আখি সীমা কাওসার, রোম, ইতালি প্রতিনিধি: ইতালি আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ এনে ইতালি আওয়ামী লীগের একাংশ সংবাদ সম্মেলন করেন রোমের একটি স্থানীয় রেস্টুরেন্টের হলরুমে। এই সংবাদ সম্মেলনে রোমের স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে, ইতালি আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগপত্র পড়ে শুনান সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম মাঝি।
ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে অসাংগঠনিক ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে আনা হয় এই সংবাদ সম্মেলনে।
এই সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান কমিটির একাধিক নেতাকর্মী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা দুর্নীতিগ্রস্ত এমন ইতালি আওয়ামী লীগ চাই না। আগের কমিটি দীর্ঘ ৯ বছর ছিলো। কিন্তু এরপরও সম্মেলন দিতে আগ্রহ দেখাননি তারা। অবশেষ তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ঠিক সেই পথেই বর্তমান মাহতাব-আলমগীর হাটঁছেন, যা আমরা চল্লিশ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে এমনটা দেখতে চাইনি।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে ইতালি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং স্লোগান দেয়। নেতাকর্মীদের মুখে একটি কথাই উচ্চারণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি সেটা হল- বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি আমরা ইতালি আওয়ামী লীগকে যেমন কোন ভাবে দেখতে চাই না, তেমন দুর্নীতিও বরদাস্ত করবো না। আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শের রাজনীতি করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি ইতালির মাটিতে, ইতালি আওয়ামী লীগকে দুর্নীতি মুক্ত করে আনবো এবং আমরা চাই ইতালিতে একটি সংগঠন থাকবে আওয়ামী লীগের। সংবাদ সম্মেলনে নেতাকর্মীদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইতালি আওয়ামী লীগের সহ-সভাপত নজরুল ইসলাম মাঝি।
তারা বলেন- মাহতাব এবং আলমগীর অনিয়মের আখড়া বানিয়েছেন। মাহাতাব এবং আলমগীরের ইতালিতে বৈধভাবে ইনকামের কোন সোর্স নেই। তারপরও আলমগীর কথায় কথায় বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করে, সেই টাকা কোথা থেকে আসে ? কর্মীদের বক্তব্যে এ কথাটিও উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ইতালি আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ ফকির, আফতাব বেপারী, মাইনুদ্দিন লিটন হাজারী, আলী আযম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ রব মিন্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান সিদ্দিকী, করিব হোসেন, আফছার বেপারী, আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক, জি আর মানিক, ইলয়াস মাদবার, এ আর আহাম্মেদ তপু, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক বায়েজীদ আলী, বন ও পারিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রাজিব রহমান, ইতালি আওয়ামী লীগ সদস্য ইলয়াস মোল্লা, নাসির উদ্দিন মানিক, মো: ইব্রাহিম, নাসিম হোসাইন, সালাউদ্দিন, মোজাম্মেল হক, আবু সাইদ, রিপন তপদার, আব্দুর রহমান, আব্দুল মজিদ বাবুল, আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব মাতুব্বর, মামুন রহমান, দিন মোহাম্মদ, সাবেক যুব নেতা বাদশা, জাবেদ রহমানসহ আরও অনেকে।
ইতালি আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে লিখিত সংবাদ সম্মেলনে নেতাকর্মীরা বলেন, ভয়াল ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে নিহত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। ২০২১ এর ২৮ নভেম্বর ইতালি আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অসাংগঠনিক ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন সংগ্রামের পরে একটি সফল ও শতঃস্ফূর্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্মেলন নিয়ে টালবাহানা করায় সম্মেলনের একদিন পূর্বে কার্যকরী পরিষদের সর্বাধিক সংখ্যা সদস্যদের উপস্থিতিতে সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ ফকিরকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শোয়েব দেওয়ানকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দিয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে উপস্থিত সবার সমর্থনের ভিত্তিতে মাহতাব হোসেনকে সভাপতি, আলমগীর হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক, সরদার লুৎফর রহমানকে সহ-সভাপতি ও এম এ রব মিন্টুকে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু ইতালি আওয়ামী লীগের দুর্ভাগ্য, সঠিক নেতা নির্বাচিত করতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। কিছু ছদ্মবেশী নীতি বিবর্জিত অসাংগঠনিক দুর্নীতি পরায়ণদের নেতা সর্বোচ্চ পদে নির্বাচিত হয়েছে, যা ইতালি আওয়ামী লীগের দুর্ভাগ্য বলা যেতে পারে।
ইতালি আওয়ামীলীগের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার প্রয়াসে, দলকে দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করতে, স্বচ্ছ ও সুসংগঠিত হয়ে ইতালিতে একটি শক্তিশালী আওয়ামীলীগ গঠন করার লক্ষ্যে এবং দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন, বলেন বক্তব্যরত নেতা কর্মীরা। তারা আরও অভিযোগ করেন, সম্মেলনের ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রায় আড়াই বছরেও তারা কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইতালি আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২৭ হাজার ইউরো (প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা) ফান্ড সংগ্রহ করেন। উল্লিখিত ফান্ডের টাকা কোথায় এবং কীভাবে ব্যয় হয়েছে ইতালি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার সঠিক তথ্য জানতে চায়।