ওমর ফারুক হিমেল, সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া: তিনি রাষ্ট্রের দূত, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার সাথে পরিচালনা করেন দূতাবাস। তাতে কি? আবেগ, সুকুমারবৃত্তি তো কোনো নিয়মের সীমানায় অটকে রাখা যায় না। কূটনৈতিক জীবনে শত ব্যস্ততার মাঝেও এমন তাক লাগানো ঘটনার জন্ম দেন দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম, যা দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসরত প্রবাসীদের বর্ণিল অনুপ্রেরণা জোগায়। ১৪ এপ্রিল বৈশাখী অনুষ্ঠানে তেমনই এক তাক লাগানো ঘটনার অবতারণা করেন রাষ্ট্রদূত নিজেই । গাইলেন বৈশাখের গান। একেবারেই প্রাণের উচ্ছ্বাসে বৈশাখী ঢংয়ে, প্রাণোচ্ছল আবেগে। সুরে ছন্দে, সুরের মূর্ছনায়, মিষ্টি, সুরেলা কন্ঠে।
সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ১৪২৬ পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়েছে সিউলের সিটি হলে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি সহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম দারুণ দোত্যনায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত গান ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি হারমোনিয়ামে সুর তোলেন, উচ্ছ্বসিত কন্ঠে গাইলেন। গভীর মনোযোগ দিয়ে গানটি উপভোগ করেন বিদেশী মিশনের কূটনীতিকবৃন্দ, কোরিয়ান অতিথিসহ উপস্থিত বাংলাদেশী প্রবাসীরা।
গত বছরও ১৪২৫ বর্ষবরণে একইভাবে হারমোনিয়ামে সুর তোলেন কন্ঠে ধ্বনিত করেন ধনে ধান্য পুস্প ভরা আমাদের বসুন্ধরা গানটি গেয়ে আগত দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত। সুরে সুরে গত বছর দূতাবাসের উদ্যোগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর ১৫৭তম ও জাতীয় কবির ১১৯তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে কোরিয়ান শিল্পী লি ইয়াং সিক, রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে এ কোরিয়ান শিল্পী রবীন্দ্রনাথের ‘বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও’ গেয়ে সমবেতদের বিস্মিত করে তোলেন। নিখাদ বাঙালি ঢংয়ে, বাঙালি অদ্ভূত দ্যোতনায়-শ্রোতা দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিলেন। সংস্কৃতির এই সেতুবন্ধনে বার বার কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ হলেন কোরিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা, পাশাপাশি কোরিয়ান নাগরিকরা।
দূতাবাসের অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বিনিময়ের আসা রাষ্ট্রদূতরা সকলে বিস্মিত হন , আবেগে আপ্লুত হন, প্রাণের এই সুরে আন্দোলিত হন । নববর্ষের শুভেচ্ছা বৈশাখের আনন্দ ভাগাভাগি করতে যে অনন্য আয়োজনের নজীর রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম করলেন , যেন কোরিয়ার বুকে বাংলাদেশ উজ্জ্বল গল্প।
তানসেনের কথা কে না জানি আমরা। গান গেয়ে তিনি নাকি বৃষ্টি নামাতেন। সুরের টানে, সুরের মধ্য দিয়ে পরওয়ারদিগারের সঙ্গে নিজের সম্পর্কসূত্র আবিস্কারের চেষ্টা করেছেন ছেউড়িয়ার লালন ফকির। একইভাবে কোরিয়ায় সুরের মূর্চ্ছনায় তাড়িত করেন বাংলা ভাষাভাষী মানুষদেরকে রাষ্ট্রদূত নিজেই , এভাবেই সিউলে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদেরকে নানা অনুষ্ঠানে গান শুনিয়ে সিক্ত করেন, আন্দোলিত করেন আপ্লুত করেন, কূটনীতির বর্ণিল ম্যাপ তৈরিই করেন, সুর প্রীতি, সুরপ্রেমী, সুরসাধক, সঙ্গীত বোদ্ধা আবিদা ইসলাম। তিনি সাংস্কৃতিক কূটনীতির যে ধারা সৃষ্টি করেছেন তা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। রাষ্ট্রদূতের মতে, সংগীত যেভাবে মানুষকে আকর্ষণ করে অন্য কোন স্বর-শব্দই তা পারে না। এভাবেই বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে, লাল সবুজের বাংলাদেশকে নিজ কাধে ফেরি করছেন রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম।