প্রবাস মেলা ডেস্ক: কথা, আবৃত্তি ও সংগীতের মধ্য দিয়ে সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসারের প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলনের ৪১ বছর পূর্তি উৎসব উদ্যাপিত হয়েছে। ২ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের কণ্ঠশীলন মিলনায়তনে আয়োজিত হয় এই বর্ণাঢ্য আয়োজন। ১৯৮৪ সালের ১৫ এপ্রিল, বাংলা ২ বৈশাখ ১৩৯১ সালে কণ্ঠশীলনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রমিত উচ্চারণ, বাংলা বানান ও আবৃত্তি শিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত প্রায় আট হাজার তরুণ-তরুণীকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাথমিক পাঠ দিয়েছে। যারা অনেকেই আজ আবৃত্তি, শ্রুতিনাট্য ও মঞ্চনাটকের মাধ্যমে শিল্পচর্চায় নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছেন।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় রবীন্দ্রসংগীত ‘ওরে গৃহবাসি, খোল দ্বার খোল’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। সঞ্চালনায় ছিলেন নুরুজ্জামান নান্নু। কণ্ঠশীলনের নিয়মিত ও প্রাক্তন সদস্যদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা কণ্ঠশীলনকে শুভেচ্ছা জানান এবং একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বক্তারা বলেন, কণ্ঠশীলন শুধু উচ্চারণ, বানান ও আবৃত্তি শিক্ষা প্রদান করে না; বরং এটি এক মানবিক আন্দোলন। ভাষার শুদ্ধতা, সংস্কৃতির সৌন্দর্য ও সমাজ সচেতনতার মিলনস্থল এই প্রতিষ্ঠান। সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়তে কণ্ঠশীলন প্রথম সারির সংগঠন হিসেবে বিবেচিত।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন আইভি ভুঁইয়া, নাহিদা আক্তার লোপা ও রাখি ঘোষ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন রাজিয়া সুলতানা মুক্তা, মিনহাজুল বশির শোভন ও সিরাজুম মুনিরা যুঁথি। কণ্ঠশীলনের দীর্ঘ পথচলার সাক্ষী শিক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হক ও বাক্শিল্পাচার্য নরেন বিশ্বাসের সহযাত্রী মীর বরকত, গোলাম সারোয়ার, আহমাদুল হাসান ও রইস উল ইসলাম স্মৃতিচারণ করেন। তাঁরা বলেন, কণ্ঠশীলনের প্রতিটি কার্যক্রম ভাষার প্রতি মমতা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার পরিচায়ক।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ওয়াহিদুল হক বলতেন, “কথা মানুষকে কাছে টানে, কথা মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়। কথা মানুষকে বন্ধু করে, কথা মানুষকে শত্রু করে।” এই দর্শন থেকেই কণ্ঠশীলনের অভিযাত্রা। বাংলা ভাষায় শুদ্ধভাবে কথা বলার আন্দোলনে এই প্রতিষ্ঠান সব সময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই কণ্ঠশীলন নিয়মিতভাবে প্রমিত উচ্চারণ, বানান ও আবৃত্তি শিক্ষার আবর্তন চালিয়ে আসছে, যা আজ একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষে আয়োজকরা জানান, সকলের সহযোগিতা নিয়ে কণ্ঠশীলনের এই পথচলা আরও সুসংগঠিতভাবে এগিয়ে যাবে—এই প্রত্যাশাই তারা নিয়ে চলেছেন।