মহিউদ্দিন বাবু,, মাস্কাট, ওমান : চট্টগ্রাম সমিতি ওমানে’র উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাটের বিশাল খেলার মাঠ। প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যায়ে সবুজায়ান প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠটিকে খেলার উপযোগী করে দিয়েছি প্রবাসী এই সংগঠনটি। আর এর মধ্যে দিয়ে পূরণ হয় শিক্ষার্থীদের দীঘদিনের স্বপ্ন। তারা পেয়েছে সবুজ ঘাসে ভরা বিশাল একটি খেলার মাঠ।
ধূলো-বালির কারণে এতদিন মাঠটি ছিল খেলার পুরোপুরি অনুপোযোগী। শহরের আল গোবরায় অবস্থিত স্কুলটি বাংলাদেশসহ ১৭টি দেশের প্রায় দুই হাজার ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে। শিক্ষায় বেশ সুনাম আছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। বাংলাদেশ দূতাবাস আর বিত্তবান বাংলাদেশির অনুদানেই চলছে ১৯৯৬ সালে চালু হওয়া স্কুলটির কার্যক্রম। তাই প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে এই দীর্ঘ সময়ে বিশাল মাঠটির উন্নয়ন করা যায়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে যেমন বঞ্চিত ছিল তেমনি মাঠের ধুলো বালির কারণে স্বাস্থ্যগত নানা অসুবিধাও পোহাতে হত।
বাংলাদেশ দূতাবাস আর স্কুল কর্তৃপক্ষের আহবানে সাড়া দিয়ে মাঠ উন্নয়নে এগিয়ে আসে চট্টগ্রাম সমিতি ওমান। গত মার্চে শুরু হয় মাঠ সবুজায়নের কাজ। গতমাসে শেষ হয় ঘাস বসানোর পুরো কাজ।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম সমিতির একটি প্রতিনিধি দল স্কুল কর্তৃপক্ষসহ মাঠটি পরিদর্শন করেন। মাঠের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুপক্ষই। আলোচনা হয় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন নিয়ে। আলোচনায় সুন্দর এবটি মাঠ পাওয়ায় চট্টগ্রাম সমিতিকে কৃতজ্ঞতা জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুল পরিচালনা পর্যদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুর রহমান সিআইপি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের অনেকদিনের স্বপ্ন, প্রত্যাশা এবং দাবি ছিল একটা সবুজ খেলার মাঠ। কিন্তু অর্থাভাবে আমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হয়নি। আজ সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। একবারে বদলে গেছে পুরো স্কুলের পরিবেশ।’
অধ্যক্ষ মেজর (অব.) মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যখন দেখি আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা মাঠে খেলছে, সবুজে গড়াগড়ি করছে তখন মনটা ভরে উঠে। এমন সুন্দর সবুজ একটা মাঠ উপহার দেয়ার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের কাছে। আমরা মনে করি সমিতির এই উদ্যোগ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। প্রবাসী অন্যান্য বাংলাদেশী সংগঠনগুলো এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে স্কুলের উন্নয়নে এগিয়ে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
চট্টগ্রাম সমিতি ওমান’র সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, ওমানের বুকে বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাট আমাদের জন্য বড় গৌরবের বিষয়। প্রবাসী বাংলাদেশীদের শিক্ষার প্রসারে প্রতিষ্ঠানটি যে অবদান রাখছে তা সত্যিই অতুলনীয়। মাঠ উন্নয়নের মাধ্যমে এমন একটা প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমাদের সমিতি গর্ব বোধ করছে।
তিনি বলেন ‘মাঠটি দেখে মনটা ভরে গেল। অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। মনে হচ্ছে মরুর বুকে একখন্ড সবুজ বাংলাদেশ। পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা খেলাধূলার চর্চা করবে, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কি হতে পারে।’
সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ও নুরুল ইসলাম নুরু, সাধারণ সম্পাদক লায়ন প্রকৌশলী তাপস বিশ্বাস, যুগ্ম সম্পাদক জামাল উদ্দিন চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক পারভেজ মোহাম্মদ আমানুল্লাহ চৌধুরী বাবলু, অর্থ সম্পাদক নাছির মাহমুদ, সহ-সাংগঠিক সম্পাদক মহিউদ্দিন বাবু, সাহিত্য সম্পাদক কাজী রাশেদ, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক তৌহিদুল আলম এবং সদস্য মো. রিয়াদ ও স্থপতি মো. মিজানুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে চট্টগ্রাম সমিতি ওমান’র প্রবাসীদের কল্যান ও আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে আসছে। দুঃস্থ ও অসহায় প্রবাসীদের মরদেহ দেশে পাঠানো, হাসপাতালে চিকিৎসা থাকা অসুস্থদের ব্যয় বহন, জেলে থাকা প্রবাসীদের দেশে পাঠাতে বিমান টিকেটের ব্যবস্থা, মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে সমিতি। তাই প্রবাসী বাংলাদেশীদের আস্থার ঠিকানা হয়ে উঠেছে সংগঠনটি।