শেখ এহছানুল হক খোকন, কুয়েত সিটি, কুয়েত :
কুয়েত মধ্যপ্রাচ্যের একটি ধনী দেশ। এর পুরো নাম দৌলাতুল কুয়েত। জনসংখ্যার বেশির ভাগই বিভিন্ন দেশের অভিবাসী। কারন এদেশের সরকার শ্রমবান্ধব সরকার তারা বাহিরের দেশের পরিচ্ছন্ন কর্মী (শ্রমিক) নিয়ে এসে বিভিন্ন কাজের সহযোগীতা নেন। বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের পাশাপাশি বাংলাদেশিরা রয়েছে সাড়ে তিন লাখের মত। তারা মূলত বিভিন্ন ক্লিনিং কোম্পানির মাধ্যমে এসে কাজে নিয়োজিত হন। কুয়েত সরকারের কাছে বাংলাদেশিদের চাহিদা বেশ ভালো কারন তারা কাজ যেমন আয়ত্বে নিতে পারেন সহজে আবার মন যুগিয়ে চলতেও সক্ষম।
দীর্ঘ পয়ত্রিশ বছর যাবৎ বাংলাদেশিরা আছেন কুয়েতীদের সাথে মিশে এটা প্রশংসার বটে।কিন্তু গুটিকয়েক মানুষের কারণে প্রত্যাশিত সুন্দর সমাজ গড়তে ও দেশের নাম উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করতে বাধা পোহাতে হচ্ছে। এরা কারা জানতে হবে জানাতে হবে দোষীদের শাস্তি পেতে হবে তবেই প্রশংসা আরো প্রশোংসিত হবে।
কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে অসাধু ব্যক্তিরা ভিসা বাণিজ্য (তাও বিশেষ অনুমতি)নিয়ে প্রায় আট বছর ধরে অল্প অল্প করে দেড় লাখের মত শ্রমিক আসছে, আর তাদের কাছ থেকে দালালরা হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। কিন্তু যে সকল শ্রমিক আসছে তাদের কেউ কেউ ভালো থাকলেও অনেকেই ভালো নেই, এর প্রধান কারন বাংলাদেশি বেশ কিছু ভিসা আদম সিন্ডিকেট বাংলাদেশি হয়ে বাংলাদেশির বুকে চালায় ছুড়ি যা কমিউনিটির জনমনকে ভাবিয়ে তুলেছে । সম্প্রতি এরই মধ্যে বেশ কিছু ছোট ছোট কোম্পানির মাধ্যমে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক এসে অনিশ্চয়তার মাঝে দিন অতিবাহিত করছেন যা এখন দূতাবাস থেকে শুরু করে অনেকের মুখে মুখে।
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বেশ কয়টি কোম্পানীতে শ্রমিক আসা নিষিদ্ধ করেছিল কিন্তু কিভাবে এজেন্সীগুলো ক্লিয়ারেন্স নিয়ে নেন তা ভাবিয়ে তুলেছে, তবে কি সরিষার মধ্যে ভূত? নাকি সিন্ডিকেটের চালাকি, নাকি প্রতারনা, নাকি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এরা একটি চক্র ?এমনি গুন্জন চলছে কমিউনিটিতে।
একজন শ্রমিকের নায্য পাওনা বা অধিকার তো পাচ্ছেইনা বরং হতাশা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে আর দালাল বা সিন্ডিকেট থাকছে ধড়াছোয়ার বাহিরে, এর জন্য কারা দায়ী কি কারনে একটি ভিসা ৭ থেকে ৯ লাখ টাকা খরচ করে আসতে হবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের? এর রহস্য কি তার সমাধান চায় এ সমস্ত পরবাসী শ্রমিক।
যারা ঘরবাড়ী ভিটে মাটি বা হালের গরু বিক্রি করে সোনার হরিণের আশায় প্রবাসী হন তাদের জন্য কি সামান্য মানুষত্বের জায়গা তৈরী হওয়া যুক্তিক নয়?
এদিকে কুয়েতের আল আনবা ও আরব টাইমস পত্রিকার বরাতে একটি সূত্র উল্লেখ করেছে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় তিনটি কোম্পানির বিরুদ্ধে মানব পাচার বা ভিসা বাণিজ্যের জালিয়াতির খবর পেয়ে আইন সংস্থাকারী বাহিনী এরই মধ্যে বিশেষ টিম তৈরী করে মাঠে আর তাতে আইনের জালে ফেসে যাচ্ছে এ সকল আদম কোম্পানি এবং মালিক পক্ষ। বাংলাদেশি বেশ কয়জনকে আটকও করার খবর রয়েছে। তবে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৯শত জন ভিসা নিয়ে আসা ও সংক্রান্ত ব্যবসার সাথে জড়িতদের তালিকা করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় হতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়। এদিকে একজন সিরিয়ানকে মূল মাষ্টার মাইন্ড বলে উল্লেখ করা হয় তার নাম তথ্যের স্বাথে গোপন রাখা হয়েছে বলে সূত্রটি উল্লেখ্য করেছে।
বিশেষ করে পাকিস্তানি, মিশরী ও বাংলাদেশি দালালরা দেশে ও কুয়েতে মিলে কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর সাথে দেশের বিভিন্ন এজেন্সি যেনে শুনে শ্রমিক পাঠাচ্ছে বলেও কুয়েতে আসা শ্রমিকদের অভিযোগ রয়েছে। চিনেপুটির অনেক জড়িত কিন্তু তাদের নাম উঠার সাথে সাথে ফাইল চাপা পরে যায় টেবিলে আর যে নাম তুলবে তার রফাদফা শেষ। এবার হয়তো তার চেষ্টা ব্যহত হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
কুয়েতে কিছু বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আছেন তারা ভিসা বাণিজ্যের জন্য অর্থ ইনভেস্ট করে থাকেন আর এদের হয়ে মাঠে কাজ করেন শতজন আবার পাসপোট সংগ্রহ করার কাজে লিপ্ত শত শত দালাল । সব মিলিয়ে ভিসা বাণিজ্যের অধিক মুনাফা আর এক ভিসায় লাভের টাকার হাত বদল এর জন্যই আজ এ অবস্থা বলে জানা যায়। এরা টোপ ফেলে কারো ভাই বন্ধু আত্মীয় স্বজনদের একজন দ্বারা আরেকজনকে বুলিয়ে বালিয়ে আগ্রহী করে আর তার সংগে লোভ ঢেলে দেয়ার কারনে নেমে পরেন বানিজ্যে।আর সেখানে সৃষ্টি হয়েছে চিনে পুটি সহ রুই কাতলা বনে যাওয়া ব্যবসায়ী যার পুরো নাম ভিসা বানিজ্য আদম দালাল।ৎ
ইতিমধ্যে যে কয়টি কোম্পানি তাদের কন্টাক্ট ছাড়া জালিয়াতি করে বিশেষ অনুমতিতে ভিসা বের করে শ্রমিক এনেছেন তারা শ্রমিকদের কাজ দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছে কারন তারা প্রতারনা করতে গিয়ে নিজেরাই বিপাকে বলে কানাঘুষাঘুষি চলছে। এরই মধ্যে অনেক দালাল আইনি জটিলতায় ফেসে গেছে, আবার অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে, অনেকের ফোন সুইস স্টপ ।
ভুক্তভোগী একটি কোম্পানীর শ্রমিকরা বলছেন, গত চার মাস পূর্বে দুই শতাধিকের উপরে আসা শ্রমিকরা তাদের আকামা, কাজ না দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিতে পারে খুব দ্রুত, কি দোষ ছিল তাদের প্রশ্ন সবার, তারা দূতাবাস ও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন । যদি দেশে পাঠানো হয় তবে লেবার আইন অনুযায়ী তাদের দুই বা তিন বছরের কন্টাক্ট অনুযায়ী তাদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যেমন সম্ভাবনা নাই পাশাপাশি দালাল ও কোম্পানি নিরাপদে থাকতে পারলো কিন্তু শ্রমিক যারা দেশে যাচ্ছে তাদের পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে পাওয়া যেমন দুরাশায় রয়ে গেলো এবং ঋণের বোঝা মাথায় থেকেই গেলো।
সম্প্রতি যাদের নাম বাজারে উঠানামা করছে তাদের মধ্য একজন আদম ৯০জন, একজন আদম ৭০জন সহ বেশ কয়েকজন এ কোম্পানিতে বাংলাদেশি শ্রমিক আনেন, এরা ভিসা বাণিজ্যের সাথে যুক্ত যা বাংলাদেশ দূতাবাসের মনিটরিং এ আছে ইতিমধ্যে দূতাবাস শ্রমিকদের পক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দিতে সকল ব্যবস্থা নিয়েছে।
এদিকে অনেকে বলছেন আদমদের কাচা টাকার কাছে সব জিম্মি হয়ে না গেলে অবশ্যই শ্রমিকদের অধিকার পাবে বলে আশাবাদী। এর মধ্যে অন্য একটি কোম্পানি তাদের চারশত লোকের কন্টাক্ট দেখিয়ে আবেদনের ইস্যু থাকলেও ভিসা বের করে শ্রমিক নিয়ে আসে কুয়েতে, কিন্তু তাদের লোকবল কাজে লাগানোর কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা যেখান হতে ভিসা ইস্যু হয় সেখানে ফাইনাল জমা দেওয়ার আগেই কাগজে প্রতারণার মাধ্যমে ৪০০ শত জনের ভিসার পরিবর্তে ৬৫০ জনের পরিমান লিখে কিন্তু তা সরকারি দপ্তরের নজরে আসে তখন জালিয়াতির কারণে মিনিষ্টিরি অফ ইন্টেরিওরে কোম্পানীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেন এবং একজন কুয়েতীকে আটক করে প্রসাশন। আর এর সাথে বাংলাদেশি আদম যারা জড়িত তারা পলাতক।
শ্রমিকরা জানান তাদের ফোন বন্ধের পাশাপাশি অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন এদের মধ্যে অনেকে জড়িত তারা শ্রমিকদের প্রলোভন দেখিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন পালিয়েছে। আরো বেশ কয়টি কোম্পানীর শ্রমিকদের বেহাল দশা প্রায় ১বছর হয়ে গেলেও তাদের আকামা কাজ সহ যা তাদের প্রাপ্য তার কোনো দেখা মিলছেনা। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য এদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে সিন্ডিকেট মিলে নানা ধরনের হামলা মামলা, হয়রানি সহ দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার বিস্তর অভিযোগের কথা জানান প্রবাসীরা। এ জন্য ভয়ে শ্রমিক, তথ্য সংগ্রহকারী কিংবা সে যেই হোক তাদের নিরাপত্তার বিষয় নাজুক বলে মুখ খুলতে পারেনা।
এদিকে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম বাংলাদেশি এসব জ্বালিয়াতি যারা ভিসা বা মানব পাচারকারী করার সাথে জড়িত তাদেরকে কোনো ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা দেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি সকল প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছেন পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার ও কুয়েত সরকারের বিভিন্ন দফতরে আলোচনা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে দূতাবাস ও প্রসাশন ইচ্ছে করলে এদের দৌড়াত্ব নিঃশেষ করতে পারে বলে আশার ঠিকানা খুজছে ভুক্তভোগী শ্রমিকরা।এমতাবস্থায় সত্যকে সত্যিকার ভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে সকল দায়িত্ববান সম্প্রদায় সে প্রত্যাশা সকলের।