রাকিব হাসান, লুবলিয়ানা, স্লোভেনিয়া: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার স্লোভেনিয়ার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলেস শাবেদার গোটা স্লোভেনিয়া জুড়ে করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছেন।
৭,৮২৭.৪ বর্গমাইল আয়তনের স্লোভেনিয়া ২১ লক্ষ লোকের বসবাস। স্লোভেনিয়া তাঁর উত্তরে অস্ট্রিয়া, পশ্চিমে ইতালি, উত্তর-পূর্বে হাঙ্গেরি এবং দক্ষিণ-পূর্বে ক্রোয়েশিয়া ও উত্তরে আড্রিয়াটিক সাগরের দ্বারা সংযুক্ত।
এর মধ্যে স্লোভেনিয়ার পশ্চিমে প্রায় ১৯৯ কিলোমিটার সীমারেখা ইতালির সীমান্ত রয়েছে এবং ঐতিহাসিকভাবে ইতালি এবং স্লোভেনিয়া বিভিন্ন ভাবে একে অপরের সাথে সংযুক্ত। স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানা হলেও প্রকৃতপক্ষে ইতালির ত্রিয়েস্তে ছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বড় শহর যেখানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্লোভেনিয়ান জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। এছাড়াও স্লোভেনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার আড্রিয়াটিক সাগরের উপকূলবর্তী এলাকা কপার, ইজোলা, পোর্তোরস কিংবা ক্রোয়েশিয়ার পুলা অথবা পরেচ এ সকল জায়গায় প্রচুর ইতালিয়ানদের বসবাস রয়েছে। এমনকি এ সকল জায়গায় যাঁরা স্থায়ী হন তাঁদেরকে স্লোভেনিয়ান অথবা ক্রোয়েশিয়ান এবং ইতালিয়ান দুইটি ভাষায় দক্ষ হতে হয় এবং এ সকল জায়গার শিক্ষা-প্ৰতিষ্ঠানগুলোও উভয় ভাষায় পাঠদান করে থাকে।
স্লোভেনিয়ার সাথে ইতালির সীমানা বলতে গেলে প্রায় অরক্ষিত এবং যেহেতু স্লোভেনিয়ার জীবন যাত্রা ইতালির তুলনায় অনেকটা কম ব্যয়বহুল তাই গাড়ির পেট্রোলিয়ামসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে প্রচুর ইতালিয়ান স্লোভেনিয়াতে আসে। সাগর পথ কিংবা স্থলপথ সব দিক থেকেই স্লোভেনিয়া এবং ইতালি একে-অপরের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। আবার ব্যবসা কিংবা চাকুরি অথবা অবকাশ যাপন বা ভ্রমণ সব দিক থেকেই প্রচুর স্লোভেনিয়ান ইতালিতে যাতায়াত করেন। স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানাতে অবস্থিত ইয়োজে পুচনিক এয়ারপোর্ট খুব বেশি বড় না হওয়ায় এবং একই সাথে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটে পর্যাপ্ত ফ্লাইট না থাকায় স্লোভেনিয়ার বেশিরভাগ মানুষই ভেনিসের মার্কো পোলো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, মিলানের মালপেনসা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এবং বোলোনিয়ার গুগলিয়েমো মার্কনি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল।
তাই প্রত্যেক দিন স্লোভেনিয়া থেকে হাজারো মানুষ ইতালিতে যাতায়াত করে ঠিক তেমনি ইতালি থেকেও অনেক মানুষ কোনও না কোনও কারণে স্লোভেনিয়াতে আসে। ইউরোপের ইতালি এখন সবচেয়ে বিপদজনক অবস্থানে আছে এ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দিকটি বিবেচনায়। তাই ইতালি থেকে যে কোনও সময় স্লোভেনিয়াতেও এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে সেটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যেহেতু স্লোভেনিয়া আয়তনে খুবই ছোটো এবং অনেক কম জনসংখ্যার একটি দেশ তাই স্লোভেনিয়া থেকে সহজে এ ভাইরাসের বিস্তৃতি হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া এ সকল দেশে ছড়িয়ে যেতে পারে। তবে অস্ট্রিয়া ইতোমধ্যে যেভাবে ইতালির সাথে সাময়িকভাবে রেল ও সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে স্লোভেনিয়ার পক্ষে সেটা করাটা অনেকটা অসম্ভব।
ভাইরাসের বিস্তাররোধে ইতোমধ্যে ইউনিভার্সিটি অব প্রিমর্সকা সহ কপার, পোর্তোরস, ইজোলা অর্থাৎ আড্রিয়াটিক সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে অবস্থিত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাময়িকভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে স্লোভেনিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেওয়া সর্বশেষ বিবৃতি অনুযায়ী স্লোভেনিয়াতে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত কাউকে পাওয়া যায়নি।