শাহাদাত হোসেন, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া
মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ। প্রতিবছর খুশির বার্তা নিয়ে আসে ঈদ। পরিবারের স্বচ্ছতা ও নিজের ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘদিন স্বদেশের বাইরে ঈদ আসলেই তাদের কষ্ট যেন আরো বেড়ে যায় ।
এই ঈদকে নিয়ে প্রস্তুতির কমতি থাকেনা। যেমন ঈদুল ফিতর শেষ হতেই প্রবাসীরা প্রস্তুতি নেয় ঈদুল আযহার। মালয়েশিয়াতে দেখেছি ঈদুল আযহার আগেই প্রবাসীরা খোঁজে বাড়তি কাজ । কোরবানি ঈদ টাকাটা একটু বেশি দেওয়া লাগবে গতবারের চেয়ে এবার গরু একটু বড় কিনবে ছোট ভাই বোনদের আবদার তাই ছুটির দিনেও যেন ছুটি নেই তাদের।
প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফুটাতে পারলেও নিজেকে রাখে সব উৎসবের বাহিরে। মালয়েশিয়াতে ঈদের দিনেও কাজ করতে হয় অনেক প্রবাসীর ।মালয়েশিয়া অন্যতম একটি মুসলিম দেশ হলেও এখানে বেশিরভাগ মালিক চাইনিজ । স্থানীয় নাগরিকদের সাথে প্রবাসীদের ভ্রাতিত্ববোধ, সৌহার্দ্য প্রকাশ প্রায় শূণ্যের কোঠায়। মুসলিম হলেও তাঁরা প্রবাসীদের থেকে নিজেদের আলাদা ও শ্রেষ্ঠ ভাবতে পছন্দ করে। তাদের সাথে প্রবাসীদের সামাজিক সম্পর্ক ঈদের দিনগুলোতেও দেখা যায় না। বিশেষ করে ঈদুল আযহার, এখানে আলাদাভাবে গরুর হাট বসেনি আমাদের দেশের মতো, এভাবে কোরবানি দিতে দেখিনি, মালয়েশিয়ানরা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সরকারিভাবে প্রত্যেক মহল্লায় কোরবানি দিয়ে থাকে।
প্রবাসীরা অনেকটা একঘরে হয়ে থাকতে হয়। প্রবাসে বাঙালি প্রবাসীর ঈদ কাটে প্রায় আনন্দহীন । নামাজের পর প্রবাসীরা নিজেদের মধ্যে সামান্য মিষ্টি বা ঝাল কিছু তৈরী করে কেউ বা ঈদের সেমাইটা বাংলাদেশি রেষ্টুরেন্টে গিয়ে কিনে খায়, তারপর দেশে ফোন করে কথা বলেন প্রিয়জনের সাথে, কেউ বা নিভৃতে বসে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলেন, কেউ হয়তো ঢুকরে কেঁদে উঠেন, অনেকের কান্না সংক্রামিত হতে দেখা যায় পাশের রুমের প্রবাসীকেও।
কি ভীষন কষ্টের একটি দিন। কে বলবে আজ ঈদ! এই দিনে দেশে কাটানো ঈদগুলো তখন এক একটা স্বর্ণালী মুহূর্ত হয়ে চোখের সামনে ভাসে। এত কিছুর পরেও প্রিয়জনের মুখে হাসি ফুটাতে পারলেই খুশি প্রবাসীরা। প্রিয়জনদের মুখের একটু হাসিতে এই ভুলে যেতে পারে সকল কষ্ট।