প্রবাস মেলা ডেস্ক: ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। ক্ষণজন্মা এই অভিনেতার ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটনের বাসা থেকে এ অভিনেতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। তবে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন বলে এটি মানতে পারেননি তার মা নীলা চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়। তার দাবি সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এর জন্য তার স্ত্রী সামিরা ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই জড়িত বলে জানান নীলা চৌধুরী।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআইয়ের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। তাকে খুন করা হয়নি। চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্কের কারণে স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ থেকেই আত্মহত্যা করেছেন এ নায়ক।
সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন―এ কথা মানতে নারাজ অভিনেতার মা নীলা চৌধুরী। মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে ফের ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেছেন তিনি। নীলা চৌধুরীর দাবি, তার ছেলে আত্মহত্যা করেনি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পাশাপাশাই বিভিন্নভাবে নীলা চৌধুরীকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি একটি চলচ্চিত্রে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল এমন দেখানো হয়েছে। যাতে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে এরশাদ এবং নীলা চৌধুরী মিলেই সালমান শাহকে হত্যা করেন। সম্প্রতি লন্ডন থেকে দেশের এক গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন সালমান শাহর মা।
নীলা চৌধুরী বলেন, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি। এ হত্যার বিচার প্রয়োজন। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। আগে একটা মাফিয়ার আন্ডারে ছিলাম। এখন আমরা মুক্ত। আমরা বলতে চাই, আমি কথা বলব। ছেলে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে নানান ভাবে অপমান করা হয়েছে আমাকে। এমনকি একটি চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে এরশাদ সাহেবের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল। এরশাদ সাহেবের সঙ্গে মিলে আমিই নাকি সালমান শাহকে খুন করেছি।
এরশাদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট করে নীলা চৌধুরী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আমলে অনেক বদনাম আমার নামে করা হয়েছিল। এরশাদ সাহেব জেল থেকে বের হওয়ার পরে আমার বাসায় আসেন। কিন্তু আমি শুরুতে উনাকে আমার বাসায় আসতে দেইনি। পরে উনি টেলিফোনে আমাকে বলেন তোমার ছেলে যদি দরজায় দাঁড়ায় থাকতো তাহলে কি ফিরিয়ে দিতে? আমি তো জেল থেকে সালমান শাহর মৃত্যুর খবর পেলাম। এরপর আমার স্বামী গিয়ে দরজা খুলে দিলো। এভাবে আমাদের বাসায় উনার আসা-যাওয়া শুরু হয়। এরশাদ সাহেব আমাকে তার মায়ের সঙ্গে তুলনা করতেন। আমার আচরণের সঙ্গে তিনি তার মায়ের মিল খুঁজে পান।
তিনি আরও বলেন, প্রায় সব জায়গাতেই সালমান শাহ ভক্ত আছে। ডিজিএফআই, এনএসআইতেও আছে। ডিজিএফআই থেকে আমাদের একটা সময় বলা হলো যদি এরশাদ সাহেব আপনাদের বাসায় যাতায়াত করে তাহলে এনএসআই এবং ডিজিএফআইয়ের আলাদা একটা নজর থাকতো আপনাদের উপরে। এতে করে আপনাদের জীবনের ঝুঁকি কমে যাবে। ঠিক এই কারণেই এরশাদ সাহেব প্রায় আমাদের বাসায় আসতেন। আমার সঙ্গে তার কোনো খারাপ সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু বিষয়টা ভিন্নভাবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। উনি অনেক ভালো একটা মানুষ ছিলেন, যিনি আমাকে সবসময় তার মায়ের সঙ্গেই তুলনা করতেন।