এবিএম সালেহ উদ্দীন, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র:
সন্ধ্যার পিছনের ওই চাঁদ
ফিরে আসে বারবার
নেমে আসে জোৎস্নরাতে,মধুপূর্ণিমায়। সেইসব দেখে
নিথর চোখে কেউ যেন
স্মৃতির পাথর সাজায়।
আঁধার তিমিরে পাগলা ঘুমকে দূরে ঠেলে দিয়ে
তাই তো এই বিমূঢ় জাগরণ…
উঠোনে মাটির চাদরে সাজানো সংসার
শূণ্যবুকে নৈশব্দের গুন্জরণে পূবাকাশে সূর্য ওঠে।
যখন কোন প্রশ্ন আসে-
মা বলেন
ওর বাবা ত চলে গেছে সেই কবে
মুক্তির কথা বলে।
সেই যে গেল…
আর ফিরে এলো না।
পঁচাত্তরের কোন এক রাতে খোকাও গ্যাছে বাবার খোঁজে…
দিন যায় রাত আসে
রাত্রির ভিতরে মিশে যায় রাত্রির অন্ধকার। আমি শুধু
স্বপ্নের আঁকরে দিনপঞ্জি গুনি
চোখের পাতা নড়ে না; দৃষ্টি সরে না
রেল লাইনের হুইসেলে…মাঝে মাঝে উঠে দাঁড়াই
মনের মাঝে প্রশ্ন জাগে; ওটা কি কৃষ্ণচূড়োর রাত ছিল?
ফুল-ফাগুনের একুশ ছিল?
নাকি দু:খিনী বাংলার বর্ণমালা!
শূণ্যতার নিকষ আঁধারে নেমে আসে বিষাদের ছায়া।
ক্লান্ত পথিকের মতো
পথহারা পাখির মতো
নিশ্চল চেয়ে থাকি নি:সীম শূণ্যতায়
হতবিহ্বল ভয়ার্তের মতো অনুক্ষণ কাঁপে বুক
নাফ নদীর ডুবে যাওয়া শিশুর মতো
সেই কবে, আমিও ডুবে গেছি নিস্তব্ধ আঁধারে।
এতদিন বুড়িগঙ্গার ঢেউ দেখিনি
যখন
ফরাশগঞ্জের সস্তাকাঠের কপিন ছিল না
উজান-ভাটায় ভেসেছিল কত লাশ
হৃদয় ধমনীতে যন্ত্রণার আগুন জ্বলে
জলাঙ্গে ভাসে স্মৃতির কোলাজ
রক্তের আখরে লেখা হয় শহীদ মিনার।
প্রিয় স্বপ্ন মিশে যায় নীল লোহিত সাগরে
যেমন
বাহিত হ্রদের ঘোলাজল মিশে যায় খাল-বিল, নদী-নালায় হাসানগঞ্জের গ্রামে
মেঘলা আকাশের নীচে
তেতুলিয়ায় ভাসে রক্তাক্ত ফেব্রুয়ারি!
একাত্তুরের কালো পঁচিশ
গহিন কোণ থেকে ইথার বার্তায় জ্বলে ওঠে ছাব্বিশে মার্চ
রক্তঝরা নয় মাস-ষোলই ডিসেম্বর।
পঁচাত্তুরের রক্তাক্ত স্মৃতি
রাজনীতির ধূম্রজালে স্বৈরচারের তক্তপোষ!
প্রশ্নের মরীচিকায় কেবলই নিয়ে যায় অতীতে
এখনও থামে না শকুনের হিংস্রতা
ওরা দেশশুদ্ধ গ্রাস করে সবকিছুই খেয়ে ফেলতে চায়! প্রতিটি মাস আসে
কিছু শোক ও যন্ত্রণার তরঙ্গে আমি ভাসি দু:খের সাগরে
তবু
একটি আশ্চর্য রাত দ্যুতিময় হয়ে, জ্বালিয়ে দেয় অগ্নিশিখা
আর সেই সাথে আমিও
তৃষ্ণার্ত পাখির মতো চেয়ে থাকি নীলাকাশ
নক্ষত্রে বুনোট রাত্রিতে চোখে ভাসে খোকার মুখ
এভাবেই
ফিরে আসে স্মৃতি, ফিরে আসে অতীত
শুধু
আসে না ফিরে সে
আসে না আমার খোকা।