শেখ এহছানুল হক খোকন, কুয়েত সিটি, কুয়েত প্রতিনিধি:
পরিশ্রমের মাঝে সফলতা তাতে কে না আনন্দ পায়, অভাব অনটন বা জীবনকে স্বাবলম্বী করতে পরিশ্রমই শক্তি, তাইতো ছুটে চলা ভাগ্যকে জয় করে সফল হয়েছেন অনেকেই। এদের মধ্যে মধ্য প্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ কুয়েত দুই দশক পূর্বে ছুটে আসা তিন বন্ধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ হিবজু, কুমিল্লার শাহজালাল ও চাদপুরের তাহের শ্রমিক ভিসা নিয়ে কুয়েতে আসেন।
তাদের মধ্যে মোঃ হেবজু মিয়া প্রবাস মেলার কুয়েত প্রতিনিধিকে জানান পরিবারের মুখে হাসি ও নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন ঘটাতে , ১৯৯৮ সালে কুয়েতে আসেন। বেশ কয়েক বছর কাজ করেন কোম্পানিতে কিন্তু তাতে আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক যা তাদের ভাবিয়ে তুলে। খুঁজে ফিরেন আলাদা কোনো কিছু করার, বুদ্ধি করেন তিন বন্ধু কি করলে আয় বাড়ানো যায়, অবশেষে তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যবসার।
ছোট থেকে বড় হবার গল্পটা বেশ জানা ছিল তাদের আর সে চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে কুয়েত এর সোলেবিয়া পাইকারী সবজি বাজার (যাকে আরবিতে সাবরা বলা হয়) নামে পরিচিত সবচেয়ে বড় সবজি বাজার। এখানে শত শত এরকম ব্যবসা করে এগিয়ে যাচ্ছে যা অনুপ্রাণিত করে হেবজুকে। তাই দেরি না করে তিনজনের জমানো টাকা এক করে চারটি দোকান নেন ভাড়ায় আড়তদারীর, সেখান থেকে শুরু করলেন মালামাল কিনে ডাকের মাধ্যমে এরপর পাইকারী বিক্রি, যা অনেক খুচরা বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন দেশী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কিনে নেন তাদের কাছ থেকে। খুচরা ব্যবসায়ীরা আবার বিভিন্ন বাকালা,হোটেল, জামিয়ায় ও বিভিন্ন দোকানে দোকানে দিয়ে ভালো আয় করছেন।
এ সবজি বাজারে প্রায় ৯শত দোকান রয়েছে, তার বেশিরভাগ দোকানগুলোতেই বিভিন্ন দেশের নাগরিকের পাশাপাশি শতকরা ৮০ ভাগই পরিচালনায় রয়েছে বাংলাদেশিরা। কিছু সবজি কুয়েতেও উৎপাদন হয় সেখানেও রয়েছে বাংলাদেশিরা আর সে উৎপাদিত সবজি চাহিদার তুলনায় ২০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হলেও, বাকী ৮০ ভাগ মালামাল জর্ডান, সৌদি, চীন, ভারত থেকে আমদানি করা হয়।
আবার কিছু সবজি বাংলাদেশ থেকে আসে প্রতি সপ্তাহে যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি সবজির চাহিদা থাকলেও আমদানি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা দায়ী বলে মনে করছেন প্রবাসী এই ব্যবসায়ীরা।
পরিচালক মোঃ হিবজু আরো জানান, কুয়েতে তিন লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিদের চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সবজি চাহিদা পুরন করা যেতো যদি ইমপোর্ট করা আরো সহজতর হতো। ইতিমধ্যে বাংলাদেশি সবজি ইন্ডিয়া সহ কুয়েতী বা আরাবিয়ানদের কাছে পছন্দের তালিকায়, যার ফলে এ খাত থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব।
এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জাতের সবজি যেমন টমেটু, বেগুন, সিম, ঢেরশ, আলু, পেয়াজ ছাড়াও ফলের মধ্যে আম, সাম্মাম, তরমুজ, আপেল সহ বিভিন্ন তরিতরকারী ফলমূল যা একদিকে যেমন ক্রেতা চাহিদা মিটাচ্ছে অন্যদিকে বাংলাদেশিরা এ ব্যবসা করে এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ হতে যদি কিছু সবজি যা দেশে বেশী উৎপাদন হয় তা কুয়েতের বাজারে আসা সহজ বা বৃদ্ধি করা গেলে রেমিটেন্স ও নিম্ন আয়ের প্রবাসীরা অর্থনৈতিক মুক্তি যেমন পেতো বৃদ্ধি পেতো কর্মসংস্থানও সে বিষয়ে মতামত জানান।
এদিকে যারা শ্রমিক হিসাবে এসব দোকানগুলোতে রোজ হিসাবে কাজ করছেন তারাও খেয়ে দেয়ে ভালো আছেন বলে জানান কর্মচারীরা।
জীবন জীবিকার জন্য এরকম অসংখ্য বাংলাদেশিরা কুয়েতে আছেন যাদের প্রয়োজন একটু সুযোগ, যার উপর দাড় হয়ে সাধারন শ্রমিক থেকে ব্যবসায়ী হওয়া সম্ভব। তাই তারা এগিয়ে যেতে চান আরো সম্ভাবনাকে খুজে বের করতে পাশাপাশি দেশকে আরো এগিয়ে যেতে অবদান রাখতে চান তারা।