প্রবাস মেলা ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় রিমালের অগ্রভাগ বাংলাদেশ উপকূলে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার দুপুরে অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজিজুর রহমান এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় বাগেরহাটের মংলা ও পটুয়াখালির খেপুপাড়া দিয়ে অতিক্রম করবে। ঘুর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ উপকূলে প্রবেশ করায় পটুয়াখালিতে বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার আর মংলায় ৫৭ কিলোমিটার।’
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও আছে দমকা হাওয়া। নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। উপকূলবাসীকে সতর্ক করতে ও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে জেলায় জেলায় চলছে মাইকিং।
রোববার সকাল থেকে বরগুনায় থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। তলিয়ে গেছে বড়ইতলা ফেরি ঘাটের গ্যাংওয়ে। জেলায় দুর্যোগ মোকাবিলা ৬৭৩ টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৩টি মুজিব কেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ৩ লাখ ২১ হাজার ২৪৪ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সাতক্ষীরায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাগেরহাটের নদীতীরবর্তি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৩৫৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দিয়েছে প্রশাসন।
নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়া বইছে। হাতিয়ার মেঘনা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে হাতিয়ায় সব ধরনের নৌ পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে।
রিমেল মোকাবিলায় নোয়াখালীর উপকূলীয় পাঁচ উপজেলায় ৪৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৮ হাজার ৩৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও ১০২টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিশখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে দুই থেকে আড়াই ফুট উচ্চতা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। রোববার সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে, থেমে থেমে পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সেইসঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বইছে।
একই অবস্থা বরিশাল, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন জেলায়। বরিশাল, চাঁদপুর থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। এছাড়া, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখাসহ মেডিকেল টিম গঠন, স্যালাইন, ওষুধ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় আট থেকে নয় হাজার নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণলায় সভা শেষে রোববার দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় সকাল পর্যন্ত উপকূলের ৫০ শতাংশ মানুষ এসব কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। দ্রুত অন্যদেরও কেন্দ্রগুলোয় অবস্থানের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সরকারি সকল দপ্তরের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। স্বশস্ত্র বাহিনীসহ অন্য বাহিনীগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দেশের ভেতরে নৌ চলাচল বন্ধ থাকবে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত। সরকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।’