প্রবাস মেলা ডেস্ক: তুলিকা ডেবী সরকার যিনি তুলিকা সরকার নামে দেশে ও বিদেশে পরিচিত। ছোট বেলায় বাবা মায়ের কাছ থেকেই তার গানের হাতেখড়ি। তুলিকার মায়ের পূর্ব পুরুষ ছিল গায়ক বংশ। নানাস্থানে গানের দল নিয়ে গান গাইতেন এবং গানই ছিল তাদের একমাত্র পেশা। বর্তমানে আমেরিকার টেনেসি অঙ্গরাজ্যে বসবাস করা কৃতি এই প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রতি দেশে আসেন। একফাঁকে ঘুরে গেলেন প্রবাস মেলা কার্যালয়ে। আলাপচারিতায় গান নিয়ে তার ভাবনার কথা পাঠকদের জন্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।
তুলিকা ডেবীর দাদা মহাশয় ছিলেন একজন বিখ্যাত বেহালা বাদক। তাই ছোট বেলা থেকেই তুলিকার রক্তে মিশে ছিল গান। সকাল সন্ধ্যা বাড়িতে ভাই, বোন বাবা মা মিলে নিয়মিত গানের আসর বসতো। তার ঠাকুর দাদা স্বর্গীয় শ্রী মুক্তা রাম বাড়ৈ একজন গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী ছিলেন। তিনি প্রায় ১৫০ টিরও বেশি গান লিখে গেছেন। তাই ছোট বেলায় তিনি বিভিন্ন সম্মেলনে যোগ দিতেন এবং গানে অংশ নিতেন।
তুলিকার জন্ম বরিশাল জেলার উজিরপুর থানায়। পিতা স্বর্গীয় শ্রী জে.এন. বাড়ৈ এবং মাতা স্বর্গীয় শ্রীমতী লক্ষী মনি বাড়ৈ। তুলিকা ১১ জন ভাই বোনের মধ্যে ছিলেন নবম।
শৈশব থেকেই তুলিকা আবাসিক স্কুলে পড়ালেখা করেন। ধর্মীয় বিধি-নিষেধ থাকার কারণে ইচ্ছা থাকলেও ছোট বেলায় কোন গুরুর থেকে তালিম নিতে পারেননি। তবে সর্বদাই তার আগ্রহ ছিল একদিন বিখ্যাত ওস্তাদের হাতে তালিম নিবেন। অবশেষে অনেক বছর পর তিনি চাকরি নিয়ে চট্টগ্রামে যান এবং সেখানে একজন সহকর্মীর সাথে স্বাক্ষাত হয় যিনি শ্বাশ্বত ললীতকলা একাডেমীতে গিটারের তালিম দিতেন। একদিন তুলিকার খালি কন্ঠে গান শুনে তিনি তুলিকাকে শ্বাশ্বত ললীতকলা একাডেমিতে নিয়ে যান এবং ভর্তি হতে সাহায্য করেন। স্বর্গীয় ওস্তাদ নিরোদ বরন বড়ুয়ার কাছে দীর্ঘ ৫ বৎসর তালিম নেন। পরে ঢাকা ফিরে আরও বেশ কয়েকবছর ঝংকার ললীতকলা একাডেমিতে শিক্ষালাভ করেন তুলিকা।
৯০’র দশকে তুলিকা ডেবী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তারপর আমেরিকায় পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি টেনেসি অঙ্গরাজ্যে বসবাস করছেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃকি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ করে স্বরস্বতি পুজা, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১ বৈশাখ, বঙ্গমেলা, বঙ্গ সম্মেলন, ফোবানা’র মত অনুষ্ঠানগুলোতে তিনি গান গেয়ে থাকেন।
গানে সবচেয়ে বড় অর্জন কি এক প্রশ্নের জবাবে তুলিকা জানান- একই মঞ্চে কাদেরী কিবরিয়া, ডা: শ্রীকুমার, ভূপেন হাজারিকা, রুনা লায়লা, অনুপ ঘোষাল, হৈমন্তী শুক্লা, শ্রীকান্ত আচারিয়া, স্বপন বসু, নচিকেতা চক্রবর্তী, রথীন্দ্র নাথ রায়, কুমার বিশ্বজিৎ প্রমুখের সাথে একমঞ্চে গান করেছি, যা আমার জীবনে অন্যতম বড় অর্জন বলে আমি মনে করি।
তুলিকার প্রথম সিডি ‘এপার ওপার, দ্বিতীয় সিডি বাংলার মেয়ে, এগুলোতে তার নিজের লেখা কয়েকটা গান রয়েছে। তৃতীয় সিডি ‘প্রাণে আমার বাংলাদেশ’ এই সিডিটি ২০১৭ এর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়, এই সিডির ১০ টি গানের গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী তুলিকা নিজেই। ৪র্থ সিডি ‘কাংখের কলসী’ প্রকাশ হয় ২০১৭ এর ২৬ মার্চ।
কি ধরণের গান আপনি গেয়ে থাকেন জবাবে জানান, আমি সবধরণের গানই গেয়ে থাকি তবে বাংলার ফোক গান আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ। ফোকশিল্পী হিসেবে ইতিমধ্যে তিনি আমেরিকায় বেশ পরিচিতিও লাভ করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গান গেয়েই আমি মানুষের মনে জায়গা করে নিতে চাই।
প্রতিবছরই তুলিকা ডেবী দেশের টানে চলে আসেন। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিওতে গান গেয়ে থাকেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে কলকাতার কমিউনিটি হিউম্যান ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের আমন্ত্রণে ব্রাইন্ড স্কুলে গানের শো করেছেন। দেশের বাইরে বাংলা সংস্কৃতির বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারায় তুলিকা একজন বাংলাদেশি হিসেবে অত্যন্ত গর্বিত বলে মনে করেন।