আবুল কালাম আজাদ, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি: বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টিকারী করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে সচেতনতায় সিডনিতে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনারে আবিদা আসওয়াদের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যকর্মী আবুল কালাম আজাদ খোকন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি কাজের শুরু ও শেষে ভালোভাবে হাত ধৌত করতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মও মেনে চলতে হবে। আর সংক্রমণের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে সেমিনারে প্রধান বক্তা ছিলেন সেন্ট জর্জ হাসপাতালের ডাক্তার ওয়াহিদা খানম। তিনি করোনাভাইরাসের রোগের প্রক্রিয়া, লক্ষণ, বিস্তার, প্রতিকার এবং করণীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
জনগণের মাঝে সচেতনতা ছাড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন তাজুল ইসলাম, আলী সিকদার, বেলায়েত রবিন, ফয়জুল আজীম চঞ্চল, খালিদ প্রমুখ।
এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বের জাতীয় সমস্যা। এ ভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনে যেসব বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ-
১. তাইওয়ানের বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। পরীক্ষাটা হলো-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে সেটাকে দশ সেকেন্ডের কিছুটা বেশি সময় ধরে আটকে রাখুন। যদি এই দম ধরে রাখার সময়ে আপনার কোনো কাশি না আসে, বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব না হয়। মানে কোনো প্রকার অস্বস্তি না লাগে, তার মানে আপনার ফুসফুসে কোনো ফাইব্রোসিস তৈরি হয়নি অর্থাৎ কোনো ইনফেকশন হয়নি, আপনি সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত আছেন।
২. জাপানী চিকিৎসকদের মতে, সবাই চেষ্টা করবেন যেন আপনার গলা ও মুখের ভেতরটা কখনো শুকনো না হয়ে যায়, ভেজা ভেজা থাকে। তাই প্রতি পনেরো মিনিট অন্তর এক চুমুক হলেও পানি পান করুন। কারণ, কোনোভাবে ভাইরাসটি আপনার মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করলেও সেটি পানির সঙ্গে পাকস্থলীতে চলে যাবে, আর পাকস্থলীর এসিড মুহূর্তেই সেই ভাইরাসকে মেরে ফেলবে।
৩. ভাইরাস শনাক্তকরণের পর কমপক্ষে ১৪ দিন নিজের বাড়িতে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে।
৪. গুরুতর হলে হাসপাতালে ভর্তি জরুরি।
৫. যথাসম্ভব ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন
৬. বড় জনসমাগম এড়িয়ে চলুন
৭. করোনাভাইরাস নাক দিয়ে শ্বাসযন্ত্রের ট্র্যাক্টে আক্রমণ করে। তাই মাস্ক ব্যবহার করা ভালো।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ৩শ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং ৪ হাজার ৬৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ৬৮ হাজার ২৮৫ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
১২৪টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৯৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৬৯ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইতালিতে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৬২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৮২৭ জনের।
অপরদিকে, ইরানে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৩৫৪ জন। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৬৯ এবং মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের। ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২৮১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৪৮ জন।
স্পেনে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২৭৭ এবং মৃত্যু ৫৫, জার্মানিতে আক্রান্ত ১ হাজার ৯৬৬ এবং মৃত্যু ৩। যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ৩২২ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের।
সুইজারল্যান্ডে করোনায় আক্রান্ত ৬৫২ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসে ৬৯৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৭ জন। অপরদিকে জাপানের বিভিন্ন স্থানে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩৯ এবং মৃত্যু ১৫।
নরওয়েতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬২৯, ডেনমার্কে ৫১৪, নেদারল্যান্ডে আক্রান্ত ৫০৩ এবং মৃত্যু ৫, সুইডেনে আক্রান্ত ৫শ, মৃত্যু ১, যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৪৫৬ এবং মৃত্যু ৮, বেলজিয়ামে আক্রান্ত ৩১৪ এবং মৃত্যু ৩, কাতারে আক্রান্ত ২৬২, অস্ট্রিয়ায় ২৪৬, বাহরাইনে ১৯৫, সিঙ্গাপুরে ১৭৮, মালয়েশিয়ায় ১৪৯, অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত ১৩৯ মৃত্যু ৩।
এছাড়া হংকংয়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ১২৬ এবং মৃত্যু ৩, কানাডায় আক্রান্ত ১০৯ এবং মারা গেছে একজন, গ্রিসে আক্রান্ত ৯৯, ইসরায়েলে ৯৭, চেক প্রজাতন্ত্রে আক্রান্ত ৯৪, আইসল্যান্ডে ৮৫, আরব আমিরাতে ৭৪, কুয়েতে ৭২, ইরাকে আক্রান্ত ৭১ এবং মৃত্যু ৭, মিসরে আক্রান্ত ৬৭ এবং মৃত্যু ১।
সান মারিনোতে আক্রান্ত ৬২ এবং মৃত্যু ২, ভারতের আক্রান্ত ৬২, লেবাননে আক্রান্ত ৬১ এবং মৃত্যু ২, থাইল্যান্ডে আক্রান্ত ৫৯ এবং মৃত্যু ১, ফিনল্যান্ডে ৫৯, পর্তুগালে ৫৯, স্লোভেনিয়ায় ৫৭, ব্রাজিলে ৫২, ফিলিপাইনে আক্রান্ত ৪৯ এবং মৃত্যু ২, তাইওয়ানে আক্রান্ত ৪৮ এবং মৃত্যু হয়েছে একজনের।
অপরদিকে রোমানিয়ায় আক্রান্ত ৪৭, সৌদি আরবে ৪৫, আয়ারল্যান্ডে আক্রান্ত ৪৩ এবং মৃত্যু ১, ভিয়েতনামে ৩৮, ইন্দোনেশিয়ায় আক্রান্ত ৩৪ এবং মৃত্যু ১, পোল্যান্ডে ৩১, ফিলিস্তিনে ৩০, জর্জিয়ায় ২৪, চিলিতে ২৩, কোস্টারিকায় ২২, আলজেরিয়ায় ২০, রাশিয়ায় ২০, আর্জেন্টিনায় আক্রান্ত ১৯ এবং মৃত্যু ১।
ক্রোয়েশিয়ায় ১৯, পাকিস্তানে ১৯, ওমানে ১৮, ইকুয়েডরে ১৭, পেরুতে ১৭, এস্তোনিয়ায় ১৬, আলবেনিয়ায় আক্রান্ত ১৫ এবং মৃত্যু ১, হাঙ্গেরিতে আক্রান্ত ১৩, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৩, মেক্সিকোতে ১২, সার্বিয়ায় ১২, আজারবাইজানে ১১, ব্রুনেইতে ১১, ম্যাকাউতে ১০, লাটভিয়ায় ১০, স্লোভাকিয়ায় ১০, বেলারুসে ৯, কম্বোডিয়ায় ৯, পানামা ও মালদ্বীপে ৮ জন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
অপরদিকে বুলগেরিয়া, আফগানিস্তান, লুক্সেমবার্গ, উত্তর মেসিডোনিয়া, তিউনিসিয়া, বসনিয়ায় ৭ জন করে, মরক্কো, সাইপ্রাস, মালটায় ৬ জন করে, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, নিউজিল্যান্ড, ফেঞ্চ গুয়েনা, প্যারাগুয়েতে ৫ জন করে, সেনেগালে ৪, কম্বোডিয়া, লিথুনিয়া, বাংলাদেশ, কিউবা, মার্টিনিক, মলদোভায় ৩ জন করে, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, বলিভিয়া, বুরকিনা ফাসো, ক্যামেরুন, চ্যানেল আইসল্যান্ড, ফায়েরো আইসল্যান্ড, হন্ডুরাস, জ্যামাইকা এবং সেইন্ট মার্টিনে ২ জন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
আন্দোরা, আর্মেনিয়া, জর্ডান, লিথুনিয়া, মোনাকো, নেপাল, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, তিউনিসিয়া, ইউক্রেন, ভুটান, কোস্টারিকা, ভ্যাটিকান সিটি, গিব্রালটার, সার্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং টোগো এবং তুরস্কে একজন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।