রানা সাত্তার, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রঘোনা প্রকল্প হরিমন্দির এর মূল ফটকের প্রবেশ পথে সমস্ত ফুল গাছ কর্নফুলি পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম) কর্তৃপক্ষ কেটে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।
মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার মল্লিক জানান, ৫ জুলাই ২০২০, রবিবার দিন-দুপুরে কেপিএম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড: এম এম এ কাদের এর নির্দেশে কেপিএম এর কিছু লোক এসে মন্দিরের সামনে থাকা সমস্ত ফুল গাছ কেটে দেয়। এইছাড়া মিল কর্তৃপক্ষ মন্দিরের নিজস্ব লাগানো ৮/৯ টি ডাব গাছ দখলে নিয়ে লীজ দিয়ে দেয় এবং মন্দিরের পাশে চলাচলের পথ বেড়া দিয়ে দেয়।
মন্দিরের পুরোহিত কৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, মন্দিরের ১০০ গজের মধ্যে সনাতন সম্প্রদায়ের ১১০টি পরিবার বসবাস করে, তাদের প্রবেশ পথে মিল কর্তৃপক্ষ বেড়া দেওয়ায় তাদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানান, ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরটি ৯৯ বছরের জন্য কেপিএম কর্তৃপক্ষ হতে লীজ নিয়ে এখানকার সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন লোকজন পুজা অর্চনা করতে থাকেন।
রাঙামাটি হতে নির্বাচিত সাংসদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের মাধ্যমে এই মন্দিরের ইতিমধ্যে সরকারি অর্থে ৭০ লাখ টাকার উন্নয়ন হয়েছে। এই মন্দিরে একটি সংস্কৃত বিদ্যালয়, একটি নাট মন্দির রয়েছে। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা পুজা এবং প্রার্থনা হয় এই মন্দিরে। মন্দিরের পাশে লাগানো এই সব ফুল গাছ হতে ভক্তরা ফুল সংগ্রহ করে ঠাকুরের উদ্যোশে অর্ঘ নিবেদন করতো। কিন্ত মিল কর্তৃপক্ষ এই সব ফুল গাছ কেটে সকল সনাতনি সম্প্রদায়ের মনে চরম আঘাত দিয়েছেন।
এদিকে ৬ জুলাই ২০২০, সোমবার মন্দির কর্তৃপক্ষ কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এইছাড়া কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মফিজুল হক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল এর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এই সময় কাপ্তাই উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার ভট্রাচার্য্য, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ ধর পিন্টু, কাপ্তাই উপজেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন কমিটির সভাপতি সূবর্ণ ভট্রাচার্য্য সাধারণ সম্পাদক উৎপল কান্তি ভট্টাচার্য্য, কেপিএম হরিমন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার মল্লিক সহ কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন মঠ ও মন্দিরের প্রতিনিধি এবং কেপিএম হরি মন্দিরের ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল জানান, মন্দির কর্তৃপক্ষের স্মারকলিপি পেয়েছি এবং সেটা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি জানান ঘটনার তদন্ত করা হবে।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মফিজুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ইতিমধ্যে কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ হতে কেপিএম মিল এলাকায় অনেক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও কেপিএম কর্তৃপক্ষের বাঁধার কারণে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ণ করা সম্ভব হয় নাই। তিনি জানান, কেপিএম হরিমন্দির কর্তৃপক্ষ ৬ জুলাই ২০২০, সোমবার স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। এদিকে ১নং চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী জানান, মন্দিরের সামনে মন্দির কর্তৃপক্ষের লাগানো ফুল গাছগুলো অন্যায়ভাবে কেপিএম কর্তৃপক্ষ কেটে ফেলে, ফলে সনাতনি সম্প্রদায়ের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই বিষয়ে কেপিএম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর মোবাইলে বার বার কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেন নাই।