ক. ম. জামাল উদ্দীন, জেদ্দা, সৌদি আরব প্রতিনিধি: বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রহমাতুল্লিল আলামিন, শফিউল মুজনেবিন, হযরত নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র মসজিদে (মসজিদে নববী)। আসন্ন রমজানে ইফতারীর আসর স্থগিত রাখার ঘোষণা করেছে মসজিদে নববী কতৃপক্ষ।

দেশটির বহুল প্রচারিত আরবি দৈনিক, “ওকাজে” এ সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশ করে ১৫ এপ্রিল, ২০২০।সংবাদে মসজিদে নববী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এ করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে, তাই সতর্কতা মূলক আসন্ন রমজান মাসে ইফতারের আসর বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত গৃহীত হয়। সংবাদ টিতে আরও জানা যায়, কর্তৃপক্ষ আবেগের সাথে বিশ্ব মুসলিমদের উদ্দেশ্য বলেন, “হে আমার ভাইয়েরা! আমরা আজ মহামারী করোনার মহা দূর্যোগের শিকার। এই রমজান, রহমতের মাস, বরকতের মাস। কিন্তু আপনাদের দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আসন্ন রমজান মাসে (১৪৪১ হিজরীর) আপনারা ইফতারী সরবরাহ এবং আয়োজন থেকে বিরত থাকবেন। ইফতার করতে না আসার জন্য অনুরোধ রইল। সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এ সিদ্ধান্ত।

উল্লেখ্য যে, প্রতি বছর রমজানের সময় সৌদি আরবে সব চেয়ে বড় ইফতারীর আসর বসে মদিনা শরীফে । ১৭ লাখ স্কয়ার ফুটের এক বিশাল মসজিদ কমপ্লেক্স মসজিদে নববী। এই মসজিদে সাধারণ সময়ে একসঙ্গে ৬ লাখ লোক নামাজ আদায় করতে সক্ষম, হজ এবং ঈদের সময় যা কোটি ছাড়িয়ে যায়। রমজানের মাসব্যাপী এ ইফতারীর আসরে প্রতিদিন অংশ নেন ৩ থেকে ৫ লাখ নারী-পুরুষ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন এই ইফতারের আসরে। এ ছাড়াও পুরো সৌদি আরবে জুড়ে ইফতারীর আসর বসে। দেশটি বড় বড় কোম্পানি থেকে শুরু করে যার যার সামর্থ অনুযায়ী রোজাদারদের ইফতার করোনার জন্য সবাই আত্মনিয়োগ করে। রমজান মাসে সৌদি আরবের বিভিন্ন মসজিদে তাবু স্থাপন করে রোজাদারদের জন্য ইফতারীর ব্যবস্থা করা হয়। মসজিদ ছাড়া ও রোজাদার আনাগোনা হয় এমন সম্ভাব্য স্থানে সম্পূর্ণ আল্লাহর ওয়াস্তে ইফতারীর আয়োজন করা হয়। এ সময় মানুষের মাঝে খুশীর জোয়ার বয়ে যায়। রমজানের আগমনে সমগ্র মুসলিম জাহান নব উদ্যমে জেগে উঠে। বিচিত্র ধরনের আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যায় আসমান ও জমিনে। সৃষ্টি জগত ভরে উঠে রহমতের ফল্গুধারায় ।

এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জায়েদ ইবনে খালেদ আল জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে, রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না।’ –সুনানে তিরমিজি: ৮০৭ এ হাদীসের আলোকে পুরো সৌদি আরব জুড়ে বিশেষ করে মদিনা শরীফের বাসিন্দারা এক অভূতপূর্ব মেহমানদারিতে নিজেদের সপে দেয়, ইফতার আয়োজনে। অতীত দুঃখের বিষয়! এ বছর করোনা নামক এক অদৃশ্য মহাশক্তির কাছে পরাজিত হয়ে প্রাণবন্ত এ জান্নাতি আসর থেকে বঞ্চিত হবে মুসল্লীগণ ।