সিকদার গিয়াস উদ্দিন:
নভেল করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে জনগণের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বাস্থ্যবিধি ঘোষণা ও ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে উঠার বিষয়টি প্রথম দিকে জনমনে আশা জাগিয়ে তুলেছিলো।প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পোশাক শিল্পের মালিকদের বড়মাপের প্রণোদনা ঘোষণা সত্ত্বেও শ্রমিকদের কাজে যোগদান কিংবা বেতন নিয়ে তালবাহানা ও নানা অঘটন ঘটেছে।
তাছাড়াও সচেতনতামূলক বিভিন্ন বিধিনিষেধ স্বত্তেও স্থলপথে বা নৌপথে ঢাকা থেকে ব্যাপক আগমন-নির্গমনকে কেন্দ্র করে লোকমূখে,পত্র পত্রিকায় ও সোশ্যাল, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সরব আলোচনা সমালোচনা এমনকি পিপিই সংকটকে কেন্দ্র করে ডাক্তার, নার্স, পুলিশ সহ ফ্রন্টলাইন কর্মীদের করোনা সংক্রমণ নিয়ে পুরো দেশে থমথমে টালমাটাল অবস্থা তৈরী করে। লকডাউনকে কেন্দ্র করে বিত্তহীনদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ নিয়েও চুরিচামারী, দূর্ণীতি ও বিভিন্ন অমানবিক কর্মকান্ডের খবরও জনমনে শংকা তীব্রতর করে তোলার কথা বিভিন্ন মিডিয়াতে অহরহ আলোচিত সমালোচিত।
সরকার ও সরকার দলীয় রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও ত্রাণ পরিচালনা ব্যবস্থা সহ নানা বিষয়ে পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি ও বলার অন্তহীন প্রচেষ্টা জনমনকে নানা ধরণের কনফিউশন, শংকা, মানসিক চাপ, অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ার ভীতি তৈরী করার বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য বলে বিশেষজ্ঞদের এখন বলতে দেখা যায়। মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসাবে কোভিড-১৯ মহামারী সারাবিশ্ব টালমাটাল তখনই ডেঙ্গুজ্বর সহ নেমে এলো বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও উড়িষ্যা সহ অনেক স্থানে চরম বিধ্বংসী সাইক্লোন আম্পানের নির্দয় আক্রমণ। জলোচ্ছাস আর বাড়ীঘর ফসল সহ জনপদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। যার পরিসংখ্যান বের করাও সময় সাপেক্ষ। অনেকেই গৃহহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা।
বাংলাদেশের গোলটেবিল নামে একটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার টক’শোতে টেলিফোনে এক অসহায় মহিলা জানালেন-‘তাঁর তিনটি সন্তান। অর্থনৈতিক ও খাদ্যসংকট মারাত্মক। ভদ্র মহিলা নাম প্রকাশ করেননি কারণ উনার অনেক উচ্চবিত্ত আত্মীয় স্বজন আছেন। জানাসত্ত্বেও কেউ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেননি।নাম প্রকাশ করলে মান সম্মান সহ নানা ধরনের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি কান্না বিজড়িত কম্পমান কন্ঠ থেকে মানবিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যে কারো বুঝে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বৈকি।’
এটি কেবল কি একজন মায়ের অসহায় আর্তনাদ? এরকম হাজারো মা সহ শত শত মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও বিত্তহীনদের অসহায় আর্তনাদের বিষয়টি অশনীসংকেত নয় কি? ইতিমধ্যেই বিশ্বসংস্থার ক্লাইমেট চেঞ্জ, অর্থনৈতিক, কর্মসংস্হান ও খাদ্য বিশেষজ্ঞগণ অর্থনৈতিক ও খাদ্যমন্দাকে কেন্দ্র করে যে মতামত প্রদান করেছেন-তা পিলে চমকানোর মতো।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরো বেশী ঝুঁকিপূর্ণ ও চরম আকার যাতে ধারণ করতে না পারে সেজন্য দোষারূপের সংস্কৃতি পরিহার করে দলমত নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। জনমনে ব্যাপক আশা জাগিয়ে তুলতে পূরো জাতির মনোবলকে উচ্চমার্গীয় করে তুলতে হলে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।
লেখক:লাসভেগাস, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী;
নির্বাহী সদস্য-কানেক্ট বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল; সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক-কমিটি ফর ডেমোক্রেসী ইন বাংলাদেশ,যুক্তরাষ্ট্র;সাবেক সদস্য সচিব-মুক্তিযুদ্ধ চেতনা পরিষদ,যুক্তরাষ্ট্র;সাবেক প্রতিষ্ঠাতা আহ্ববায়ক-কর্ণেল তাহের স্মৃতি সংসদ,যুক্তরাষ্ট্র।