মো: জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়, রিয়াদ, সৌদি আরব প্রতিনিধি: মহান আল্লাহর রহমতের পানে চাহিয়া আছে সবাই, আজ বিশ্ব জুড়ে করোনা আতংকে কাটছে প্রবাসীদের দিন, নীরবে কর্মহীন অবস্থায় কেমন আছেন প্রবাসীরা। কোম্পানী বন্ধ, বাইরে কাজ নেই, লকডাউন, রুমে বন্ধী জীবন, ব্যবসা বন্ধ, নিজে চলার পয়সাও নেই। সবসময় করোনা আতংক, নিজে মারা গেলে লাশটা দেশে যাবে কিনা তাই নিয়েও সন্দেহ! অন্যদিকে কোন প্রিয়জনের মৃত্যুতে দেশে যাবার সুযোগটাও নেই কারণ নিরাপত্তার জন্য ফ্লাইট বন্ধ। প্রবাসীরা কদিন আগে নিজ দেশের বোঝা হলেও এখন নিজেই নিজের কাছে বোঝা, নিজেই চলতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রবাসীর ক্লান্তিমাখা ও অসুস্থ শরীরটা এখানে থাকলেও মনটা ঠিকই পড়ে থাকে মাতৃভূমিতে। প্রতিনিয়ত মনটা কাঁদে নিজ প্রিয়জনের জন্য। নিজ মাতৃভূমির জন্য। লাখো প্রবাসীর একটাই চিন্তা, আমার কিছু হলে আমার পরিবারের কি হবে? যেখানে নিজের ভবিষ্যতটাই অনিশ্চিত, সেখানে নিজের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রায় দিশেহারা। তাই যেকোন উপায়ে পরিবারের জন্য টাকার ব্যবস্থা করে পাঠাতে পারলেই মহাখুশি। আজও অসহায় প্রবাসীরা এমন একটা ভোরের অপেক্ষায় আছে, কখন সে ঘুম থেকে উঠে শুনতে পাবে পুরো পৃথিবী সুস্থ হয়ে গেছে।মহামারী করোনার ঝড় থেমে গেছে। মহামারি করোনায় কেমন আছেন চাঁদপুর শাহরাস্তির প্রবাসী মাইন উদ্দিন- সমসাময়িক বিষয়ে তার সাথে কথা হলে- মাইন উদ্দিন বলেন, প্রবাসীরা একটাই স্বপ্ন দেখে, কখন ফ্লাইট চালু হবে, কখন সে দেশে যাবে, কখন সে মাকে জড়িয়ে ধরবে, সেই কাংখিত সময়ের প্রহর গুনছে লাখো প্রবাসী। স্বদেশে ঘরে বসে কাঁদছে লাখো প্রবাসীর মা ও পরিবার। তার খোকা কবে ফিরবে আমি কখনো ভাবিনি প্রবাসে এসে পরিবারহীন এমন দুরবস্থায় থাকতে হবে, আগে যাও কাজ করে খেতাম আজ তাও বন্ধ, ঘরে বসে থেকে কয়দিন চলা যায়৷ কার কাছে হাত পেতে সাহায্য নিবো? আমার মতই সকলের অবস্থা, দুতাবাসে খাদ্য সহায়তা দেয় শুনে হোয়াটস অ্যাপ এ মেসেজ দিলাম ৫/৬ দিন হয় তার কোন উত্তর পাইনি, আমি যে মেসেজ দিলাম তা পড়েও দেখেনি। আমরা প্রবাসীরা কারো আশা করে প্রবাসে আসিনি, বাংলাদেশ দূতাবাস বা সরকারের কাছে খাদ্য ভিক্ষা চাইবো তাও চিন্তা করিনি, আজ অবস্থার কারণে হয়তো উনাদের কাছে সহায়তা চাইছি, তাও উনাদের দেয়া বিজ্ঞপ্তি দেখে, আমরা বছর ধরে রেমিট্যান্স দেই, আমরা রেমিট্যান্স যোদ্ধা।

৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে তখনকার সময়ে যারা দেশের জন্য লড়াই করেছে আজ তারা মুক্তিযোদ্ধা, ঘরে বসে মাসে মাসে ভাতা পাচ্ছেন। আর ৭১ এর পরে যারা দেশের মাটি ছেড়ে পরের দেশে এসে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কলুর বলদের মত দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেই চলেছি তারা কি রেমিট্যান্স যোদ্ধা নয়? তারা রেমিট্যান্স হিসেবে খেতাব পায়না- ভাতা পাওয়ার যোগ্য নয় কি? কেউ দশ বছর, কেউ বিশ বছর, আবার কেউ ৩০/৪০ বছর ধরে দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়, সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশে গিয়েও সরকারি ভাবে ৫ টাকাও পায়না, উল্টো নিজের দেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকেই গালাগাল শুনেই নিজ গ্রামে ফিরে যেতে হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার মাধ্যমেই প্রবাসীদের পরিবারের জন্য মাসিক ভাতা, সাস্থ্যসেবা বীমা, প্রবাসী সন্তানদের শিক্ষা কৌটা বাস্তবায়ন করুন। শুধু মুখ দিয়ে রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলে খুশি না করে তা সংসদে লিখিতভাবে পাস করে বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা নিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে চিরকাল প্রবাসী ও প্রবাসীদের পরিবার গুলি দোয়া করবেন। আজ করোনায় কর্মহীন প্রবাসীদের দ্রুত খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি, হোয়াটস অ্যাপ এ আবেদন না নিয়ে মোবাইল নাম্বারে লোকেশন নিয়ে সেই অনুযায়ী খাদ্য সহায়তা দিন, সামনে রামাদান আমরা কি করে চলবো, কখনো, কোন দিন আমরা প্রবাসীরা বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে নিজেদের জন্য কিছুই চাইনি, এই বিপদের সময়ে দয়া করে একটু সহযোগিতা করুন। অসহায় কর্মহীন প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ান।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বলেও ইকোনমিক মিনিস্টার ডক্টর মো: আবুল হাসান জানিয়েছেন- তিনি বলেন আমরা ধারাবাহিক ভাবেই তা বাস্তবায়ন করে যাবো, খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি প্রবাসীদের সাস্থ্যসেবা দেয়ার লক্ষে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশি ডাক্তারদের নিয়ে হ্যালো ডাক্তার নামে একটি সাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করেছি, এবং সেখানে সকল ডাক্তারদের মোবাইল নাম্বার দেয়া আছে, ঘরে বসেই প্রবাসীরা কল স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবেন, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশি মান্যবর রাস্ট্রদূত গোলাম মসীহ এই ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন । আর আপনারা জানেন আমরা যে দেশে থাকি সে দেশের আইন মেনেই সকল কাজ করতে হয়।
হে আল্লাহ্, তুমি বাংলাদেশের সকল প্রবাসী ভাই-বোনদের হেফাজত কর এবং সুস্থ ও নেক হায়াত দান করুন – আমিন।
লেখক: সাংবাদিক, নাট্যকার, টিভি ব্যাক্তিত্ব , কবি, লেখক।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি – রিয়াদ বাংলাদেশ থিয়েটার।
পেসেন্ট ও পাবলিক রিলেশন অফিসার –
ঢাকা মেডিকেল সেন্টার -DMC,বাথা, রিয়াদ –
মার্কেটিং ডিরেক্টর -প্রবাসী সেবা কেন্দ্র -EDC- বাথা, রিয়াদ সৌদি আরব।