অসীম বিকাশ বড়ুয়া, সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া প্রতিনিধি: দক্ষিণ কোরিয়াতে লিভার জনিত সমস্যা নিয়ে মারা গেছেন খলিলুর রহমান রকি (৬০) নামের বাংলাদেশি প্রবাসী। ২৩ শে জুলাই ২০২২, শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ওসান শহরের এক হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এক সপ্তাহ আগে লিভারের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। মৃতের পরিবারের কেউ দক্ষিণ কোরিয়া না থাকায় হাসপাতাল, পরিবার ও দূতাবাসের সাথে ওসান এলাকার বাংলাদেশি রাকিব মৃধা ও মনিরুজ্জামান মনির সহ অনেকেই হাসপাতালে যোগাযোগ করেছেন। মৃত রকির গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর হলেও তারা স্থায়ীভাবে ঢাকার মিরপুরে বসবাস করতেন। সেখানে নিজস্ব ভবনে তার স্ত্রী থাকেন।
জানা যায়, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম পাসপোর্ট অর্জনকারী বাংলাদেশি নাগরিক। শুধু তাই নয় তখনকার দিনে অন্য দেশের নাগরিকের মধ্যেও দক্ষিণ কোরিয়া নাগরিকত্ব অর্জনকারী ছিল না। তিনি ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়াতে খোয়াংজু স্টেডিয়ামে fifa world cup ফুটবল টুর্নামেন্টে এবং একই বছর এশিয়ান গেইমসে বাংলাদেশী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বিরল সম্মানের অধিকারী হিসেবে সর্বপ্রথম কোরিয়া সরকার তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করেন।
তারপরে দীর্ঘদিন কোরিয়ায় অবস্থান করার পর কানাডায় গমণ করেন। সেখানেও তিনি পরিবারসহ নাগরিকত্ব অর্জন করেন। তার দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে বর্তমানে কানাডা থাকে।
কানাডায় দীর্ঘ ১৪ বছর অবস্থান করলেও তিনি কোরিয়ার নাগরিকত্ব বাতিল করেননি। এরপর ২০০২ সালের মার্চ মাসের দিকে আবারো দক্ষিণ কোরিয়াতে চলে আসেন। মারা যাওয়ার কিছুদিন পূর্বে এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া কানাডা থেকে অনেক দিক দিয়ে ভালো। এখানে ইনকাম বেশি, খাওয়া ও থাকার খরচ কম এবং কালচার অনেক সুন্দর।
দক্ষিণ কোরিয়ার গিম্পু শহরের সোয়েআমরি নামক এলাকায় একটি পার্টস তৈরির ফ্যাক্টরিতে তিনি চাকরি করতেন। মারা যাওয়ার একমাস পূর্বে তিনি চাকুরী পরিবর্তন করে ওসান শহরে অপর একটি ফ্যাক্টরিতে যোগদান করেন।
অগাধ ভালোবাসা ও এক বুক স্বপ্ন নিয়ে আবারো দক্ষিণ কোরিয়াতে আসেন এই বাংলাদেশি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে লিভারের সমস্যা হয়েছে তিনি নিজেই জানতেন না। আর সে কারণে শেষ পর্যন্ত চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন কমিউনিটি ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মতিন ও সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম হাছান স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় এই বর্ষিয়ান আওয়ামী নেতা ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
ওসান হসপিটালের মর্গে দূতাবাস টিম লাশ পরিদর্শন করে গেছেন। এদিকে লাশ দেশে পাঠানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ দূতাবাস। তবে শত চেষ্টা করেও মৃত খলিলুর রহমান রকির বাংলাদেশী পাসপোর্ট না থাকার কারণে মৃতের লাশ দেশে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না ।