সিকদার গিয়াসউদ্দিন:
একজন সংগঠক, সংগ্রাহক, জনযোদ্ধা, রাজনীতিক, সাংবাদিক সকলের প্রিয় সুমন মাহমুদ বাবুল এখন পরপারে না ফেরার দেশে। তার চিকিৎসায় চিকিৎসক ও নার্সদের আপ্রাণ আন্তরিক প্রচেষ্টার কোন কমতি ছিলোনা। তবুও বিধ্বংসী করোনা ভাইরাসের ছোবল থেকে তিনি রক্ষা পেলেন না। কোভিড-১৯’য়ের উপসর্গের সংক্রমণে আক্রান্ত হলে তিনি ঢাকাস্থ আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি হন।চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবশেষে ২২ মে, ২০২০ শুক্রবার (পবিত্র রমজান মাসের জুমাতুল বিদা’র দিন) ঢাকাস্থ আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)।
৬০’র দশকের ছাত্রলীগ নেতা, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা আন্দোলন, সংগ্রাম ও জনযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, নিউক্লিয়াস, মুজিব বাহিনী ও স্বাধীন বাংলাদেশের ভুমিতেই জন্ম নেয়া প্রথম রাজনৈতিক দল জাসদের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, পরবর্তিতে বিশিষ্ট সাংবাদিক ছিলেন সুমন মাহমুদ বাবুল। ১৯৭১’পূর্ব অবিভক্ত ছাত্রলীগ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বিএলএফ’র সাথে সম্পর্কিত সকলেই এবং গবেষক, রাজনীতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও সহকর্মীদের অনেকেই গভীর শ্রদ্ধা, শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন! মেনে নিতে পারেননি। স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের সকলের কাছে তিনি একজন অত্যন্ত সহজ-সরল, অমায়িক, মিতভাষী, ভদ্র ও বিনয়ী, ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। নীরবে নিভৃতে থেকে কাজ করতে ভালবাসতেন।

তবে যে পরিচয়টি সুমন মাহমুদ বাবুলের জীবনকে সবচাইতে বেশী পরিচিত করেছে এবং তাঁকে মহিমান্বিত করে তুলেছে তা হচ্ছে তিনি একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক ও মুক্তমনা। আপন পরিচিতির গন্ডির বাইরেও বিশিষ্টজন সহ দেশ ও বিদেশের অনেকের কাছেই তিনি নিউক্লিয়াস, বিএলএফ, আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন ও সংগ্রাম, সশস্ত্র জনযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ স্বাধীন বাংলাদেশের ‘জীবন্ত আর্কাইভ’ হিসাবে বিবেচিত ছিলেন। কারণ এতদসংক্রান্ত হাজার হাজার ছবি ছাড়াও অনেক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত নানা তথ্য-উপাত্ত ইত্যাদি যা এখন মূল্যবান প্রামাণ্য দলিল হিসাবে বিবেচিত বলে মনে করেন রাজনৈতিক বোদ্ধা, বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞজন সহ সাধারণের অনেকেই। স্বাধীনতা পূর্ববর্তি ও পরবর্তিতে রাজনৈতিক কারণে কখনো কখনো ভূত হিসাবেই জানতো বলে একসময়কার ছাত্রনেত্রী ও মহিলা জয় বাংলা বাহিনীর সদস্য লুৎফা হাসীন রোজী ও ফেরদৌসী কাজী লিনু (লিনু হক) জানিয়েছেন। নামটি অনেকেই নিউক্লিয়াসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও মুজিব বাহিনীর গোয়েন্দা প্রধান কাজী আরেফ আহমেদের দেয়া বলে মনে করেন। বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গবেষক মহিউদ্দীন আহমেদ লিখিত বইয়ে সুমন মাহমুদের বিষয়ে ও সুমন মাহমুদ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য উপাত্তের কথা জানা যায়। যতই দিন যাবে সুমন মাহমুদ কর্তৃক সংগৃহীত ছবি, তথ্য উপাত্ত থেকে আগামী জমানার সন্তানেরা, গবেষক ও ঐতিহাসিকরা উপকৃত হবেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি নিউক্লিয়াসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর ক্যাষ্ট্রো খ্যাত সিরাজুল আলম খানের সাথে ঘনিষ্ট ছিলেন। সুমন মাহমুদ বাবুলের মৃত্যুতে জেএস ডি, বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ, নাগরিক ঐক্য সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শ্রদ্ধা, শোক ও ভালবাসা জানিয়েছেন। শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তা ছাড়াও শত শত শুভানুধ্যায়ী, সাংবাদিক, সহকর্মী বন্ধুবান্ধব ও স্বজনেরাও শোকপ্রকাশ করেছেন। শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও সমবেদনা জানিয়েছেন। সুমন মাহমুদ মৃত্যুকালে স্ত্রী বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. পারভীন শাহিদা আকতার, এক ছেলে ডাক্তার (দেশেই থাকে) ও এক মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার (জার্মানীতে থাকে) সহ অসংখ্য স্বজন, বন্ধুবান্ধব, গুণগ্রাহী ও শুভানূধ্যায়ী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর।

কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যবিধি জনিত কারণে তাঁর প্রতি শেষ সম্মান প্রদর্শনেরও উপায় নেই বলে অনেকেই আফসোস করেছেন। জানাজার কাতারে সামিল হতে না পেরে অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অবশেষে তিনি এখন বাবা-মা’য়ের পাশে বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত। বাঙালি জাতির গৌরব বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সুমন মাহমুদ বাবুলের পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। পরম করুনাময় মহান আল্লাহপাক সকলের প্রিয় সুমন মাহমুদ ভাইকে জান্নাতবাসী করুন। (তথ্যসূত্র: বিভিন্ন বিশিষ্ট জনের ফেইসবুক স্ট্যাটাস; ছবি ও কৃতজ্ঞতা: রুবেল ২৩ মে, ২০২০)
লেখক:লাসভেগাস, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী;
নির্বাহী সদস্য-কানেক্ট বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল; সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক-কমিটি ফর ডেমোক্রেসী ইন বাংলাদেশ,যুক্তরাষ্ট্র;সাবেক সদস্য সচিব-মুক্তিযুদ্ধ চেতনা পরিষদ,যুক্তরাষ্ট্র;সাবেক প্রতিষ্ঠাতা আহ্ববায়ক-কর্ণেল তাহের স্মৃতি সংসদ,যুক্তরাষ্ট্র।