ডাঃ মাহফুজা বেগম স্নিগ্ধা, সালালাহ্, ওমান
আমরা প্রবাসী। জীবনযাপনের জন্য দেশ থেকে সহস্র মাইল দুরে মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে থাকি। সূর্য পরিক্রমায় পৃথিবীর সাথে সাথে আমাদের প্রবাসজীবনের ব্যাপ্তি বাড়ে, বাড়ে বুকের ভেতরের হাহাকার। ঈদ যায়, পার্বন যায়, নববর্ষ আসে, আমরা কিন্তু সবসময় আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবার জন্য দেশে যেতে পারিনা। আমাদের যখন ছুটি থাকে তখন যে সবসময় দেশে যাওয়াটা সম্ভব হয় তাও কিন্তু না।
প্রবাসজীবনে পহেলা বৈশাখ, ঈদ আনন্দ ব্যাপারগুলো যে নির্দিষ্ট দিনেই পালন করা হবে তা কিন্তু না। যখন সবাই অবসর জোগাড় করতে পারবে তখনই উৎসব উদযাপন করা হয়। আমরা ওমানের সালালাহ্ প্রবাসী ডাক্তার পরিবারবর্গ নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সকলে একত্রিত হয়েছিলাম ইত্তিন পাহাড়ের পাদদেশে সিরাজী রিসোর্টে ২৬ এপ্রিল ২০১৯ অর্থাৎ ১৩ বৈশাখ ১৪২৬।
দিনটি ছিলো শুক্রবার। তাই আমাদের আয়োজন শুরু করতে বেলা তিনটা বেজে গিয়েছিলো। প্রথমেই মধ্যাহ্নভোজন দেশীয় নানাবিধ ভর্তা সহকারে। এরপরের পর্বটা ছিলো শিশুদের অঙ্কন। অতি আবশ্যক চিত্রগ্রহণ-যা পরে এই মধুর দিনটির কথা মনে করিয়ে দিবে পরের অনেকগুলো বছর।
বাসায় তৈরী নানা ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশনা, পিলো পাসিং গেম, বল থ্রোয়িং গেম, ছেলেদের ক্রিকেট- আরো কত কি!
তবে মূল আকর্ষণ ছিলো লটারী। সন্ধ্যা থেকে দেশীয় গান, আবৃত্তি, নাচ, জোকস, কোরিওগ্রাফি নিয়ে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
সর্বশেষে রাতের খাবারের পর আবার আড্ডা। বাংলাদেশের মানুষ আড্ডাপ্রিয় বটে, তবে আমাদের আড্ডা শেষ হবার নয়। নতুন বছরকে বরণ করে নেবার জন্য ওমানের বিভিন্নস্থানের ডাক্তার পরিবারবর্গ আড্ডা আয়োজন করেছিলেন। প্রথমে বুরাইমি-সোহার-সাহাম অঞ্চলে এপ্রিল ১৯, ২০১৯ এ বেশ বড় একটা আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে সুর এবং সালালাহ্ তে একইদিনে অর্থাৎ এপ্রিল ২৬, ২০১৯ এ আড্ডার আয়োজন হয়।
নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালন করা, তার বীজ পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বুনে দেওয়া এবং দেশের সকল ঐতিহ্যে অংশগ্রহণ করাই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। সাদা শাড়ি-লাল পাড়ে কিংবা দেশীয় ঐতিহ্যবাহী সাজে নারী এবং পুরুষদের এই আয়োজনে প্রতিটি মুহূর্তে মনের গভীরে একটা আনন্দ সঙ্গীত বেজেছে।
‘আমরা বাঙ্গালি-বাংলা মোদের গর্ব,
ভালোবাসা দেবে উজাড় করে-
বাংলা মায়ের জন্য।’
কতশত কারণে মানুষ প্রবাসী হয়। কিন্তু দেশের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানগুলোতে কেমন শূণ্য শূণ্য লাগে তা শুধুমাত্র আমরাই বলতে পারবো। সেজন্য এমন আয়োজনগুলোতে আনন্দ আমাদের চোখে-মুখে খেলা করে। কেউ কেউ ২০০ কি.মি. বা তারও বেশি ড্রাইভ করে আসে শুধুমাত্র নিজেরা একটা দিন একত্রে কাটাবে বলে। আর মিলনমেলাগুলো গভীর রাত পর্যন্ত গড়ালেও কারো বাড়ি ফেরার তাড়া থাকেনা। চলে গেলেই তো শেষ হয়ে যাবে। আনন্দ কি এতো তাড়াতাড়ি শেষ হতে দেয়া যায়?
প্রবাসে বেড়ে ওঠা আমাদের বাচ্চারা যখন ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ কিংবা ‘তু লাল পাহাড়ের দেশে যা’ গান গেয়েছে; কিংবা সুন্দর গানগুলোর সাথে নৃত্য পরিবেশনা করেছে; কিংবা প্রাপ্তবয়স্কদের নাচ-গান পরিবেশন হচ্ছিলো কে বলবে আমরা দেশের বাইরে, কে বলবে আমরা প্রবাসী।