প্রেস বিজ্ঞপ্তি: সাম্য, মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ ও সমাজ বিনির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে ভার্চুয়ালি পালিত হয়েছে প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।
২৯ আগস্ট ২০২০, শনিবার লন্ডনভিত্তিক অনলাইন টেলিভিশিন টিভি১৯ এর পক্ষ থেকে ‘ভালোবাসো মোর গান’ শিরোনামে পালন করা হয়েছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ভার্চুয়াল এ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে ঢাকা থেকে যোগ দেন কবির নাতনি খিলখিল কাজী ও আবাগা ।প্রখ্যাত কবি, শিশুসাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আল ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনা গান ও আবৃতিতে অংশ নেন জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা নাহিদ নাজিয়া, বিশিষ্ট গীতিকার ও সঙ্গীতশিল্পী তপন খান, সাংবাদিক শেখ মহিতুর রহমান বাবলু প্রমূখ। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ কাজী সব্যসাচীর নাতনি, খিলখিল কাজীর ভাই বাবলু কাজীর কন্যা শিশুশিল্পী কাজী আবাসা ইসলামেরে সংগীত পরিবেশনা ।
নজরুল দৌহিত্রী খিলখিল কাজী তার দাদুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন ১৯৪২ সালে দাদু অসুস্থ হয়ে পড়েন । দেখতে দেখতে পেরিয়ে যায় ১১টি বছর। ঐ ১১ বছর তাঁকে তেমন কোন চিকিৎসা দেয়া হয়নি। তিনি বলেন বাবার চিঠি থেকে জানতে পেরেছি ঐ সময় অর্থ ও চিকিৎসার অভাবে দারুন কষ্ট পেয়েছেন দাদু। তিনি আরো বলেন, বাবা কাজী সব্যসাচী পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়ে বার বার পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে চিঠি লিখে জানান তার বাবাকে পশ্চিমবঙ্গে শুধুমাত্র মুসলমান হিসাবে দেখা হচ্ছে , তারা পাকিস্তানে আসতে চান। কিন্তু এর কোন সাড়া সেসময় দাদু পাননি। এর প্রায় ১১ বছর পর একটি নিরাময় কমিটি গঠন করে , চাদাঁ তুলে দাদুকে লন্ডন এবং ভিয়েনায় নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে চিকিৎসা ব্যর্থ হলে কবি পত্নী তাকে নিয়ে কলকাতা ফিরে আসেন। খিলখিল কাজী বলেন, আজ বিশ্বমানবতার এই ভয়ংকর সময়ে কাজী নজরুল ইসলামের আশ্রয় সমাজ ও সংস্কৃতিতে অনেক বেশি প্রয়োজন। লন্ডনভিত্তিক অনলাইন টেলিভিশন tv19online.com আয়োজিত ‘ভালোবাসো মোর গান’ অনুষ্ঠানে দাদুর সঙ্গে আমার যত স্মৃতি, অজানা কথা তুলে ধরব। এ আয়োজনে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোয় আমি আনন্দিত, সম্মানিত।’খিলখিল আরো বলেন, নজরুল সাম্যের কথা বলেছেন, কখনোই তিনি ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রশ্রয় দেননি। আজ ধর্মীয় উগ্রতা বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় নজরুলকে আরও বেশি প্রয়োজন। তার আদর্শকে ভালবাসতে হবে, তার চেতনাকে ধারণ করতে হবে। আজ জাতিগত দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িকতার চেষ্টা হতো না- যদি নজরুলের সৃষ্টিকে ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় ছড়িয়ে দেয়া যেত।
টিভি১৯ সম্পাদক শেখ মহিতুর রহমান বাবলু বলেন, নজরুলের জন্মলগ্নে তাঁর পরিবারের সকল সদস্য সুশিক্ষিত ছিলেন। তাঁর বাবা মৌলবী কাজী ফকীর আহমদ ছিলেন ইসলামী শিক্ষাদীক্ষায় উচ্চশিক্ষিত, সর্বজনের নিকট শ্রদ্ধেয় এবং সুফী পীর শাহ পাহলোয়ানেরদরগাহশরীফের সম্মানিত তত্ত্বাবধায়ক, মসজিদের প্রধান ইমাম এবং দরগাহশরীফ সংলগ্ন ইসলামী প্রাইমারী স্কুলের প্রধান পরিচালক ও শিক্ষক। বাবার ইন্তেকালের পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নজরুল দরগাহশরীফ, মাদ্রাসা ও মসজিদ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ওই সময় তিনি মসজিদে ইমামতি ও আজান দেবার কাজও করেন। তবে সেটি আর্থিক অনটনের জন্য নয়। তিনি আরো বলেন, সত্য যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম রুটির দোকানে কিছুদিন চাকরি করেছেন । তবে সেটা কোনো সাধারণ রুটির দোকান ছিল না। বিশাল একটা পাউরুটির দোকানে তিনি হিসাবরক্ষক হিসাবে কাজ করেছেন। সে যুগে পাউরুটির দোকান খুব সম্মানজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা চারটি প্রস্তাব করেন ১. নজরুলের সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা। ২. লন্ডনে বন্ধ হয়ে যাওয়া নজরুল সেন্টার খোলার উদ্যোগ নেয়া এবং এটি চালু করে নজরুলের শিল্প-সাহিত্য ছড়িয়ে দেয়ার কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া । ৩. পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে বছরে অন্তত একদিন নজরুল দিবস পালন করা এবং তাতে অন্যান্য ভাষার লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীদের সম্পৃক্ত করা। ৪. অপ্রকাশিত নজরুলের একহাজারের অধিক গান প্রকাশের অনুমতি দেয়া।
আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে শিল্পী নাহিদ নাজিয়া ও তপন খানের গান এবং খিলখিল কাজীর কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয় ।