জাহাঙ্গীর আলম সিকদার, লন্ডন, যুক্তরাজ্য প্রতিনিধিঃ
২৫ এপ্রিল, ২০২১ রবিবার যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের অংশ গ্রহণে ইউকে সময় বিকাল ৪টা বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টা এবং নিউইয়র্ক সময় সকাল ১১ টায় এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তৌফিক মিনারের সঞ্চালনায় উক্ত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আলোচনার বিষয় ছিল ‘৬ মে ২০২১ লন্ডন বারাহ অব টাওয়ার হ্যামলেটস এর নির্বাহী মেয়র এর গণভোট হ্যাঁ / না- ‘’রাজনীতির সমীকরণ’’। ইউকে বাংলাটিভি’র ফেইস বুক পেইজ এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠে প্রাণবন্ত।
কে হবেন টাওয়ার হ্যামলেটের নীতিনির্ধারক? লিডার এন্ড ক্যাবিনেটের মাধ্যমে নাকি মেয়র সিস্টেমের মাধ্যমে? এমন প্রশ্নে ব্যাপক সাড়া পাওয়া ‘’রাজনীতির সমীকরণ’এই অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনের অত্যন্ত আলোচিত ও সুপরিচিত ব্যক্তি বিশিষ্ট সাংবাদিক ও এস্পাইর পার্টি টিএইচবিসি এর চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহের চৌধুরী, ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডস এর প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলী এমবিই, লন্ডন বারাহ অব টাওয়ার হ্যামলেটস এর সাবেক সিভিক মেয়র দরস উল্লাহ, লন্ডন বারাহ অব টাওয়ার হ্যামলেটস এর সাবেক প্রথম নির্বাহী ডেপুটি মেয়র এ এম অহিদ আহমেদ এবং মুলেভাল্লি কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হক।
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে অনুষ্ঠানে প্যানেলের কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের দূরদর্শিতায় প্রায় ২ ঘণ্টার আলোচনায় বেরিয়ে আসে কমিউনিটির কিছু জানা অজানা তথ্য। এতে কে এম আবু তাহের চৌধুরী এই টাওয়ার হ্যামলেটসে তার ৩৮ বছর বসবাসের আলোকে চমৎকার তথ্য তুলে ধরেন। আলোচনায় তিনি আগামী ৬ মে মেয়রাল সিস্টেমের পক্ষে মেয়রাল সিস্টেমের অধীনে টাওয়ার হ্যামলেটসে সাবেক নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের সাফল্যের ইতিহাস তুলে বলেন, জনাব লুৎফুর রহমান টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে লেবার দলীয় কাউন্সিল লিডার ছিলেন ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত। দুই টার্মে লিডার থাকার পরও তিনি যে সব উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারেননি তা করতে পেরেছেন ২০১০ সালে নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর। টাওয়ার হ্যামলেটসে মেয়রাল সিস্টেম আনতে ২০১০সালে ৬২ হাজার বাসিন্দা মেয়রের পক্ষে ইয়েস ভোট দিয়েছিলেন। লেবার পার্টি জনাব লুৎফুর রহমানকে ২০১০ সালে মেয়র পদে মনোনয়ন দিলেও এক ডসিয়ারেরর মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে এই মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তখন লেবার পার্টির এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ ক্ষেপে ওঠে। জনাব লুৎফুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লেবার, লিবডেম, কনজারভেটিভ, গ্রীন সহ সকল মেইনস্ট্রীম প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৪ সালে আবার সব দলকে হারিয়ে ৩৮ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি সর্ব প্রথম কোন এশিয়ান বাঙালী ও মুসলিম এই গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে তাক লাগিয়ে দেন সারা বৃটেনবাসীকে। এরপর থেকেই বিভিন্ন দিক থেকে শুরু মিডিয়া সন্ত্রাস, ষড়যন্ত্র, হিংসাপরায়নতা, কুটিল চক্রান্ত, মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ দায়ের। শেষ পর্যন্ত একজন বিচারকের মাধ্যমে গঠিত নির্বাচনী ট্রাইবুনাল দিয়ে কোন জুরি ছাড়াই কিছু হাস্যকর অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে অপসারণ করা হয়। পরবর্তীতে স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ড পুলিশ , মেট্রোপলিটান পুলিশ, সিটি পুলিশ, প্রাইস ওয়াটার কুপার, কাউন্সিলের ক্লিনআপ প্রজেক্ট প্রায় সাড়ে ৪ মিলিয়ন পাউণ্ড ব্যয় করে কোন অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি ।
লুৎফুর রহমান ২০১০সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের ২৩এপ্রিল পর্যন্ত নির্বাহী মেয়রের দায়িত্ব পালন করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন । যেমন-
এক: ৫৫৯০টি সোশিয়েল হাউজিং নির্মাণ করেন এবং পাইপ লাইনে নির্মাণাধীন ৩০০০হাজার বাড়ি রেখে যান। ডিসেন্ট হোম প্রজেক্টের মাধ্যমে ১৬৮ মিলিয়ন পাউণ্ড ব্যয়ে ২৬ হাজার ঘরের কাজ করান।
দুই: শিক্ষাখাতে ব্যয় করা হয় ৩৮০মিলিয়ন পাউণ্ড। নতুন শিক্ষাভবন নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। ফ্রি স্কুল মিল চালু, ১৫০০পাউণ্ডের ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট চালু, এ লেভেল স্টুডেন্টদের জন্য ইএমএ গ্রান্ট চালু করা হয়।
তিন: কমিউনিটির সেইফটির জন্য অতিরিক্ত ৫৫জন পুলিশ অফিসার নিয়োগ, কমিউনিটি এনফোরসমেন্ট অফিসার নিয়োগ করেন। তিনি ‘ডিলার এ ডে’ কর্মসূচীর মাধ্যমে ১২৩০জন ড্রাগ ডিলার গ্রেফতার ও ২ লাখ পাউণ্ডের হিরোইন আটকের ব্যবস্থা করেন। ফলে ড্রাগ ও ক্রাইম কমে যায়।
চার: ইয়ুথ সার্ভিসে ১০মিলিয়ন পাউণ্ড বরাদ্দ করেন। সাড়ে চার মিলিয়ন পাউণ্ড ব্যয়ে আইডিয়া স্টোর নির্মাণ, ওসমানী সেন্টার সহ বিভিন্ন ইয়ুথ সেন্টার চালু করা হয়।
পাঁচ: বয়স্কদের ফ্রি হোম কেয়ার সার্ভিসের জন্য ১৭ মিলিয়ন পাউণ্ড ব্যয় করেন। মুরব্বীদের জন্য এ ধরনের ফ্রি সেবা কোন কাউন্সিলে ছিলোনা।
ছয়: বাংলা স্কুল সহ কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিসে এক মিলিয়ন পাউণ্ড ব্যয় করেন এবং বিভিন্ন ভাষায় আরলি জিসিএসইর ব্যবস্থা করেন ।
সাত: মেয়র হিসাবে ৫ বছর ও লিডার হিসাবে ২ বছরের জন্য কাউন্সিল ট্যাক্স ফ্রি করেন। অর্থাৎ কোন কাউন্সিল ট্যাক্স আর বৃদ্ধি করা হয়নি ।
আট: টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবী একটি কবর স্থান সিডকাপে প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে বর্তমানে ১৮শ’ পাউণ্ডে লাশ দাফন করা যেতে পারে।
নয়: কাউন্সিল অফিসের বার্ষিক ১৬ মিলিয়ন পাউণ্ড ভাড়া বাঁচানোর জন্য টাউন হল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মাত্র সাড়ে ৮ মিলিয়ন পাউণ্ড ব্যয়ে হোয়াটচ্যাপেলের পুরাতন হাসপাতাল ক্রয় করেন ।
দশ: কমিউনিটি সংগঠনগুলোকে আনুপাতিক হারে ও সমভাবে গ্রান্ট প্রদান করেন।
এগারো: এই প্রথমবারের মত ফেইথ গ্রান্ট চালু করে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা,সিনেগগ সহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা দেন ।
বারো: ভিক্টোরিয়া পার্ক সহ বিভিন্ন পার্কের উন্নয়নে মিলিয়ন মিলিয়ন পাউণ্ড ব্যয় করেন ।
তের: ২০০ মিলিয়ন পাউণ্ড ব্যয়ে স্টেপনীর ওশেন ইস্টেইটের উন্নয়ন ও নতুন বাড়ি ঘর নির্মাণ করেন। চৌদ্দ: ৪০ বছর ধরে বন্ধ থাকা পপলার বাথের নতুন সংস্কার করে জিম ও সুইমিং পুল প্রতিষ্ঠা করেন।
পনের: রবিনহুড গার্ডেন এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন সাধন ,নতুন মসজিদ ভবন নির্মান ও বাড়ি ঘর তৈরী করেন ।
ষোল: তিনি বয়স্ক লোকদের সোসিয়েলাইজিং ও সুস্থ জীবনের জন্য লাঞ্চ ক্লাব চালু করেন।
মেয়র লুৎফুর রহমানের টিম তাঁকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেন। তিনি বৃটেনে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাড়ি নির্মাণের কারণে কাউন্সিল ৭৪ মিলিয়ন পাউণ্ড বোনাস পায়। লুৎফুর রহমানকে ষড়যন্ত্র করে সরিয়ে কমিউনিটির বিরাট ক্ষতি করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে কমিউনিটিকে বদনামী করা হয়েছে। এক শ্রেণির হিংসুক ও চক্রান্তকারীরা এখন ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। লুৎফুর রহমান তাঁর কাজের মাধ্যমে জনগণের হৃদয়ে আসন করে নিয়েছেন । কে এম আবূ তাহের চৌধুরীর আহবান টাওয়ার হ্যামলেটসে আগামী ৬ইমে মেয়রেল সিস্টেমের পক্ষে। ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডস এর প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলী ওবিই এবং ডেপুটি মেয়র এ এম অহিদ আহমেদ তার সহমত প্রকাশ করেন।
অপরদিকে সাবেক সিভিক মেয়র দরস উল্লাহ বলেন,সারা ব্রিটেনে লোকাল অথরিটি ৩১৭ টির মধ্যে মাত্র ১৫ টি লোকাল অথরিটি ডাইরেক্ট মেয়রের সিস্টেম আছে এবং ৩০২ টি লিডার এন্ড কেবিনেট সিস্টেম। মানুষকে ভূল ইনফরমেশন দিয়ে ডাইভারট করাকে ভুল মনে করতেছেন। কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হক সাবেক সিভিক মেয়র দরস উল্লাহর সাথে একমত পোষণ করেন।