রানা সাত্তার, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
করোনা রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে চট্টগ্রামে এলাকায় এলাকায় গড়ে উঠছে আইসোলেশন সেন্টার। ইতিমধ্যে সবচেয়ে বড় আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে উঠেছে বন্দর নগরীর আগ্রাবাদে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ২৫০ বেডের আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে তুলেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ইতোমধ্যে সেই আইসোলেশান সেন্টারে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। পুরা দিনব্যাপী আউটডোর ও ইনডোরে চিকিৎসা চলছে। প্রায় ১০০টি বোতলজাত অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে সেন্টারটিতে।
চট্টগ্রামে করোনার চিকিৎসায় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠা আইসোলেশন সেন্টারগুলো অনেক রোগীর জীবন এভাবেই সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে দিচ্ছে। করোনা সন্দেহে বেসরকারি হাসপাতালগুলো যখন রোগীকে ফিরিয়ে দিচ্ছে, চিকিৎসা দিচ্ছেনা, ঠিক তখনই আইসোলেশন সেন্টারগুলো পাশে দাঁড়াচ্ছে, আগলে নিচ্ছে রোগীকে, দিচ্ছে বেঁচে থাকার ভরসা। চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে মোট পাঁচটি আইসোলেশন সেন্টার চালু হয়েছে। এসব সেন্টারে চারশ’র বেশি শয্যা রয়েছে। এছাড়া পতেঙ্গার বিমানবন্দর এলাকায় ১০০ শয্যার একটি আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত হচ্ছে ও বহদ্দারহাট ৫০ শয্যা বিশিষ্ট গাউছিয়া কমিটির তত্বাবধানে আরেকটি আইসোলেশান সেন্টার প্রস্তুত হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আইসোলেশন সেন্টারগুলো সংক্রমণ ঝুঁকি কমাচ্ছে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আইসোলেশনের বিকল্প নেই।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. শায়লা তাসনুভা বলেন, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকাতে আইসোলেশনের বিকল্প নেই। উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে আইসোলেটেড করতে হবে। তাহলেই চট্টগ্রামে আক্রান্ত ঝুঁকি কমবে। আইসোলেশন ঠিকভাবে হলে সংক্রমণ ঝুঁকি কমে যায়। আইসোলেশনের অভাবে চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনেকগুলো আইসোলেশন সেন্টারটি ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে। যেগুলো সংক্রমণ ঠেকাতে ভুমিকা রাখবে।
আগ্রাবাদ এলাকায় আইসোলেশান সেন্টার: করোনার চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে উঠেছে আগ্রাবাদে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ২৫০ বেডের আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে তুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ইতোমধ্যে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আউটডোর ও ইনডোরে চিকিৎসা চলছে। প্রায় ১০০টি বোতলজাত অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে সেন্টারটিতে।
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিসহ কিছু তরুণ-যুবকের প্রচেষ্টায় মাত্র ১২ দিনে হালিশহর এলাকায় গড়ে উঠেছে ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার। ইতোমধ্যে সেন্টারটিতে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে।
নুরুল আজিম রনি বলেন, ”চট্টগ্রামে সরকারি কোনো আইসোলেশন সেন্টার নেই। কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে শয্যাও খালি নেই। ফলে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না। উপসর্গ নিয়ে অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আইসোলেশনের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাই আমরা এই আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে তুলেছি।”
চান্দগাঁও হামিদচর এলাকায় আইসোলেশান: চান্দগাঁও হামিদচর এলাকায় গড়ে উঠা মিনি আইসোলেশন সেন্টারটি নিয়ে চট্টগ্রামে সাড়া জাগিয়েছে। তরুণ ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন একাই আইসোলেশন সেন্টারটি গড়েছেন। হামিদচর এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য পাঁচ শয্যার এই চিকিৎসাকেন্দ্রে অক্সিজেন সিলিন্ডার, পালস অক্সিমিটার, নেবুলাইজারের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন।
বন্দর এলাকায় আইসোলেশান: বন্দর এলাকায় গড়ে উঠা ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারে ইতোমধ্যে সেবা শুরু হয়েছে। এলাকার কিছু চিকিৎসকের উদ্যোগ এবং বিত্তবানদের আর্থিক সহায়তা আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে উঠেছে। আইসোলেশনে সেন্টারটি উদ্যোক্তা ডা. হোসাইন আহমেদ।এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা আউটডোরে সেবা শুরু করেছি। চলতি সপ্তাহে ইনডোরে রোগী ভর্তি শুরু হবে।আশাকরছি কিছু মানুষের দায়িত্ব আমরা নিতে পারবো।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এলাকায় আইসোলেশান: অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সংলগ্ন বাটারফ্লাই পার্কের বিকে কনভেনশনে ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দের অর্থায়নে সেন্টারটিতে পহেলা জুলাই থেকে চিকিৎসা শুরু হবে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আইসোলেশন সেন্টারটির নিরাপত্তার দায়িত্বসহ যাবতীয় সহায়তা করছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যানন্দের চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক জামাল হোসেন বলেন, আইসোলেশন সেন্টার তৈরির কাজ চলছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম চলে এসেছে। এখন স্থাপন কাজ চলছে। পহেলা জুলাই থেকে চিকিৎসা শুরু হবে।
বহদ্দারহাট এলাকায় আইসোলেশান সেন্টার: গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের উদ্যোগে চট্টগ্রামে চালু হচ্ছে ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার। ইতোমধ্যে এ আইসোলেশন সেন্টার চালু করার প্রস্তুতি সভা করেছে সংগঠনটি নগরীর বহদ্দারহাট আরবি কনভেনশন পাশে ৫তলা ভবনের পুরোটাই করোনা আইসোলেশন সেন্টারের জন্য তৈরী করা হচ্ছে। মঙ্গলবার ১৬জুন আইসোলেশন সেন্টার প্রস্ততিমুলক আসবাবপত্র ও যাবতীয় জিনিসপত্র ক্রয়ের জন্য দাম যাচাই বাছাইরের কাজ শেষ হয়েছে কমিটি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাউছিয়া কমিটির চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য সচিব সাদেক হোসেন পাপ্পু জানান, গাউছিয়া কমিটির উদ্যোগে বহদ্দারহাট আরবি কনভেশনের পাশে আইসোলেশন সেন্টার তৈরির কাজ চলছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য পুরাপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে। গাউছিয়া কমিটি সরাসরি এই আইসোলেশন সেন্টারের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তুলনামূলকভাবে যেসকল রোগীর উপসর্গ নেই, যারা রোগী মোটামুটি সুস্থ তাদের এই আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হবে। আর যে সকল করোনা রোগী নিজের বাসায় থাকতে চান না বা বাসায় আলাদা থাকার ব্যবস্থা নেই তাদেরকেও এখানে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ড বয় সার্বক্ষনিক সেবায় নিয়োজিত থাকবে। তিনি আরো বলেন, গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ চান্দগাঁও থানার সাধারণ সম্পাদক ও রাবেয়া-বশর ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট সমাজসেবক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) রোগীদের জন্য আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করতে নিজের ৫ তলা ভবনের পুরোটাই নিজের ইচ্ছায় গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন শতাধিক। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জন নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে। করোনাভাইরাসের লাগাম টানতে আইসোলেশন সেন্টার জরুরি। তিনি বলেন, সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা অনেক মানুষকে চিকিৎসার আওতায় আনতে পারছি না। বেসরকারিভাবে এসব আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠাতে চাপ অনেকটা কমেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে আরও আইসোলেশন সেন্টার প্রয়োজন চট্টগ্রামে। এভাবে এলাকাভিত্তিক আইসোলেশান করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।