আখি সীমা কাওসার, রোম, ইতালি প্রতিনিধি: নিষ্ঠুর করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে ইতালি যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। রেহাই পায়নি বাংলাদেশিরাও এ পর্যন্ত ৯জন প্রবাসী বাংলাদেশি করোনার নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে চলে গেলেন পরপারে। তবে আশার কথা হলো এই সপ্তাহে সর্বনিম্ন মৃত্যুর কথা শোনা গেল গতকালকে আস্তে আস্তে ইতালিতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমতির দিকে। জনমনে কিছুটা হলেও শঙ্কা কেটে যাচ্ছে, স্বপ্ন দেখছে আগামীর সুন্দর একটি ইতালি দেখার। গত কয়েকদিনে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই কম ছিলো । তবে আশার সঞ্চার করে সুস্থতার সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। বিভিন্ন খবর মাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা গেছে আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি। কিন্তু তার মধ্য অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছেন।
এপর্যন্ত ঠিক সর্বমোট কতজন প্রবাসী বাংলাদেশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত আছেন সে সম্পর্কে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি রোম বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে। বাংলাদেশ দূতাবাস এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেনি যার কারণে বাংলাদেশিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন নিউজ মিডিয়া এর তথ্য মতে আশংকা করা হচ্ছে এই সংখ্যা প্রায় ষাটের কাছাকাছি হতে পারে। করোনায় মৃত উল্লিখিত নয় বাংলাদেশিদের মধ্যে ২০ মার্চ, ২০২০ প্রথম মারা যান গোলাম মাওলা (৫৫) নামে এক প্রবাসী। তারপরে ৩০ মার্চ, ২০২০ মারা গেছেন অপু আহমেদ (৪২), ২ এপ্রিল, ২০২০ মজিবুর রহমানের (৪৬), ৭ এপ্রিল, ২০২০ বেরগামো শহরে মারা যান মো. সালাউদ্দিন ছৈয়াল (৪২), ৮ এপ্রিল, ২০২০ ইতালির রোমে মৃত্যু হয় আনোয়ার হোসেন হিরু (৭২)এবং একইদিন বেরগামো শহরে মারা যান মিজানুর রহমান (৪৫), ১১ এপ্রিল, ২০২০ শনিবার বিকালে মানিক মিয়া (৪১) নামে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয় মিলানে। ১৬ এপ্রিল, ২০২০ মিয়া শাহাজান নাম সিলেটের এক প্রবাসী মারা যান ক্রেমনা হাসপাতালে। প্রথমে শাহাজানের মৃত্যু হয় তার নিকটে বসবাসরত অন্যদেশের একজন অভিবাসীর কাছ থেকে সে আক্রান্তের মাধ্যমে বলে জানা গেলেও পরে হাসপাতাল থেকে মরদেহ প্রদানের সময় সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা হয় তিনি শাসকষ্ট জনিত রোগের কারণে মারা গেছেন। ১৮ এপ্রিল, ২০২০ মিলানে মারা যান মোহাম্মদ ফিরোজ (২৫) গত ২৪ এপ্রিল, ২০২০ ইতালির ভেনিসে নোয়াখালী জেলার শাহ্জাহান (৬০ ) মারা যান। উনার পরিবারের সূত্র থেকে জানানো হয় উনি করোনা ভাইরাসে মারা যাননি। কিন্তু ২৬ এপ্রিল, ২০২০ হাসপাতাল থেকে জানানো হয় উনি করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন। পরে পরিবারের লোকজন তার মৃত্যু করোনা ভাইরাসে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং স্থানীয় ইতালিয়ান পত্রিকায়ও এই সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে, কারণ তখন কেবলমাত্র ভেনিসে ঐ প্রথম একজন প্রবাসী বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসে মারা গিয়েছিল।
ইতালিতে করোনায় বিপর্যস্ত প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে অনেকেই এবং কিছুসংখ্যক বাংলা কমিউনিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের ফান্ড থেকে অসহায়দের সহযোগিতা করা যাচ্ছেন। মিলান কেন্দ্রীয় জামে মসিজদের ইমাম জুনায়েদ সোবহান জানিয়েছেন ইতিমধ্যে তার মাধ্যমে মিলানে মারা যাওয়া পাঁচ বাংলাদেশির জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেছেন সম্পূর্ণ মুসলিম ধর্মের রীতিনীতি মেনে এবং মরহুমদের পরিবারদের খাদ্য সামগ্রী সহ যাবতীয় সহযোগিতা করে যাচ্ছে মিলান স্টাডি ফোরামের সদস্যরা। করোনা সংক্রমণ রোধে ইতালিতে লকডাউনের সময় ৩ মে, ২০২০ পর্যন্ত বহাল থাকলেও কিছু নিয়ম কানুন এর মাধ্যমে বিভিন্ন রকম দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে। কারণ ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক চাকা বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। তাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ইতালি সরকারের এই উদ্যোগ। উল্লেখ থাকে যে, ইতালিয়ানদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের জন্য ইতালি সরকার, অর্থনৈতিক সাহায্য হিসেবে বোনাস ঘোষণা করেছে, যা ইতালিতে একটি মাইলফলক। ইতালিতে এপর্যন্ত করোনার প্রকোপে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ হাজার ৬৪৪ জন। তার মধ্যে বয়োবৃদ্ধের সংখ্যা বেশি। সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন ৬৪ হাজার ৯২৮ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৫ জন বলে জানা গেছে।