অসীম বিকাশ বড়ুয়া, সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া প্রতিনিধি: দক্ষিণ কোরিয়ার সমুদ্র পাড়ে পর্যটন এলাকা খ্যাত গাংউয়ন প্রদেশের বিখ্যাত নাকসান ও হাজেদো সমুদ্র সৈকতে চতুর্থ ইপিএস বাংলা গ্রীষ্মকালীন মিলনমেলা ২০২২ উপলক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সকল দেশের অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিলন মেলা ও অবিস্মরণীয় লাল সবুজের মানব পতাকা তৈরি করে এক অনন্য নজির ও রেকর্ড স্থাপন করেছে দক্ষিণ কোরিয়াস্থ বাংলাদেশিদের প্রাণের সংগঠন ইপিএস বাংলা কমিউনিটি ইন কোরিয়া।
রোববার (৩১ জুলাই ২০২২) এই মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমরা একা নই, আমরা শক্তি, আমরা সমষ্টি এই স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে ২০১২ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করা এই সংগঠনটি কোরিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে আসছে।
এদিন দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন জেলা ও শহর থেকে ৩২টি বিলাসবহুল বাস ও ১৩ টি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ১ হাজার ৫৪২ জনেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রেমিটেন্সযোদ্ধা এই মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন পরে অবিস্মরণীয় আয়োজনে যুক্ত হতে পেরে প্রবাসীরা আনন্দ, খোশগল্পে মেতে ওঠে শ্বাস নিতে পেরেছিলেন। সেদিন ভিনদেশী সমুদ্র পাড়ে এ যেন এক টুকরো লাল সবুজের বাংলাদেশে পরিণত হয়।
মিলনমেলায় অংশ নেয় অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি পরিবার। কর্মসূচির মধ্যে ছিল সংগীত পরিবেশনা, ফটো ও ভিডিও কনটেস্ট প্রতিযোগিতা,ধাঁধা, কুইজ,রাফেল ড্র, আঞ্চলিক কৌতুক, প্রবাস জীবনের নানা অনুভূতি ও সেরা সুদর্শন এর প্রতিযোগিতা সহ নানা ব্যতিক্রমি আয়োজন। রাফেল ড্র ছাড়াও অংশগ্রহণকারী সবাইকে আকর্ষণীয় উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
নুর আলম মোল্লা ও সুমি বড়ুয়ার প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় বেলা একটার দিকে অনুষ্ঠানের শুরুতে সমগ্র বিশ্বের শান্তি কামনা করে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত পাঠ করেন মোহাম্মদ আরিফ রেজা ও পবিত্র গীতা পাঠ করেন হিমু মন্ডল। এরপর জাতীয় সংগীত শুরু করার আগে লাল ও সবুজ টি-শার্ট পরিহিতদের জাতীয় পতাকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে মানব পতাকা সৃষ্টি করার অনুরোধ জানানো হয় বারংবার মঞ্চ থেকে। প্রিয় মা, মাটি ও দেশকে ভালোবেসে নাকসান সমুদ্র পাড়ে দেড় সহস্রাধিক বাংলাদেশির একত্রে জাতীয় সংগীত গাওয়ার দৃশ্য সত্যিই এক অসাধারণ শিহরণ ও আনন্দানুভূতি সৃষ্টি করে। এ সময় বাংলাদেশিদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে দক্ষিণ কোরিয়ার মাটি। একসঙ্গে এত বাংলাদেশি প্রবাসীদের সর্বপ্রথম দেখে উপস্থিত পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় কোরিয়ানদের মধ্যেও কৌতুহলের শেষ ছিলনা। তারাও মিলন মেলার আনন্দে শামিল হয়।
এই মিলনমেলা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের গর্ব, যা সারা বিশ্ব দেখবে জানিয়ে উপস্থিত সকল প্রবাসীদের উদ্দেশ্য করে ইপিএস বাংলার সভাপতি কামরুল হাসান রাজ বলেন, আপনারা রিপ্রেজেন্টস করছেন লাল সবুজের বাংলাদেশকে। সবাইকে একসঙ্গে দেখে অবাক ও আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি সমস্বরে বলেন, এই মুহূর্তে আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে, শিহরণ জেগে উঠেছে শরীরে। ইপিএস বাংলার উপদেষ্টা ফজলুর রহমান বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি অনুষ্ঠান ও মিলনমেলায় আল্লাহ রহমত ও বরকত দেয় বলে আমরা প্রতিবার সফল হই।
পরে কোরিয়ান জাতীয় সংগীত এক স্বরে গাওয়ার পর বিশিষ্ট শিল্পী খান ভাইয়ের মনোমুগ্ধকর গান সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ও কইন্যা কাইন্দনা, মান কইরোনা এই গানের অসাধারণ কণ্ঠ শুনে সমুদ্র পাড়ে কিছুক্ষণের জন্য সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পী মো: খান, সুমি বড়ুয়া, নওশাদ ফেরদৌস, মাহিম মন্ডল হিমু, হাসান মজুমদার, এসকে সালেক, লাকি ডিজে, উজ্জ্বল হাওলাদার।
পাজু, ইনছন, গিম্পু ও অন্যান্য এলাকা থেকে আসা মো: রাসেল, মো: শিবলু, মো: ইমরান হোসেন ও মেহেদী হাসান বলেন, মিলন মেলায় এসে সবার সঙ্গে দেখা হয়ে খুবই ভালো লাগছে। গিম্পু থেকে আসা নবাগত ইপিএস কর্মী মাসুদ রানা বলেন, আমি প্রথম বাংলাদেশিদের সাথে এই ধরনের মিলনমেলায় আসতে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত হয়েছি।
উপস্থিত সকল প্রবাসীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান, ইপিএস বাংলার সম্পাদক নয়ন কুমার দে, মিলন মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক ফারুক আহমেদ ও প্রধান সমন্বয়ক আশিকুন নবী রাসেল। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল জিএমই রেমিট্যান্স, বিডি হাউজের রাসেল বিন সোলাইমান, অরোরা বিডি টেলিকমের তরিকুল ইসলাম আপন, ইজিফুড, মাই ট্রিপস কোরিয়া ও এস এন ফুড।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা প্রতিনিধিদের মধ্যে লিডার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফজলুর রহমান, মিলন হোসাইন, ইমরান বাদশা, সাইফুল ইসলাম, ইসমাইল হোসাইন, ফরহাদ হোসাইন, মোহাম্মদ আনিস, মো: সুমন, নুর আলম মোল্লা, সাজ্জাদ হোসাইন,আব্দুর রশিদ, আলম সিদ্দিক বাবু, পুষ্পক কুমার, শামসুল আলম, শাহ আলম, বিপ্লব হাসান, মো: মালেক, মো: ফরিদ, মিনহাজুল আবেদীন, মৃদুল সোম, অহিদুর রহমান, আতাউর রহমান, ইউসুফ রিপন, সালেহ আকরাম, জিলানী সরকার, হিমেল আকরাম, আমিনুল ইসলাম, জাকির হোসাইন, আজিজুল হক, শেখ টুটুল ও সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
অনেকদিন পর প্রবাসে এত লোকের সাক্ষাৎ, বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ সহ বাংলা খাবারের স্বাদ পেয়ে সবাই আনন্দিত ছিল।
অংশগ্রহণকারীরা আগামীতে প্রবাসে এমন আয়োজন আশা করে ইপিএস বাংলা কমিউনিটি ইন কোরিয়াকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।