মোহন রায়হান: আমার মা। বয়স এখন ৮৬ বছর। অকালে হারিয়েছেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামী, আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈনিক, খ্যাতিমান কৃতিপুরুষ স্বামীকে। হারিয়েছেন ৫৩ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা ছেলে, ৪৩ বছর বয়সী চঞ্চলা মেয়েকে। দেখেছেন ছোট ছোট ভাই-বোনের অকাল প্রয়াণ। জীবন সায়াহ্নে এসে আমার সেই মা কি পারবেন আরো একটি মর্মন্তুদ আশঙ্কার খবর সহ্য করতে? ২৪ জুন করোনা পজিটিভ হওয়ার পর প্রথম ভেসে ওঠে দুখিনি বর্ণমালার মতো আমার সেই মায়ের মুখ। মনে পড়ে স্বজন-বন্ধু, ভক্ত-অনুরাগী-শুভাকাঙ্খী, সহকর্মী, গ্রাম-পাড়া-প্রতিবেশী, দেশ-বিদেশের পরিচিতদের দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অশান্তি। মায়ের অনিদ্রা, অনাহার, চাপাকান্না, ভগ্নশরীর, সকরুণ মুখ ভেবে আমাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। কাউকে না জানিয়ে আমি প্রস্তুত হই অদৃশ্য আততায়ীর বিরুদ্ধে একা যুদ্ধের।
২২ জুলাই ২০২০। বন্ধুদের কয়েকজনকে সাওল হার্ট সেন্টারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম করোনাকালীন সঙ্গ-বিরহের যাতনা, অবরুদ্ধ একাকিত্ব ও দুর্বিসহতা থেকে ক্ষণিক মুক্তির দিনভর আড্ডায়। কিন্তু সবুজ ভাইয়ের খালার মৃত্যু আর কামাল ভাইয়ের বিশেষ অসুবিধার জন্য তারা আসতে পারলেন না। অগত্যা বাদল খান আর তহা মুরাদকে নিয়েই দিনভর চললো আড্ডা আর খানাপিনা।
সন্ধ্যার দিকে একটা ফোন এলো। একটা দুঃসংবাদ যা আমার ভেতরটা তোলপাড় করে দেয়। শারীরিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিক বিপর্যয় আমাকে বেশি কাবু করে ফেলে। খবরটা শুনে কেমন যেন অসুস্থ অনুভব হতে লাগলো। আড্ডা শেষ করে সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরলাম। হঠাৎ গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো। জ্বর। জ্বর। আর জ্বর। সারা শরীরে যেন দাউদাউ আগুনের লেলিহান শিখা লকলক করে জ্বলে উঠল! পুঁড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে শরীর, অথচ প্রচণ্ড শীতে থরথর করে কাঁপছি মাঘের শীতে বাঘ কাঁপার মতন! প্রথমে কাঁথা তারপর কাঁপতে কাঁপতে লকার থেকে কম্বল বের করে গায়ে জড়িয়েও শীত গেল না। সারা বাড়িতে আমি একা! কেউ নেই পাশে! মনে হলো জ্ঞান হারিয়ে ফেলব। শুরু হলো প্রচণ্ড মাথা ব্যথা! জীবনে অনেকবার জ্বর হয়েছে কিন্তু এরকম কখনো হয়নি! রাজনৈতিক জীবনের কঠিনতম নির্যাতনের সময়গুলো মনে করার চেষ্টা করলাম। কতক্ষণ এভাবে কেটেছে জানি না। জ্ঞান ফিরে এলে বুঝলাম গা-ও ব্যথা করছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। প্রচণ্ড ক্ষুধার শকুন যেন নাড়িভুড়ি ঠুকরে খাচ্ছে। অথচ এক গ্লাস পানি ঢেলে খাওয়ার শক্তিও অবশিষ্ট নেই শরীরে। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম, রাত আড়াইটা বাজে। নিজের অজান্তেই একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল চোখের কিনার বেয়ে! কিচ্ছু করার নেই। ১৯৮৩ তে সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী চোখ-হাত বেঁধে তুলে নিয়ে চরম নির্যাতনে আহত করে ফেলে রাখলে, লকাপে এমনই ভীষণ ক্ষুধায় মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যেত। সেটা মনে করে মৃতের মতন পড়ে রইলাম।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে পারভীন বুয়ার একটানা কলিংবেলে ঘুম ভেঙে গেল। কোনমতে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দরজা খুললাম। ফোন দিলাম সাওল হার্ট সেন্টার, বাংলাদেশের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এম. রহমানকে। সব শুনে বললেন, বাসায় নাপা আছে? বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাড়াতাড়ি একটা নাপা খেয়ে নেন, আর কয়েকদিনের জন্য সাওলের গেস্ট হাউসে চলে আসেন।
২৩ তারিখ সকাল ১১টার দিকে সাওলের গেস্ট হাউসে উঠলাম। ডা. রহমান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন, ব্লাড টেস্ট দিলেন। বললেন, আজই করোনাভাইরাস টেস্ট করান। আর, রেজাল্ট যাই আসুক এখন থেকেই আইসোলেশনে থাকেন। প্রোটেকশন সহকারে একজন দেখাশোনা করবে আপনার।
দুপুরে DMFR Molecular Lab & Diagnostics থেকে একটা মেয়ে এসে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা নিয়ে গেল। বিকালে ডা. রহমান প্রেসক্রিপশন দিলেন-
- A-Mectin 6mg 2 tab stat, 1 tab after 12 hours. 2. Azyth 500mg 1 tab every 24 hours. 3. Doxicap 100mg 1 cap every 12 hours. 4. Zinc-B 1 tab thrice daily. 5. Fexo 180mg 1 tab daily at night. 6. Monas 10mg 1 tab daily at night. 7. Doxiva 200mg 1tab 12 hourly. 8. Cavic-C 1 tab dissolving in water 12 hourly. 9. Napa 500mg 1 tab thrice or SOS after food. 10. Acifix 20mg 1 tab twice before food. 11. High protein Diet. 12. Fresh fruits especially citrus fruits. 13. Spicy hot drink every half hourly.
আমি নিয়মিত ব্যায়াম করি। প্রতিদিন সকালে ৫০ মিনিট হাঁটি, ১০ মিনিট দৌঁড়াই। ৩০ মিনিট ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজের পর ৩০ মিনিট যোগসাধনা করি। ৮ তলায় হেঁটে উঠি, নামি। পরিমিত আহার করি। আমার শরীর একদম ফিট। অ্যাজমা এবং হার্টের সমস্যা কনট্রোলে আছে। আমার ইমিউনিটি যথেষ্ট স্ট্রং। কেউ আমাকে সাবধান করলে আমি বড়াই করে বলি, আরে করোনা আমাকে ধরবে কী, আমিই তো করোনাকে ধাওয়া করে ফিরি। আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম, এই জ্বরে আমার করোনা হতেই পারে না। ডা. রহমান যাই মনে করুন, আমার করোনা হবে না।
সাওলের কর্মকর্তা কাজল আর মামুন আমার দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত হলো। ডা. রহমান আর ডায়েটিশিয়ান মিশু আমার সাওল ডায়েট চার্ট চেঞ্জ করে ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ফলমূল, শাকসবজি, ডাল এসবের এক এলাহী ভোজকাব্য রচনা করলেন। পরে যে চার্ট মিলিয়ে খেতে গিয়ে আমি দুদিনে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম।
২৪ তারিখ রাতে কাজল ফোন করে বলল, বস, আপনি তো মোহন রায়হান, লাখো মানুষের শক্তি, সাহস আর প্রেরণার উৎস। অনেক মানুষের বল, ভরসা, ছায়া, আশ্রয় আপনি। সবার দোয়া আছে। আপনার কিছুই হবে না। ভাবছি, মেয়েটার কি মাথা খারাপ হলো হঠাৎ এসব বলছে কেন! জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কী হয়েছে কাজল? বলল, স্যার একদম মন খারাপ করবেন না। আপনার করোনা পজিটিভ।
আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম! নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এও কি সম্ভব? কল্পনারও বাইরে! কী বলছো তুমি! কাজল বলল, জি, স্যার।
না। এ হতেই পারে না। আমি বিশ্বাস করি না। এ রিপোর্ট ভুল। আমি মানি না এ রিপোর্ট। আমি তো আজই সম্পূর্ণ সুস্থ। জ্বর নেমে গেছে। কোনো ব্যথা নেই, দুর্বলতা নেই তাহলে কিসের করোনা? কাজল বললো, আপনি ঠিকই বলেছেন স্যার। আপনার করোনা হয়ইনি, আমিও তাই মনে করি। ঠিক আছে রিপোর্টটা পাঠাও বলে আমি ফোন রাখলাম।
হোয়াটসঅ্যাপে কাজল রিপোর্ট পাঠাল। Molecular Biology Report. Patient Name: Mr. Mohon Raihan. SARS-CoV-2 Specimen: Nasopharyngeal/Oropharyngeal Swab. SARS-COV-2 (COVID-19) Real Time RT-PCR. Test: SARS-COV-2 Positive. হ্যা, রিপোর্ট পজিটিভই বলছে। অনেকক্ষণ শব্দটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। তাহলে দুনিয়া কাঁপানো দুর্ধর্ষ ঘাতক করোনার সাথে আমাকেও লড়তে হবে? একেবারে বাঁচা মরার লড়াই? মনে পড়লো মুক্তিযুদ্ধের সেই মহামন্ত্র Do or Die, একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হলো নিজের মধ্যে। জীবনের সব দুর্যোগ, দুঃসময়ে যেমনটি হয়েছে তেমনই। প্রথমে অবচেতনে একটু ভয়, হতাশা, কষ্ট হলো। পরক্ষণেই সমস্ত শঙ্কা, সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ঝেড়ে সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠলাম। মুক্তিযুদ্ধে শোকের স্তব্ধতার পরেই যেভাবে শক্তিতে বলীয়ান হয়েছিলাম। ছোটবেলায় একটা সিনেমা দেখেছিলাম The Incredible Hulk. নায়ক শুরুতে সবকিছুতে চুপসে যায়, তারপর আস্তে আস্তে শক্তি সঞ্চয় করে দৈত্যের মতন বিশাল মানুষে পরিণত হয়ে প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেয়। আমার কেবলই মনে পড়ছিল মুক্তিযুদ্ধের কথা। যে কোনো বিপদে ছেলেবেলায় দেখা এই সিনেমা আর মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়ে আমার। আমার মূল প্রেরণা একাত্তর। জীবনের সব সংকট, সমস্যা উত্তরণে একাত্তর এক দুর্দমনীয় শক্তির উত্থান ঘটিয়েছে আমার মধ্যে। তাকে ধারণ করে পেরিয়ে গেছি সব বাঁধা বিপত্তি বিপদ। আজ করোনাকে প্রতিহত করতে আমার ভেতরে অনুভব করলাম একাত্তরের সেই তাকত। বাংলাদেশের সব যুদ্ধের মতন করোনা যুদ্ধেও আমাকে লড়তে হবে।
তবুও এই অদৃশ্য আততায়ীর সামনে নিজের ভিতরে চলছিল দোলাচল। একটা মিশ্র অনুভূতি সঞ্চার হচ্ছিল শিরায় শিরায়। করোনার শুরুতেই সহযোদ্ধা পাবনার রশিদের অকাল মৃত্যু! সবার নিষেধ, হুশিয়ারি সত্বেও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়েও আমি আর শিমুল বিশ্বাস মুগদা হাসপাতালে তার জানজায় অংশ নিয়েছিলাম। ছুটে গিয়েছিলাম চারিদিকে নষ্ট মানুষের ভিড়ে একজন সৎ, নির্ভীক ও আমার পরম অবিভাবক কামাল লোহানীর শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে। ছুটে গেছি অসুস্থ প্রিয়জনদের শয্যা পাশে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে।
২১ তারিখ পর্যন্ত আমি সম্পূর্ণ সুস্থ, বলা যায় দাঁপিয়ে বেড়িয়েছি। ২২ তারিখও সারাদিন তরতাজা ছিলাম। চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছি। সন্ধ্যায় সেই শকিং ফোনটা এলো। সাওল হার্ট সেন্টারের আরেক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ফারহান আহমেদ ইমনের স্ত্রী মৌয়ের ফোন। বললো, স্যার ফারহানের করোনা ধরা পড়েছে। ফোনের এপারে আমি স্তম্ভিত হয়ে রইলাম। প্রিয় ফারহানের আক্রান্তের খবরে দিশেহারা লাগছিল। রাতে বাসায় ফিরতেই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো আমার। ২৩ তারিখ আমার করোনা টেস্ট। পরদিন রিপোর্ট পজিটিভ। শুরু হলো আমার করোনা যুদ্ধ।
যুদ্ধে যুদ্ধে কাটা জীবনে এ এক ভিন্ন যুদ্ধের আখ্যান। এ যুদ্ধ নিরস্ত্রের যুদ্ধ! এ যুদ্ধ ঘরে থাকার! এ যুদ্ধ একা থাকার! এ যুদ্ধ জনবিচ্ছিন্নতার! এ যুদ্ধ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে জয় পরাজয়ের আশা নিরাশার এক অব্যক্ত যন্ত্রণার যুদ্ধ! এ যুদ্ধ একান্তই নিজের শরীরের অভ্যন্তরের। জীবনে বহুবার নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা আমি বেশ সাহস এবং মনোবল নিয়েই শুরু করলাম আশ্চর্য সেই যুদ্ধ! সকাল থেকে রাত্রি ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত অবিরাম সে লড়াই! নিয়ম করে ওষুধ খাওয়া, কিছুক্ষণ পরপর উষ্ণ মসলা পানি খাওয়া, গরম পানির গার্গল, প্রোটিন সমৃদ্ধ ও রোগ প্রতিরোধী ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ভিটামিনপূর্ণ খাবার। এসবে আমার কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, সুগার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বিনা হাঁটায়, বিনা শরীরচর্চায় আমি সেসব খেতে বাধ্য হলাম।
যার ফলে ১৫ দিনে আমার ২ কেজি ওজন আর পেট বেড়ে গেছে। যা আমার তিল তিল করে গড়ে তোলা বিনা অপারেশনে হৃদরোগ চিকিৎসা আন্দোলনের সাথে সাংঘর্ষিক। সাওল চিকিৎসা পদ্ধতির মূল বিষয় লাইফস্টাইল পরিবর্তন। যেখানে খাবারের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট পরিহার, শারীরিক অ্যাক্টিভিটিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনায় সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিন শ্বাসতন্ত্র এবং হার্টের রোগীরা, যে দুটোই আমার আছে। আমি অ্যাজমা আর হার্টেরও পেসেন্ট। একদিকে ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ অন্যদিকে এক্সারসাইজ বন্ধ। কী ভয়ানক উভয়সংকট অবস্থা আমার! মনকে যতই শক্ত করি কিন্তু মনের অজান্তে দুর্ভাবনা উঁকিঝুকি দিয়ে যায়। দুশ্চিন্তা হলেই শ্বাস কষ্ট বাড়ে। ইনহেলারের পাফ নেই। কখনো কমে কখনো কমে না। যখন কমে না তখন ভয় পেয়ে যাই। অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেনের রেট মাপি। সাধারণত ৯৫/৯৬/৯৭/৯৮ তে ওঠা নামা করে। একদিন ৯৩ তে নেমে গেলে ভয় পেয়ে গেলাম। অক্সিজেন দেবার জন্য মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট আলোকে ডাকবো ভাবছিলাম। কিন্তু তাকে না ডেকে দরজা খুলে বারান্দায় গিয়ে কয়েকটি ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করার পর দেখি শ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এলো। তারপর থেকে প্রতিদিন আধঘণ্টা ব্রিদিং এক্সারসাইজ আর মাস্ক পরে করিডোরে হাঁটা শুরু করলাম। তাতে মনোবল বেড়ে গেল। পাশের রুমের কাউকে জানতে দেই না ভেতরে আমার কী হচ্ছে, কী অবস্থা।
২৪ ঘণ্টা রুমের দরজা বন্ধ রাখি। খাবার বা ওষুধ দিতে কিম্বা চেকআপ করতে ইন্টারকমে অথবা দরজায় নক করে অপেক্ষা করে। আমি মাস্ক পরে দরজা খুলে দূরত্ব বজায় রাখি। একা থাকাই আমার জীবনের আসঙ্গ। ২৪ বছর একা আছি। গুণের কবিতার মতন আমার ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়ার কেউ নেই। আর রাজনৈতিক কারণে দিনের পর দিন একা থাকতে হয়েছে। হুলিয়া মাথায় নিয়ে কত দিন-রাত একা পালিয়ে থেকেছি। আন্ডারগ্রাউন্ড জীবনে মাসের পর মাস গ্রামে, গঞ্জে, নদীতে, যমুনার চরে, ধানক্ষেত, আখক্ষেতে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। থানায়, জেলখানায়, টর্চার সেলে একা, নিঃসঙ্গ পড়ে থাকতে হয়েছে সেই সতের আঠার বয়স থেকেই। একা থাকা, নিঃসঙ্গতা, জীবনের ঝুঁকি আমার জন্য তাই নতুন কিছু নয়। মৃত্যুকে আমি কখনো ভয় পাইনি কিন্তু অসুখে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যু আমার কখনোই কাম্য নয়। করোনা একাকিত্বের সময়গুলো আমার কাছে তাই বেশ ভারি ছিল। পত্রপত্রিকা, বই পড়ে, লেখালেখি করে, ফেসবুক দেখে, একে-ওকে ফোন করে, ইন্টারকমে অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত দিয়ে সময় কাঁটানোর চেষ্টা করি। আর ভাবি। ভাবনার অখণ্ড সময় আমার।
আর সব ভাবনা ছাপিয়ে ওঠে দেশের বর্তমান অবস্থা! কী হচ্ছে এসব? এ জন্যই কি কিশোর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম? এত অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, দলবাজি, জালিয়াতি, প্রতারণা। বিচারবহির্ভূত হত্যা, ভূলুণ্ঠিত আইনের শাসন। জিকে শামীম, পাপিয়া, ফরিদপুরের রুবেল, বরকত, জেলায় জেলায় একের পর এক বেরিয়ে আসছে রাজনৈতিক মাফিয়াদের ভয়ংকর সব অপরাধের কাহিনী! করোনা এসে উন্মোচিত করে দিল স্বাস্থ্যখাতের সীমাহীন দুরবস্থার চিত্র! মিঠু, সাহেদ, সাবরিনা, শারমিন, আরিফদের কী অমানবিক প্রতারণা! মেজর সিনহা হত্যার মাধ্যমে বেরিয়ে এলো আরেকটি মধ্যযুগীয় নির্মম খুনের চিত্র। একেক সময় মনে হয় একাত্তরের মতন, আবার অস্ত্র হাতে বেরিয়ে পড়ি, এই পাপাত্মাদের শেষ করে দেই। ভেবে দেখেছি, এদেশের মানুষ ৪৯ বছরে দেশের মালিক ছিল শুধু ১৯৭১-এর ৭ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত, ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত, আর এরশাদ পতনের পর আরো একমাস। এটুকুই ছিল বাংলাদেশ।
এসব মর্মপীড়ার পাশাপাশি কাছের মানুষের ক্রমাগত মৃত্যু, এত এত ক্ষমতাবানের অসহায় মৃত্যু, এত প্রতিভাবানের তিরোধান, অল্প বয়সীদের মৃত্যু ব্যথিত করে তোলে। কোনো কোনো মৃত্যু বুকের পাঁজরে শেল মেরে ভেঙেচূড়ে খানখান করে দেয়। আর নিতে পারি না। কান্না পায়। পাবনার রশিদের মৃত্যু, বন্ধু কবি কামাল চৌধুরীর ছোটভাই সামরিক সচিব মোহসীনের মৃত্যু, বন্ধু ছড়াকার অতিরিক্ত সচিব আলম তালুকদারের মৃত্যু, বর্তমান স্বাস্থ্য সচিব স্নেহাস্পদ মান্নানের স্ত্রী কামরুন নাহার জেবুর মৃত্যু, জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকতের মৃত্যু, সাংবাদিক সুমন মাহমুদের মৃত্যু, আমার অফিসের একই বিল্ডিংয়ের “রাপিড পিয়ার”-এর এমডি শহিদুল ইসলাম শেখরের মৃত্যু, অভিভাবক কামাল লোহানী, আনিসুজ্জামান স্যারের মৃত্যু, সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিমের মৃত্যু আমাকে সংক্রামিত করে। মনে হয় আমিও প্রতীক্ষায় মৃত্যুর মিছিলে। যদি সত্যি মৃত্যু এসে দরজায় কড়া নাড়ে? নিজেকে জিজ্ঞেস করি, জীবনের অর্জন কী? তেমন কোনো কালজয়ী রচনা? কোনো মানবকল্যাণ প্রতিষ্ঠান? একটি স্বপ্নের সুন্দর দেশ? না কিছুই না। কখন যে দুচোখ বেয়ে তপ্ত নোনা জল গড়িয়ে পড়ে টের পাই না। শুধু জানালা দিয়ে দূর আকাশের কালো বা নীল মেঘের দিকে অপলক চেয়ে থাকি।
৭ জুলাই কবে আসবে? একলা ঘরে আমি আমার কাঙ্খিত ১৫ দিন অতিক্রান্তের প্রহর গুণি। কেউ ফোনে কেমন আছি জিজ্ঞেস করলে, এমন এক ঘাতক ভাইরাস বহন করেও তা গোপন করে হাসি মুখে বলি, আমি ভালো আছি। আর নির্জন রাত্রিতে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয় ডা. ফারহানের সাথে। আমরা দুই আক্রান্ত ফোনে ফোনে পরস্পরের খবর নেই, পরিস্থিতির পর্যালোচনা করি, একজন আরেকজনকে অভয় দেই, সাহস যোগাই। এভাবেই রণকৌশল স্থির করে আমাকে করোনাযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়েছে। যাতে কেউ ভীত সন্ত্রস্ত বা আতঙ্কিত না হয়ে পড়ে। টেনশনে না থাকে আপনজনেরা। দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, লড়াই-সংগ্রাম দিয়ে গড়া এ জীবনে কাউকে সুখী করতে পারিনি। বরং মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ অনেককেই কষ্ট দিয়েছি। জীবন-মৃত্যুর ক্রান্তিতে দাঁড়িয়ে নতুন করে তাই আর কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি। আবুল হাসানের ঝিনুকের মতন নীরবে মুখ বুঁজে থেকেছি।
বড় কঠিন ছিল সেই স্নায়ুযুদ্ধের কাল। বর্তমান বিশ্বে মানব জাতির সবচেয়ে ভয়ানক শত্রুর সাথে একজন একা অসহায় মানুষের একক যুদ্ধ! জয় পরাজয় একেবারেই অনিশ্চিত! দুটি সপ্তাহকে মনে হয়েছে যেন পুলসিরাতের অনন্তকাল। প্রতি মুহূর্ত মনোবল দৃঢ় রাখার লড়াই করি। কখনো মনে হয়েছে এ যেন আত্মশক্তি পরীক্ষার যুদ্ধ। করোনা প্রতিকারের অগ্রগতির খবর পড়ি। দেশ বিদেশের ডাক্তাররা কে কী বলছে শুনি। যেটা ভালো লাগে পালন করার চেষ্টা করি। এরমধ্যে ভারত থেকে পাঠানো শুভ্রাদি আর বন্ধু রতনের ভিডিও, আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার, বারডেমের তরুণ চিকিৎসক সাকলায়েন রাসেলের ভিডিও আমার মনোবল বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ডাক্তার রাসেলের অক্সিমিটার তথ্য আর ‘প্রোনিং’ সিস্টেম আমাকে অনেক সাহায্য করে। খাবার, ওষুধ, ব্যায়াম, যোগসাধনা, মনোবল চাঙা রাখাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি, নিয়ম কানুন মেনে আমি ভালোই ছিলাম কিন্তু এরমধ্যে একটি তথ্য আমাকে বিচলিত করে। সংক্রমণের নবম দিনে করোনা অ্যাটাক ভয়াবহ রূপ নিতে পারে এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে। তবে সেই আশঙ্কার নবমী সারাদিন ভালোই কাটল। বিকেলে কাজলের সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বললাম। সে আমাকে অভয় দিল, ইনশাল্লাহ কিছুই হবে না আপনার। শুরুর দিন থেকেই আমি অক্সিজেন সিলিন্ডার রেডি রাখাসহ সব ব্যবস্থা করে রেখেছি, বলা আছে কখনো অবস্থা খারাপ হলে সাথে সাথেই যেন পাশের হলিফ্যামিলিতে ভর্তি করা হয়। কাজলকে আবার স্মরণ করালাম। ও বললো, আপনি এসব নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না।
পাঁচটায় অফিস বন্ধ হয়ে যায়। চারিদিকে সুনসান নীরবতা নেমে আসে। জানালা দিয়ে কাঠাল আর আমগাছের সবুজ পাতায় শেষ বিকেলের নরম আলোর লুকোচুরি আর পশ্চিমাকাশের ধূসর মেঘের উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে নিজেকে কেমন নিঃস্ব, রিক্ত, শূন্য মনে হতে থাকে! কোথাও কেউ নেই, কিচ্ছু নেই! ব্যক্তি-জীবনে একটু ভালবাসা ছাড়া চাইনি কিছুই, না পাওয়ার অফুরন্ত তৃষ্ণা নিয়ে হেঁটে এসেছি এতটা পথ। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নেমে আসে। ক্রমশঃ রাতের রোমশ কালো থাবা যেন সবকিছুকে গ্রাস করে নেয়। অন্ধকারে ডুবে যায় চারদিক। মনে পড়ে আজ করোনা কবলের নবম রাত। আজ মহাপ্রলয়ের সম্ভাবনার রাত। এই রাতই হতে পারে জীবনের শেষ ক্ষণ। ঘরের ভেতর পায়চারি করি। চেয়ারে বসি। উঠি। বিছানায় শুয়ে থাকি। ফেসবুক দেখি। টেলিভিশন খুলি। কিছুতেই যেন স্বস্তি নেই। এটা কিসের লক্ষ্মণ? খারাপ কিছু ঘটার আগে আমার এমন লাগে। তবে কি সত্যি সত্যি খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে? মাকে খুব মনে পড়ে। ছেলে-মেয়ের মুখ ভেসে ওঠে। বুক ভারি হয়ে আসে। শ্বাস নিবিড় ঘন হয়ে ওঠে। নাভীমূল থেকে একটা কাঁপুনি উঠে সারা শরীরে তরঙ্গের মতন ছড়িয়ে যায়। মনে হয় প্রথম দিনের মতন ১০৫ ডিগ্রি জ্বর আসবে। ভয় লাগে। মন শক্ত করার চেষ্টা করি। ধুত্তরী কিছুই হবে না, এ আসলে তথ্যের সংক্রমণ। ৭ দিন, ৯ দিন, ১৪ দিন এসব কিছুই না। মরণ এলে মরব। নিজেকে বলি, তুমি মোহন রায়হান! তুমি মৃত্যুকে ডরাও! মানুষ তোমার তিলকে দিয়েছে ‘সাহসী মানুষ’-এর তকমা। তোমার প্রথম কবিতার বইয়ের নাম ‘জ্বলে উঠি সাহসী মানুষ’। :আমরণ বিপ্লবী’ বলে ডাকে সহযোদ্ধারা। একজন বিপ্লবী কি মৃত্যুকে ডরায়? কত অ্যাকশনে সাক্ষাৎ মৃত্যুকে জয় করে ফিরে এসেছ তুমি। ‘অ্যাকশন অ্যাকশন-ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ছিল মিছিলে তোমার প্রিয় স্লোগান। কতবার তুমি আবৃত্তি করেছ- ‘মৃত্যুর জানাজা মোরা কিছুতেই করিব না পাঠ।’ গা আর মন ঝাড়া দিয়ে নড়েচড়ে বসি। ছেলেবেলায় সিরাজগঞ্জের মমতাজ সিনেমা হলে সেকেন্ড ক্লাসে ফিরে যাই। ‘Incredible Hulk’ হয়ে যাই। ফিরে যাই ১৯৭১-এ। দরজা খুলে বারান্দায় দাঁড়াই। রাস্তার পাশের আম গাছটার সবুজ পাতা ভর্তি ডালটা বারান্দার গ্রিল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। কী সুন্দর ঝিরিঝিরি বাতাস! অদূরে উঁচু টাওয়ারে ঝলমলে আলো। মন ভালো হয়ে যায়। গলা ছেড়ে গাইতে থাকি- ‘এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে মন যেতে নাহি চায়।’
কিছুক্ষণ আগে যে রাত কুৎসিত আর ভয়াবহ অন্ধকার লাগছিল, সে রাতকে এখন কী ভীষণ সুন্দর, মোহময়ী অপরূপা লাগছে। এক অনির্বচনীয় সুখ আর আনন্দে হৃদয়মন ভরে নিয়ে ঘরে ফিরে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। সকালে যখন ঘুম ভাঙল চোখ মেলে মনে হলো, আমি কোথায়? আমি কি বেঁচে আছি? কোথায় শুয়ে আছি? আমার ঘরে না কবরে? আস্তে আস্তে সম্বিত ফিরে এলো। দেয়ালের ঘড়ি, নীল পর্দা, টেলিভিশন দেখে বুঝতে পারলাম, আমি বেঁচে আছি। ভালো আছি। আনন্দাশ্রুতে চোখ ভেসে যায়। উঠে পড়লাম। দশদিনের আশঙ্কা কেটে গেছে। বাকি চারদিন আশা করি ভালোভাবেই পার হয়ে যাবে।
আরো চার দিনের অপেক্ষা। অপেক্ষা সত্যি কষ্টের, সে আনন্দের হোক কিম্বা বেদনার। চারদিন যেন আর কাটে না। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক জল্লাদের কারাগার থেকে মুক্তির দিন গুণি।
৭ তারিখ সকাল ১০টায় পপুলার হাসপাতালের দুজন টেকনিশিয়ান এসে করোনা পরীক্ষার নমুনা নিয়ে যায়। চতুর্থ দিন থেকেই আমার তেমন কোনো সিম্পটম ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই আমার দ্বিতীয় করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ আসবে। আমি মোটামুটি সুস্থ। তবু মনের গহীন কোণে একটা মিহি আশঙ্কা কাজ করছিল। যদি মিরাকল কিছু ঘটে যায়, যদি আবারও পজেটিভ হই!
৭ তারিখ সকাল ১০টায় নমুনা নেয়ার পর থেকে ৮ তারিখ দুপুরে রেজাল্টের আগ পর্যন্ত সময়টুকুর অনুভূতি ব্যক্ত করা কোনোদিনই সম্ভব হবে না। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত যখন কোনো খবর পেলাম না তখন পপুলারেরর কনটাক্ট পার্সনকে নিজেই ফোন দিয়ে বললাম, আমার রিপোর্টটা এখনও পাইনি। তিনি বললেন, স্যার আমি এখনই দেখছি। দুপুর ৩টায় মোবাইল ফোন টুং করে বাজলো। ওপেন করে দেখি, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেসেস। দুরুদুরু বুকে চোখ খুললাম। ছোট্ট একটা টেক্সট। এত উত্তেজিত ছিলাম যে প্রথমবার পড়ে কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। যে শব্দটি খুঁজছিলাম সেটি চোখেই পড়ল না। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আবার মেসেসটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করলাম। Mr. Mohon, 64, Male, from Dhaka, is tested Negative at Popular Diagnostic Centre Limited for COVID19 on 2020-08-08 (yyyy-mm-dd), sample received on 2020-08-08T16:00. Please contact 16263 for further advice if needed. – Directorate General of Health Services.
তাড়াতাড়ি ইনটারকমে ১০৩-এ কল দিলাম। অপর প্রান্তে হ্যালো বাজতেই বললাম, কাজল, সেলিব্রেটের আয়োজন করো। আমার করোনা নেগেটিভ। কাজল চিৎকার করে উঠল, ও গড! ইট ইজ আওয়ার গ্রেট সাকসেস, ইট ওয়াজ আওয়ার চ্যালেঞ্জ। স্যার, বলেছিলাম না আপনার কিছুই হবে না। আপনার মায়ের দোয়া, এত মানুষের ভালবাসা আপনাকে সুস্থ করে তুলেছে। হ্যা, আমরা শিগগির পার্টি করবো। করোনা বিজয় পার্টি। বললাম, তাহলে আগেই কাউকে কিছু বলো না। ওইদিন সবাইকে ডেকে সারপ্রাইজ দেবো।
এ এক সত্যি নবজন্ম। আমার চেয়ে কত কম বয়সের, কত কাছের মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আমি বেঁচে আছি। ৯ জুলাই রাতে দুনিয়া কাঁদানো ভয়ঙ্কর করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে আমি ঘরে ফিরেছি। এ চৌদ্দ দিন আমাকে যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, আমার যুদ্ধভরা জীবনের তা এক অনন্য অভিজ্ঞান। আমি আবারও বুঝেছি মানুষের সবচেয়ে বড় ইমিউনিটি তার মনোবল ও সাহস। যোদ্ধা-লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছেন, ‘তারাই জিতবে যাদের আত্মবিশ্বাস আছে।’ কার্ল মার্কস বলেছেন, ‘চাই সাহস, আরো সাহস, স্পর্ধিত সাহস।’ আমি এ দুই অস্ত্র দিয়েই জয়ী হয়েছি কালের করোনাযুদ্ধে।