ইসরাত জেবিন:
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ক্রীড়া সাংবাদিক রেশমিন চৌধুরী ফুটবলের একটি অন্যতম পরিচিত মুখ। ফুটবলের বড় যেকোন অনুষ্ঠান মানেই রেশমিনের উপস্থিতি। এবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ড্র অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেছেন এই বাঙালি ব্রিটিশ নারী। কাতার বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানও সাবলীল উপস্থাপনার মাধ্যমে মঞ্চ আলোকিত করে রেখেছিলেন এই নারী সাংবাদিক। তার আগে ফিফা বর্ষসেরা ও উয়েফা বর্ষসেরাসহ বিশ্ব ফুটবলের বড় বড় অনুষ্ঠান উপাস্থাপনা করেছেন তিনি। উপস্থাপনায় তার সাবলীল কথাবার্তা মুগ্ধ করে সবাইকে। প্রবাস মেলার এবারের ফিচার সাজানো হয়েছে বিশ্ব মঞ্চে আলোকিত করা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ফুটবল সাংবাদিককে নিয়ে।

ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে ফুটবল বিশ্বে ইতোমধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রেশমিন চৌধুরী। কাজ করেছেন বিবিসি এবং বিটি স্পোর্টসের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে। ফুটবল নিয়ে তার জ্ঞানের পরিধিও অনেক। ছয়টি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন রেশমিন।

বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেন কারণ তার বাবা মা বাংলাদেশি। ইংল্যান্ডে জন্ম আর বেড়ে উঠেছেন বলে ইংরেজি হলো তার মাতৃভাষা। এর সাথে স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, পর্তুগীজ এবং ইতালিয়ান ভাষাও জানেন রেশমিন। ফুটবলের অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়েরা তাদের মাতৃভাষায় কথা বলে থাকেন। এর আগে উয়েফার একই অনুষ্ঠানে মেসির সঙ্গে স্প্যানিশ, রোনালদোর সঙ্গে পর্তুগীজ এবং বুফনের সঙ্গে ইতালিয়ান ভাষা সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রেশমিন। এরপর ফরাসি তারকা করিম বেনজামার সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফ্রেঞ্চ ভাষায়।

১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশি এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রেশমিন চৌধুরী। তার বেড়ে ওঠাও সেখানে। এই ক্রীড়া সাংবাদিক মাধ্যমিক পাশ করেছেন ওডফোর্ড কাউন্টি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে। যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে স্নাতক করেন তিনি। পরে ২০০৩ সালে হার্লো কলেজে সাংবাদিকতার ওপর স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন রেশমিন।

শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় রয়টার্স টিভির নিউজ হেল্প ডেস্ক অপারেটর হিসেবে কর্মজীবনের শুরু তার। পরে কাজ করেছেন বিবিসি, ব্লমবার্গ ও আইটিএনে। ২০০৮ সালে যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদ টিভিতে। পরের বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়ালে যোগ দেন রোনাল্ডো। তখন প্রথম সাংবাদিক হিসেবে রোনালদোর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন রেশমিন। রোনালদোর অনুরোধেই অনুষ্ঠানে উয়েফা উপস্থাপিকা হিসেবে রেশমিনকে নিয়েছিল বলে তখনকার স্পেনের সংবাদমাধ্যমে খবরে জানা গিয়েছিল।

গত এপ্রিলে কাতার বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান পরিচালনায় সঞ্চালক ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই নারী সাংবাদিক। রোমাঞ্চকর এই ড্র পরিচালনায় তার সঙ্গী ছিলেন আরেক জনপ্রিয় সঞ্চালক ইদ্রিস আলবা। চমৎকার উপস্থাপনায় পুরো অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখেন রেশমিন এবং ইদ্রিস।

এর আগে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগের ড্র অনুষ্ঠানে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা তৃতীয়বার ইউরোপ সেরা টুর্নামেন্টের ড্র পরিচালনা করেছেন তিনি। ঝলমলে পোশাক আর কথার ফুলঝুরিতে ড্র পরিচালনা মঞ্চ আলোকিত করে রাখেন রেশমিন।

‘টকস্পোর্ট’-এ গেম ডে কভারেজের উপস্থাপিকা হিসেবেও কাজ করেছেন রেশমিন। সেখানে তিনি সাবেক ফুটবলার ড্যারেন বেন্ট, ট্রেভর সিনক্লেয়ার এবং গ্লেন জনসনের সাথে উপস্থাপন করেছেন।
কেবল সাংবাদিকতা এবং সঞ্চলনাই নয়, রেশমিন একজন গায়িকাও। বিখ্যাত সংগীতশিল্পী নিতিন সাওহনের সাথে কাজ করেছেন। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন তিনি। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নেমসেইক’ ছবির জন্য গান গেয়েছিলেন রেশমিন।

রেশমিন কথা বলেন ইংরেজি ভাষায়। তবে বাংলাও বেশ জানেন। ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে লন্ডন অলিম্পিকও কাভার করেছেন। নানামুখী এসব প্রতিভার জন্য ক্যারিয়ারে পেয়েছেন অসংখ্য স্বীকৃতি। ২০১৫ সালে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের জরিপ করা শীর্ষ ৫০ ক্ষমতাধর নারী ক্রীড়া সাংবাদিকের তালিকায় ছিলেন। একই বছর ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের অ্যাম্বাসেডর হন। ২০১৫ সালে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের জরিপকৃত ক্রীড়াক্ষেত্রে শীর্ষ ৫০ নারীর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রেশমিন।

২০১৫ সালে ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের শুভেচ্ছাদূত হয়েছিলেন রেশমিন। ওই বছরের শেষ দিকে এশিয়ান ফুটবল অ্যাওয়ার্ডে মিডিয়া ক্যাটাগরির পুরস্কার জিতে নেন তিনি।ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই সন্তানের মা। স্বামী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাস করেন রেশমিন।