রফিক আহমদ খান:
দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় প্রবাসজীবন কাটালেও দেশে বেড়াতে এসে কখনও কোনো মালয়েশিয়ান নাগরিকের দেখা হয়নি বাংলাদেশে। বাংলাদেশে বসে কোন মালয়েশিয়ান নাগরিকের সাথে মালয় ভাষায় কথা বলার ইচ্ছে ছিলো বহুদিন ধরে। এবার মনের সেই ইচ্ছে পূরণ হলো।
মালয়েশিয়ান কোন সাধারণ নাগরিকের সাথে নয়, খোদ বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ান হাইকমিশনার নুর আশেকিন তাইব’র সাথে মালয় ভাষায় আলাপ করেছি; তা-ও আমাদের চট্টগ্রাম শহরে বসে।
তিনি চট্টগ্রামে এসেছিলেন মিরসরাই ইকোনমিক জোন পরিদর্শনে। মতবিনিময় করেছেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতির সাথেও। ভীষণ ব্যস্ততার মাঝেও তিনি তাঁর বন্ধু চট্টগ্রামের সন্তান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ই-লার্নিং বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল হুদা খান প্রবর্তিত ই-ভ্যান ‘জ্ঞানবাহন-জীবনব্যাপী গণশিক্ষা’ প্রদর্শন করতে এসেছিলেন। ড. বদরুল হুদার ফোন পেয়ে অনুষ্ঠানে ছুটে গেলাম আমিও।
প্রদর্শনী শেষে মালয় ভাষায় আলাপচারিতায় নুর আশেকিন বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর ভালো লাগার কথা জানান। চট্টগ্রামের মানুষের উষ্ণ অভ্যার্থনা ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে তিনি এখানকার মানুষ মালয়েশিয়ার মানুষের মতোই আন্তরিক বলে জানান। তিনি ত্রিশ বছর আগে যখন আমেরিকায় পড়ালেখা করেন, তখন থেকে ড. বদরুল হুদা খানের সাথে তাঁর পরিচয় ও পারিবারিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে, জ্ঞানবাহনের সাথে আগামী দিনেও সম্পৃক্ত থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
আমার ভীষণ ভালো লেগেছে চট্টগ্রামে বসে একজন মালয়ের সাথে মালয় ভাষায় গল্প করে। গর্ববোধ করলাম মালয়েশিয়ান কূটনীতিকের মুখে বাংলাদেশ তথা চট্টগ্রামের প্রশংসা শুনে। কুয়ালালামপুরের মত একটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন উন্নত শহরের নাগরিক হয়েও আমাদের এই ধুলাবালিময় জ্যামের শহরে এসে আনন্দিত তিনি। কোন প্রকার বিরক্তি নেই তাঁর চোখেমুখে। বরং এই শহর ও এখানকার মানুষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি। ভিনদেশে সারাদিন ভিনদেশী ভাষায় (ইংরেজি) কথা বলা মালয়েশিয়ান এই কূটনৈতিক হঠাৎ তাঁর মাতৃভাষায় কথা বলতে পারায় অনেকটা আনন্দিত দেখা গেছে তাকেও।
ইভ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর শেখ মুজিব রোডের মীর বাড়ীতে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনীতে মালয়েশিয়ান হাই কমিশনার নূর আশেকিন তাইব বলেন, এ জ্ঞানবাহন প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের দোরগোড়ায় জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেবে এবং বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে। তিনি জ্ঞানবাহন ও এর উদ্যোক্তা ড. বদরুল হুদা খানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরো কিছু গুণী মানুষ। তাঁরা হলেন ইভ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মীর মাহফুজুর রহমান, সাবেক জেলা লায়ন গভর্নর মোস্তাক হোসাইন, তারেক বিন হোসেন, ডাঃ জাহাঙ্গীর খান, শেখ মোহাম্মদ জুলফিকার, ইভ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহেলা আবেদীন, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিন মহিউদ্দিন আজিম, পরিচালক মুসরাত জেবিন, সুলতানা নূরজাহান রোজী, মিরাজুল হক, মোহাম্মদ শফিকুল আলম, সাইকা তারেক প্রমুখ।
(মালয়েশিয়া প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক)