য, অভিভাবক সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০০ জন।
জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় প্রবাসে চলে গেলেও অপররূপা নাট্যগোষ্ঠীর কার্যক্রম চলমান রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মঞ্চ নাটক করতে গিয়ে আর্থিক অসচ্ছলতা এবং জীবন জীবিকার তাগিদে তিনি ২০০৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে পাড়ি জমান।
প্রবাসে চাকরির পাশাপাশি নিজেকে একাকীত্ব লাগছে, কি করা যায় ভাবতেন-প্রবাসের মাটিতে দেশীয় সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র কোথায় হয় তিনি খুঁজে বেড়াতেন। প্রায় জায়গায় গিয়ে দেখতেন কোনোমতে স্থানীয় শিল্পীরা গান পরিবেশন করতেন।
সংগীত পরিবেশন করলেও সেখানে কোন নাটক চর্চা ছিলনা। তিনি সেসব মঞ্চে আয়োজকদের অনুরোধ করে দেশীয় মঞ্চনাটকের আন্দোলনকে প্রবাসে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ১০ মিনিট, কখনো ৫ মিনিট দর্শকের সামনে একক অভিনয় করে দেখাতেন। এরপর আস্তে আস্তে দীর্ঘ ৭ বছর পর ২০১৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে রিয়াদ বাংলাদেশ থিয়েটার নামক দেশীয় নাট্য সংগঠনের স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে আজও নাট্য চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। কখনো অভিনেতা, কখনো নাট্যনির্দেশক, মঞ্চ নাটক প্রবাসী শ্রমজীবী মানুষদের সামনে প্রদর্শনের জন্য এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন আজও চাকরির পাশাপাশি।
এ কাজে যারা প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে ৫০০ ছিলেন পাশে ছিলেন আজও আছেন তারা হলেন প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নাট্য অভিনেতা আরিফুর রহমান টিটু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মির্জা কামাল, সহ-সভাপতি খালেদ শাহাবুদ্দিন।
বর্তমানে রিয়াদ বাংলাদেশ থিয়েটারে প্রায় ৬০ জন সদস্য এবং অভিভাবক সদস্য রয়েছেন যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতার কারণে নাট্যচর্চা এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান কমিটির সভাপতি কবি মসি সিরাজ, সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুল ইসলাম পলাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: সালাউদ্দিন আহমেদ।
রিয়াদ বাংলাদেশ থিয়েটার যাদের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে তারা হলেন মো: এরশাদ আলী, আব্বাসউদ্দিন, শেখ জামাল, আলমগীর মন্ডল, নাঈম রহমান, রবিউল হোসেন রবি, নাজিম উদ্দিন, মাসুম বিল্লাহ, রফিক মন্ডল, রুবিনা সুলতানা, নুসরাত জাহান পলাশ, মো: সোহেল, ইমদাদ হোসেন প্রমূখ।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে ঢাকা চন্দ্রকলা থিয়েটার পদকে ভূষিত হয়েছেন তারা দেশে বিদেশের সুনামধন্য সাংস্কৃতিক।
ইতিমধ্যে যারা চন্দ্রকলা পদকে ভূষিত হয়েছেন তারা হলেন রামেন্দু মজুমদার (বিশ্ব আই টি আই সান্মানিক সভাপতি), কেরামত মওলা (বিশিষ্ট অভিনেতা), গোলাম কুদ্দুস সভাপতি (সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট), লিয়াকত আলী লাকি (মহাপরিচালক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী -চেয়ারম্যান -বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান), জেসি পালিওয়াল-ভারত–দিল্লি (প্রেসিডেন্ট অল ইন্ডিয়া কালচারাল এসোসিয়েশন), থিলিনি লিভেরা শ্রীলংকা (ডিরেক্টর ও অভিনেত্রী), মো: রাসেল আহমেদ-পর্তুগাল (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব), বিশ্বরুপ চট্টপাধ্যায়- ভারত –কলকাতা (নাট্যকার নির্দেশক ও অভিনেতা), রাজনিশ সাক্সেনা- ভারত উত্তর প্রদেশ (প্রেসিডেন্ট -অল ইন্ডিয়া রিয়েল ফর এডুকেশনাল সোসাইটি)।
রোটারিয়ান ও নাট্যজন মো: জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়কে সম্মাননা পদকে ভূষিত করায় তিনি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকা চন্দ্রকলা থিয়েটার পরিবারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। হৃদয় বলেন: দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাসের মাটিতে, প্রতিটি দেশে মঞ্চ নাটক কে ছড়িয়ে দিতে হবে, সে লক্ষ্যে সকল থিয়েটার কর্মীদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। অনেকেই থিয়েটার জগত থেকে টেলিভিশন জগতে গিয়ে সেলিব্রেটি হয়েছেন, কিন্তু যে মঞ্চ থেকে তিনি উঠে এসেছেন সে কথাই অনেকে আজ ভুলে যাচ্ছেন। যার কারণে মঞ্চ নাটকের পরিধি কমে যাচ্ছে, এটা শুভ লক্ষণ নয়। যারা অতীতকে ভুলে গিয়ে ক্ষণিকের সময়ের জন্য সেলিব্রেটি হিসাবে আলোকিত হলেও পরবর্তীতে বেশিদূর এগোতে পারে না। অতএব অতীতকে মনে রেখে আমাদের চলা উচিত বলে নাট্যজন হৃদয় মনে করেন।